বয়স ও স্বাস্থ্যের কারণে কলকাতা জেলা সিপিএমের সম্পাদক পদ থেকে ‘অব্যাহতি’ চেয়েছিলেন রঘুনাথ কুশারী। কিন্তু নতুন সম্পাদক নিয়ে ঐকমত্য গড়ে না ওঠায় শেষ পর্যন্ত তাঁকেই আবার সম্পাদক পদে রেখে দিল সিপিএম। এর আগে দার্জিলিং, মালদহ, নদিয়া, উত্তর দিনাজপুর জেলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। শুধু পুরুলিয়ার ক্ষেত্রে জেলা সম্পাদক নকুল মাহাতোর ‘আর্জি’ মেনে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছে দল।
বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষ দিন জেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিস্তর টানাপোড়েনের পরে ২০ জনকে বাদ দেওয়া হয়। ১১ জন নতুন মুখ আনা হয়েছে। তার মধ্যে সুদীপ সেনগুপ্ত, কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়, সুমিতা হর চৌধুরীর মতো ছাত্র-যুব নেতারা রয়েছেন। বাদ পড়া নেতাদের মধ্যে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রবীণ সদস্য কেষ্ট মিত্র, অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন রয়েছেন, তেমনই টালিগঞ্জের গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন নেতা প্রদীপ বিশ্বাস প্রমুখ রয়েছেন। গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে দলে অভিযোগ উঠেছিল। হারিত ভট্টাচার্য, মলয় চট্টোপাধ্যায়দের মতো প্রবীণ নেতারাও বাদ পড়েছেন। সব মিলিয়ে ৬৮ জনের জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরে আরও দু’জনকে নেওয়া হবে। ‘বিবাদ’ এড়াতে বাদল গুহ, নির্মল মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণ নেতাদের জেলা কমিটিতে ‘সম্মানিত সদস্য’ করা হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মানিত সদস্যদের অবশ্য কমিটিতে তেমন কোনও ‘ভূমিকা’ নেই।
জেলা কমিটি থেকে কাকে বাদ দেওয়া হবে, কাকে নেওয়া হবে, তা নিয়ে এ দিন প্রথম থেকেই টানাপোড়েন ছিল। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু নির্দেশ দেন, কোনও ভাবেই ভোটাভুটি করা যাবে না। তাতে সাধারণ মানুষের কাছে ‘ভুল বার্তা’ যাবে। এই পরিস্থিতিতে এ দিন সন্ধ্যায় সম্মেলনে ‘বিশ্রাম’ ঘোষণা করে আলিমুদ্দিনের নেতারা বৈঠকে বসেন কলকাতা জেলা নেতাদের সঙ্গে। বৈঠকে বিমানবাবু ছাড়াও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মহম্মদ সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদক পদে দিলীপ সেন, নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায়ের নাম নিয়েও আলোচনা হয়। কিন্তু ‘বিতর্ক’ এড়াতে শেষ পর্যন্ত রঘুনাথবাবুকেই আরও এক বার জেলা সম্পাদক রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
সম্মেলন শেষে রবীনবাবু বলেন, “দলের রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছিল ৭০ জনের কমিটি গঠন করতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই অনেককে বাদ দিতে হয়েছে। সব গণসংগঠন ও জোন থেকে নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে।” কিন্তু বয়সের কারণে তিনি নিজে না থাকতে চাইলেও আবার রঘুনাথবাবুকেই কেন সম্পাদক করা হল? নতুন নেতা পাওয়া গেল না? জবাবে রবীনবাবু বলেন, “রঘুনাথবাবু ছেড়ে দিতে চান, এমন খবর মিডিয়ার কাছে থাকতে পারে। আমরা জানি না।”
গত দু’দিন ধরে কলকাতা জেলা নেতৃত্ব নানা ভাবে সমালোচিত হয়েছেন। এদিন তাঁর জবাবি ভাষণে রঘুনাথবাবু বলেন, দলে লোকাল ও জোনাল কমিটিতে বহু সদস্য রয়েছেন, যাঁরা মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন না। বহু জোনাল কমিটিই কোনও কর্মসূচি নেয় না। মানুষ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পার্টিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে জোনাল কমিটিগুলিকে সক্রিয় হতে হবে। তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে বিবাদ বাড়ছে উল্লেখ করে বিমানবাবু বলেন, এই পরিস্থিতিতে দলের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গণতন্ত্রের উপর আঘাত হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্র ও শিক্ষকরা আক্রান্ত। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে।
|