ধান কেনার ব্যাপারে নানা ভাবে হয়রান করছেন চালকল কর্তৃপক্ষ। এমন অভিযোগে কালনার মধুবন ও লিচুতলা এলাকার দু’টি চালকলে তৃণমূলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখালেন চাষিরা। চালকল মালিক ও তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে বৈঠকের পরে কিছু ব্যাপারে আশ্বাস মেলায় বিক্ষোভ থামে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ লিচুতলা এলাকার চালকলে জমায়েত হন চাষিরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, চাল কেনা নিয়ে খেয়ালখুশি মতো আচরণ করছেন মিল কর্তৃপক্ষ। একে তো প্রয়োজনের তুলনায় কম ধান কেনা হচ্ছে, তার উপরে নিম্নমানের দাবি করে বস্তা পিছু নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ধান। তার পরিমাণ ২ থেকে ৬ কিলোগ্রাম পর্যন্ত। ধানের প্রজাতি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। অভিযোগ, চাষিরা যে প্রজাতির ধান বিক্রি করছেন, তা অস্বীকার করে অন্য নাম বলে কম দাম দেওয়া হচ্ছে। সুলতানপুর, বাঘনাপাড়া, হাটকালনা, কৃষ্ণদেবপুর পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা জানান, ধান কাটার পরেই আলু চাষ শুরু হয়। আলুর বীজ, রাসায়নিক সার, সেচ-সহ খরচের একটা বড় অংশ আসে ধান বিক্রি করে। এলাকার চালকলগুলি শ্লথ গতিতে ধান কেনায় সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। |
চাষিরা জানান, সরকারি সহায়ক মূল্যে বিক্রি হবে, এমন আশা করে অনেক চাষিই গোলায় ধান জমিয়ে রেখেছিলেন। এখন সে সব ফড়েদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অভিযোগ, অনেক সময়ে চালকল কর্তৃপক্ষ সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছেন, ধান কেনা হবে না। কোনও কোনও চালকল কিনলেও সমস্ত ধান এক সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে না। তাতে বিপাকে পড়ছেন চাষিরা। এ দিন লিচুতলার চালকলে দান বিক্রি করতে আসা চাষি বীরু বাগ বলেন, “সরকারি ভাবে ধান বিক্রি করায় বিড়ম্বনার শেষ নেই। ১৩ দিন ঘোরার পরে এখানে ২০ বস্তা ধান নিয়ে এসেছি। তার মধ্যেও কিছু ধান বিক্রি হয়নি। কবে হবে জানি না।” আর এক চাষি প্রণব ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “২০ বস্তা পরিষ্কার ধান এনেছিলাম। মিল কর্তৃপক্ষ প্রথমেই মান খারাপ দাবি করে বস্তা পিছু দু’কেজি করে ধান বেশি নিয়েছে। সেই হিসেবেই চেক দিয়েছে।” উপলতি গ্রামের চাষি কল্যাণ ভট্টাচার্য বলেন, “আমি লালস্বর্ণ ধান চাষ করেছি। সে ধান নিয়ে আসতে মিল কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, এই ধান নিম্নমানের নীলাঞ্জনা প্রজাতির। এই অজুহাতে টাকাও কম দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন কালনা শহরের মধুবনে আর একটি চালকলেও তৃণমূলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। এই দু’টি চালকলেরই মালিক শম্ভুনাথ অগ্রবাল নামে এক ব্যবসায়ী। বেলা ১২টা নাগাদ তিনি লিচুতলার চালকলে পৌঁছলে বিক্ষোভ বাড়ে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও চাষিরা আলোচনার জন্য চালকলে ঢোকেন। তৃণমূলের কিষান কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রাজকুমার পাণ্ডে চাষিদের অভিযোগ শম্ভুনাথবাবুকে জানান। শম্ভুনাথবাবু বলেন, “খারাপ ধানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ধান নেওয়া হচ্ছে। অনেক চাষিই দূরদূরান্ত থেকে গাড়ি ভাড়া করে ধান আনায় প্রচুর ধুলো মিশছে। ধান ফেরত দিতে চাইলে চাষিরাই কেনার জন্য অনুরোধ করছেন। বাধ্য হয়ে খারাপ মানের জন্য বস্তা পিছু কিছু অতিরিক্ত ধান নিয়ে কিনে নিতে হচ্ছে।” প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও টাকা না থাকার জন্যই বেশি ধান কেনা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে চালকল কর্তৃপক্ষের আলোচনার পরে ঠিক হয়, শম্ভুনাথবাবুর দু’টি মিলে কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর-সহ চারটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে দৈনিক ৬৫ জনের কাছে ২০ বস্তা করে ধান কেনা হবে। রাজকুমারবাবু বলেন, “ধান কেনার গতি বাড়াতেই এই আন্দোলন। এলাকার অন্য চালকলগুলির উপরে আমরা নজর রাখছি।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা ইনসান শেখ বলেন, “চালকলে গিয়ে ধান বিক্রি করতে চাষিরা সমস্যায় পড়ছেন। পঞ্চায়েত এলাকায় ক্যাম্প তৈরি করে গ্রামের মানুষের থেকে ধান কেনা উচিত সরকারের। এ দিন বিক্ষোভ চলাকালীন ঘটনাস্থলে যান মহকুমা খাদ্য দফতরের প্রতিনিধি শ্যামলকুমার দত্ত। তিনি বলেন, “চাষিদের অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।” |