অবাক হবেন না। আজ বড়দিন!
হ্যাঁ, ঠিক তাই। প্রায় সমস্ত আর্মেনিয়ান মনে করেন এবং মেনে চলেন, যিশুখ্রিস্টের জন্ম ৬ জানুয়ারি। তাই, সারা বিশ্ব জুড়ে আর্মেনিয়ান অ্যাপোস্টলিক অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা আজ বড়দিন পালন করছেন। কলকাতার আর্মেনিয়ানরাও আজ মহানগরের প্রাচীনতম গির্জা, আর্মেনিয়ান স্ট্রিটের আর্মেনিয়ান হোলি চার্চ অফ নাজারেথে প্রার্থনা করবেন। প্রায় ৩০০ বছর আগে কলকাতায় আর্মেনিয়ানরা এই গির্জাটি তৈরি করেন। এটি মহানগরের প্রাচীনতম গির্জা বলে মনে করেন শহরের সব ধরনের খ্রিস্টানই।
বর্তমানে কলকাতায় বাস করেন প্রায় দু’শো আর্মেনিয়ান। ওঁরা সকলে প্রতি বছরের মতো আজও চার্চ অফ নাজারেথে প্রার্থনায় যোগ দেবেন। আর্মেনিয়ান স্ট্রিট ছাড়া পার্ক সার্কাস ও ট্যাংরাতেও আর্মেনিয়ান চার্চ রয়েছে। কিন্তু এ দিন সব আর্মেনিয়ানই আসেন চার্চ অফ নাজারেথে। কলকাতার বাইরে চুঁচুড়া ও সাইদাবাদে আরও দু’টি আর্মেনিয়ান চার্চ রয়েছে। কলকাতায় শুধু এই গির্জাতেই আজ প্রার্থনা হবে। চার্চ অফ নাজারেথে সকাল ন’টায় শুরু হবে প্রার্থনা। তার পরে দিনভর আর্মেনিয়ানরা আনন্দ করবেন বলে জানান কলকাতায় আর্মেনিয়ান ক্লাবের সভাপতি পিটার হিরাপিয়েত। কেউ যাবেন পার্ক স্ট্রিটে, কেউ ময়দানের আর্মেনিয়ান ক্লাবে। সারা দিনই পার্ক স্ট্রিটের কুইন্স ম্যানসনের আর্মেনিয়ান ক্লাবে প্রায় সব আর্মেনিয়ান যাবেন বলে জানালেন পিটার।
|
এ দিন তাঁদের উৎসব হলেও ২৫ ডিসেম্বর থেকেই কলকাতার আর্মেনিয়ানরা উৎসবের মেজাজে সময় কাটান। এ দিনের উৎসবে জড়ো হবেন আর্মেনিয়া থেকে কলকাতায় পড়তে আসা জনা-পঞ্চাশেক পড়ুয়াও। সুদূর আর্মেনিয়া থেকে শহরে পড়তে এসেছেন দাভিত গেভরগিয়ান। গর্বের সঙ্গে জানালেন, আর্মেনিয়া হচ্ছে প্রথম খ্রিস্টান রাষ্ট্র। বিশ্বের অন্যান্য দেশে খ্রিস্টান থাকলেও ৩০১ খ্রিস্টাব্দে আর্মেনিয়ায় খ্রিস্ট ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কলকাতায় যেমন প্রাচীনতম গির্জাটি আর্মেনিয়ানদের, তেমনই তাঁদের দাবি, বিশ্বের প্রাচীনতম গির্জাটিও তাঁরাই আর্মেনিয়ায় স্থাপন করেছেন। একটা প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যায় ৬ জানুয়ারি যিশুর জন্ম নিয়ে। যদি সত্যি ৬ জানুয়ারি যিশুর জন্মদিন হবে, তা হলে বিশ্বের প্রায় ৯৯ শতাংশ খ্রিস্টান ২৫ ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে মানেন কেন? কলকাতায় সব আর্মেনিয়ান গির্জার প্রধান পুরোহিত পাদ্রি প্যাস্টর ফাদার খোরেন হোভানগসিয়ান বললেন, “চতুর্থ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সব খ্রিস্টানরাই ৬ জানুয়ারি যিশুর জন্মদিন পালন করতেন। ২৫ ডিসেম্বর সূর্যদেবের জন্মদিন হিসেবে তাঁর উপাসনা হত। চতুর্থ শতকের পর থেকে প্রথমে রোমান ক্যাথলিকেরা ২৫ ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু আর্মেনিয়ান অ্যাপোস্টলিক চার্চ যিশুর জন্মদিন হিসেবে ৬ জানুয়ারিকেই মেনে আসছে।”
রোমান ক্যাথলিক চার্চের ব্যাখ্যা অবশ্য অন্য। ব্রেবোর্ন রোডে কলকাতার প্রথম প্রতিষ্ঠিত রোমান ক্যাথলিক চার্চের ফাদার পিটার অরুল রাজ বলেন, “সূর্যের উপাসনা করেন ইহুদিরা। ২৫ ডিসেম্বর ওঁরা সূর্যের জন্মদিন পালন করতেন। যখন অধিকাংশ ইহুদি রোমান ক্যাথলিক হন, তখন থেকে ২৫ ডিসেম্বরই যিশুর জন্মদিন হিসেবে মানা শুরু হয়।” |