পরিকাঠামোর অভাবে সমস্যা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে
কশো দিনের কাজের প্রকল্পে গতি আনতে হুগলি জেলা প্রশাসন উঠেপড়ে লাগলেও কিছু ক্ষেত্রে বাধা-বিপত্তি এবং পরিকাঠামোর অভাবে আরামবাগ মহকুমায় অধিকাংশ পঞ্চায়েত এলাকায় কাজ তেমন এগোচ্ছে না। এমন অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধানেরাই। ব্লক প্রশাসনের কর্তারাও সে কথা মেনে নিয়েছেন। মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী অবশ্য বলেন, “বাধা-বিপত্তি নতুন বছরে আর নেই। আর্থিক বছর অনুযায়ী এই প্রকল্পের আওতায় শ্রমিকদের আরও বেশি কাজ দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।”
এই মহকুমার ৬৩টি পঞ্চায়েতই বাম পরিচালিত। অধিকাংশ প্রধানের অভিযোগ ছিল, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে বেশির ভাগ সুপারভাইজারে ‘সিপিএমের দলতন্ত্রের’ অজুহাতে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সব জায়গায় তৃণমূলের যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অধিকাংশের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণই নেই। মাটি কাটার মাপ মতো মজুরি দেওয়ার বদলে দৈনিক মজুরির ব্যবস্থা করার দাবি আছে শ্রমিকদের। ২০১২ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে মজুরি অভিন্ন রেখে মাটি কাটার পরিমাণ অবশ্য অনেকটাই কমিয়েছে সরকার। তা সত্ত্বেও অশান্তির খবর আসছে কিছু এলাকা থেকে।
আরামবাগের মলয়পুর ২ পঞ্চায়েত এলাকার কথাই ধরা যাক। এখানে সুপারভাইজারেরা শ্রমিকদের অসন্তোষের জেরে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। হরিণখোলা ১ পঞ্চায়েতে গত ৩ জানুয়ারি থেকে কাজ বন্ধ। ওই পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক পবিত্র চট্টোপাধ্যায় শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ। তিনি ‘নিরাপত্তার অভাব’ বোধ করায় কাজে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। সমস্ত বিষয়টি প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়ে ‘বিহিত’ চেয়েছেন তিনি।
এ রকম অশান্তিতে জেরবার খানাকুলের ২টি ব্লক, গোঘাটের ২টি ব্লক, আরামবাগ ও পুড়শুড়ার অনেক পঞ্চায়েত। শ্রমিক অসন্তোষ ছাড়াও আছে রাজনৈতিক অশান্তি। হঠাৎ হঠাৎ বোমাবাজির জেরে কাজ বন্ধের উদাহরণ আছে গোঘাট ১ ব্লকের শ্যাওড়া পঞ্চায়েত, খানাকুল ১ ব্লকের ঠাকুরানিচক পঞ্চায়েত প্রভৃতি এলাকায়। এ ছাড়াও কোথায় কাজ আগে হবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্বে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেক এলাকায়। সর্বোপরি, সচেতনতা এবং প্রচারের অভাব এখনও কাটেনি বলে অভিযোগ।
প্রকল্পে গতি আনতে প্রচারের অভাবের কথা স্বীকার করেছেন হুগলির জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন। তিনি জানান, জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েতের প্রকল্পটি রূপায়ণে সমস্যা ছিল। সেই সব এলাকায় ক্যাম্প করা হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে সচেতনতার অভাবও ছিল। সে জন্য প্রচার চলছে।
প্রকল্পে গতি আনতে এবং অশান্তি এড়াতে হুগলি জেলায় ‘মহাত্মা গাঁধী জাতীয় কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন মাস’ উদযাপন শুরু হয়েছে গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে। চলবে জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। জেলাশাসক বলেন, “প্রচারের কাজ (শিবির করে, লিফলেট বিলি করে) ধারাবাহিক ভাবে চালানো হবে।” বুধবার জেলাশাসক আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন প্রচার-পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের অসুবিধার কথা জানতে চান। এ দিকে, মহকুমার ৬টি ব্লকের বিডিওদের বক্তব্য, পরিকাঠামোগত সমস্যা প্রকল্পের রূপায়ণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সব থেকে বড় সমস্যা, বেশ কিছু পঞ্চায়েত নির্মাণ সহায়ক পদটি খালি। ওই পদাধিকারিকেরই কাজের প্রকল্প তৈরির কথা। ব্যাঙ্কের গড়িমসিতে মজুরি পেতেও সমস্যায় পড়ছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি আরও একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। তা হল, আগে মাটি কাটার পরিমাণের ক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলার কাজের পার্থক্য ছিল। পয়লা জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়মে, পুরুষ ও মহিলা একই দলে কাজ করবেন। মাটি কাটার পরিমাণ উভয়ের ক্ষেত্রেই ৬৯ সিএফটি। এই পরিস্থিতিতে পুরনো স্কিমগুলি পরিমার্জন করতে হচ্ছে। সে কারণে অনেক ক্ষেত্রে নির্মাণ সহায়কের বদলে ঊর্ধ্বতন পদাধিকারিকের প্রয়োজন পড়ছে। কিন্তু সেখানেও কর্মী সংখ্যা কম। আরামবাগ মহকুমাশাসকের দফতরের সহকারী বাস্তুকার তরুণ বর্মণ বলেন, “আগে পঞ্চায়েত-পিছু ১০টি প্রকল্প আমার কাছে আসত। এখন ৪০টা করে আসছে। মহকুমার ৬৩টি পঞ্চায়েতের কাজের চাপ থাকছে। ফলে দেরি হচ্ছে।” মহকুমাশাসক বলেন, “একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মহিলাদের কম পক্ষে ৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্বের লক্ষেই সরকার মাটি কাটার পরিমাণ কমিয়ে পুরুষ ও মহিলাদের মিশ্র দল তৈরির কথা বলেছে। প্রাথমিক ভাবে কিছু অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই। তবে এই অসুবিধা কাটানোর চেষ্টাও চলছে।” পরিকাঠামোগত অভাবও মেটানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসকও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.