বাঙ্গুরে একটি দোতলা বাড়িতে দরজা ভেঙে ঢুকে সারা বাড়ি তছনছ করে টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ নথি-সহ যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বাড়িটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর। খোয়া গিয়েছে তাঁর বিভিন্ন পুরস্কারের পদক, স্মারক এবং কিছু মূল্যবান নথি ও চিঠিপত্র। ঘটনার সময় বাড়ি তালাবন্ধ ছিল। নীরেনবাবু-সহ পরিবারের কেউই বাড়িতে ছিলেন না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূ প্রথম দেখেন যে বাড়ি লন্ডভন্ড করে চুরি হয়েছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে নীরেনবাবুর বাড়ি তালাবন্ধ ছিল। নীরেনবাবুর স্ত্রী অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। নীরেনবাবু তাই কসবায় তাঁর ছোট মেয়ের বাড়িতে। নীরেনবাবুর পুত্র কৃষ্ণরূপ চক্রবর্তী এবং পুত্রবধূ কাকলি চক্রবর্তী ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার তাঁরা শহরে ফিরে অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছিলেন। তবে সে দিন সন্ধ্যায় কাকলিদেবী এসে এক বার বাড়ি দেখেও যান। তাঁর কথায়, “মঙ্গলবার দিন আমি এই বাড়িতেও এসেছিলাম। কিন্তু সমস্ত জিনিসপত্রই ঠিকঠাক ছিল। আজকে এসে দেখছি বাড়ির প্রায় সর্বস্ব চুরি হয়ে গিয়েছে।” তাঁর কথায়, চুরিটা হয়েছে এই সময়ের মধ্যে। চুরির খবর পেয়ে প্রথমেই নীরেনবাবুর বড় জামাই রাজ্য
সরকারের পদস্থ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙ্গুরে এসে পৌঁছন। পরে ছোট জামাই অর্থনীতির শিক্ষক অভিরূপ সরকার নীরেনবাবুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। |
চুরি হওয়ার পরে লন্ডভন্ড ঘরে তদন্তে পুলিশ। ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
বৃহস্পতিবার রাতে এসে কী দেখেন কৃষ্ণরূপবাবুরা?
রাত আটটা নাগাদ কৃষ্ণরূপবাবু এবং কাকলিদেবী বাড়িতে এসে দেখেন যে, একতলায় সদর দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এর পর, তাঁরা বাড়ির পিছন দিক দিয়ে রান্নাঘরের দিকে যান। রান্নাঘরের দরজার খিল ভাঙা ছিল। সেখান দিয়ে তাঁরা বাড়িতে ঢুকে দেখেন, একতলা এবং দোতলা মিলিয়ে মোট ছ’টি আলমারির তালা ভেঙে তছনছ করা হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, আলমারিতে রাখা নগদ দশ হাজার টাকা, একটি সোনার হার, দামি কয়েকটি কলম এবং দুষ্প্রাপ্য চিঠি পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকী, নীরেনবাবু যে সব পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন, তার একটিও পাওয়া
যাচ্ছে না।
তদন্তকারীদের অনুমান, বাড়িটি যে দীর্ঘদিন ধরে খালি ছিল, তা চোরেরা নজর রাখছিল। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে এলাকায় চুরি এত বেড়ে গিয়েছে, সেখানে নীরেনবাবুরা এত দিন বাড়ি ফাঁকা রাখলেন কেন? নীরেনবাবু বলেন, “আগেও বাড়ি মাসখানেক বন্ধ থেকেছে। কিন্তু এ রকম কোনও দিন হয়নি। গয়না টাকা তো গেছেই। কিন্তু যে সব পদক পেয়েছি, তা-ও খুঁজে পাচ্ছি না।” |