ঢাউস বিমান নিয়ে আকাশ থেকে অসহায় বিমানচালক বার্তা পাঠালেন কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে “ভয়ানক সমস্যায় পড়েছি। বিমানের কোনও শৌচালয় কাজ করছে না। ২৯২ জন যাত্রী কার্যত পেট চেপে বসে। আমাকে নামতে দেওয়া হোক।”
জরুরি অবতরণ মাঝেমধ্যেই ঘটে কলকাতায়। কখনও যাত্রীদের অসুস্থতা, তো কখনও যান্ত্রিক ত্রুটি বা তেলের অভাবে। তবে শৌচালয় কাজ না করায় নেমে আসার ঘটনা শোনা যায় না। অবাক হন বিমানবন্দরের অফিসারেরাও। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে শহরে নামে বিমানটি।
বোয়িং ৭৬৭ বিমানটি ডেনমার্কের বিলান্ড শহর থেকে যাচ্ছিল তাইল্যান্ডের ফুকেটে। একটি পর্যটন সংস্থা বিমানটি ভাড়া করেছিল। মাঝ আকাশে অকেজো হয়ে পড়ে সব শৌচালয়। যাত্রীরা জানান, কমোডের জল নামছিল না। সঙ্গে ছিল দুর্গন্ধ। |
বৃহস্পতিবার শহরে এক হোটেলে বসে ওই বিমানের যাত্রী ক্রিস তারহুস বলেন, “শুনলাম, পাম্প কাজ করছিল না। বিমান ছাড়ার পর থেকে যাত্রীরা ঘন ঘন শৌচালয় ব্যবহার করেছেন। প্রথম পাঁচ ঘণ্টা সমস্যা হয়নি। তার পরেই এক এক করে বন্ধ হতে থাকে শৌচালয়ের দরজা।” শৌচালয়ের কমোড থেকে একটি চেম্বারে নোংরা জল জমা হয়। সেখান থেকে পাম্প করে অন্য বড় চেম্বারে তা পাঠানো হয়। সেই পাম্প বিকল হয়ে গিয়েছিল।
আর এক যাত্রী ক্রিস্টিন ক্রিস্টেনসন বলেন, “বিমান ছাড়ার পরে মজাই হচ্ছিল। পর্যাপ্ত বিয়ার ও খাবার ছিল।” যাত্রা শুরুর পাঁচ-ছ’ঘণ্টা পরে বিমানচালক জানান, শৌচালয়ের দুর্দশার জন্য বিমান নামাতে হবে। ফুকেট তখনও ছ’ঘণ্টা বাকি। বিমান তখন আফগানিস্তানের আকাশে। ক্রিস্টিনের কথায়, “অনেক শিশু ছিল। বয়স্করাও ছিলেন। শৌচাগারে যেতে না দিলে সমস্যা হত। এক মহিলা তো অসুস্থ হয়ে পড়েন।” বিমানবন্দর সূত্রে খবর, ৭৯ বছরের লিলিয়ান নেলসনের অবশ্য শ্বাসক্রিয়ার সমস্যা হয়। তাঁকে বিমানবন্দরে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আফগানিস্তান থেকে আসার পথে আরও দু’টি জায়গায় বিমানটি নামানোর চেষ্টা হয়েছিল। নানা সমস্যার কারণে সেটি আনতে হয় কলকাতা পর্যন্ত। শৌচাগারের সমস্যা মেটাতে সময় লেগেছিল মাত্র ২০ মিনিট। কিন্তু, প্রথম সমস্যা দেখা দেয় লিলিয়ানকে নিয়ে। ক্রিস বলেন, “বিমানেই অপেক্ষা করছিলাম। চার ঘণ্টা পরে আমাদের নামানো হয়। শুনলাম, বিমানচালকের ডিউটি সময়ের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায়, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে তাঁকে এক দিন বিশ্রাম নিতে হবে।”
বিমানবন্দর সূত্রে অবশ্য খবর, নিয়ম মতো বিমানটির ‘ল্যান্ডিং চার্জ’ লক্ষাধিক টাকা। এ ছাড়াও কলকাতায় নেমে তেল ভরেছে বিমানটি। তখনই অত টাকা মেটাতে পারেননি চালক। বেগতিক দেখে যাত্রীদের হোটেলে রাখতে হয়। ঠিক হয়, শুক্রবার সকালে বিমানটি ফের উড়বে। তার আগে বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লি থেকে সংস্থার এক প্রতিনিধি এসে বকেয়া মেটান। |