খুন-সহ একাধিক দুষ্কর্মে অভিযুক্ত কেতুগ্রামের তৃণমূল নেতা সাউদ মিয়াঁ ওরফে সুফি সাইদুল মান্নানকে অবশেষে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় বামুনডিহি গ্রামের বাড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আজ, শুক্রবার পুলিশের তাঁকে বর্ধমানের কাটোয়া আদালতে হাজির করানোর কথা।
তিনটি খুন-সহ মোট আটটি মামলায় অভিযুক্ত সাউদকে ধরা যাচ্ছে না বলে অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছিল পুলিশ। কিন্তু গত ২০ নভেম্বর কেতুগ্রামের কান্দরায় এক জনসভায় রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও তৃণমূলের স্থানীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে মঞ্চে দেখা যায় সাউদকে। সভাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাঁকে ধরেনি। পরের দিন আনন্দবাজার পত্রিকায় সে খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা নড়েচড়ে বসেন।
প্রাথমিক ভাবে তৃণমূল নেতারা সাউদকে আড়াল করারই চেষ্টা চালিয়েছিলেন। পরের দিন মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন চন্দ্রনাথবাবু। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রতবাবু এবং কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা বলে আসেন, সাউদ ‘ভাল কাজ’ করছে। তাঁকে ‘মিথ্যা অভিযোগে’ ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিধায়ক জানিয়ে দেন, সাউদকে আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ তাঁরা দিচ্ছেন না, বরং আপাতত তাঁর লুকিয়ে থাকাই উচিত। |
বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সাউদকে খোঁজা হচ্ছিল। এ দিন দুপুরে বাড়ির কাছে দেখতে পেয়ে তাড়া করে তাকে ধরা হয়েছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, বামুনডিহি গ্রামে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার শিবিরে সাউদ হাজির রয়েছে বলে খবর ছিল। প্রথমে দু’টি মোটর বাইকে সাদা পোশাকের পুুলিশকর্মীরা এলাকায় যান। স্থানীয় কোমরপুর হাটতলার কাছে দু’টি গাড়িতে আরও সাদা পোশাকের পুলিশকর্মী অপেক্ষায় ছিলেন। সাউদ তখন দুপুরের খাওয়া সেরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। বাইকে এগিয়ে যাওয়া কর্মীদের কাছে সেই খবর পেয়ে দু’টি গাড়ি বামুনডিহিতে হানা দেয়। শেষ মুহূর্তে বিপদ বুঝে সাউদ ছুটে পালানোর চেষ্টা করেও ধরা পড়েন।
কেতুগ্রাম থানায় সাউদকে আনার পরেই তৃণমূল কর্মীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেছিলেন। বামুনডিহি থেকে বাসভাড়া করে আরও লোকজন আসছে শুনে পুলিশ তাঁকে কাটোয়া থানায় সরিয়ে নেয়। মুখ্যমন্ত্রী কাজে অখুশি হওয়ায় ক’দিন আগেই যাঁকে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই চন্দ্রনাথবাবু অবশ্য দাবি করেন, “আমার কাছে কোনও খবর নেই। যা বলার দলের নেতারা বলবেন।” অনুব্রতবাবু বলেন, “এ নিয়ে কোনও কথা বলব না।” এক মাত্র কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ কিন্তু এখনও আগের অবস্থানেই অনড়। তিনি বলেন, “মিথ্যা এবং পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই সাউদকে ফাঁসিয়েছিল পুলিশ। আমরা আইনের পথে লড়াই করব।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক এ দিন বলেন, “তৃণমূলের অসংখ্য দুষ্কৃতীর মধ্যে এক জন ধরা পড়ল। বাকিদের কবে ধরা হয়, সেটাই এখন দেখার।” |