ব্রিটিশ আমলের এক লেনের সেতুর বদলে ষাটের দশকে তৈরি করা হয়েছিল দু’লেনের সেতু। কিন্তু কালের গ্রাসে ও উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে সেই সেতুও বেহাল হয়ে পড়েছে। একের পর এক শিল্প স্থাপনের পরে সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী ভারী যানবাহনের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে। দুর্গাপুর স্টেশন রোডে হাওড়া-দিল্লি রেল লাইনের উপরে ‘গ্যামন ব্রিজ’ আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এ ব্যাপারে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) সূত্রে জানা গিয়েছে, ওখানে নতুন সেতু গড়ার পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকে। সম্প্রতি সেই প্রকল্পের ছাড়পত্র মিলেছে।
ব্রিটিশ আমলে রেল লাইনের দুই পাড়ের মধ্যে সংযোগকারী, স্টেশনে যাওয়ার বিকল্প রাস্তা হিসেবে একটি এক লেনের সরু সেতু গড়া হয়েছিল। ছোট গাড়ি, মোটরবাইক, স্কুটার, সাইকেল, রিকশা যাতায়াত করতে পারত। কিন্তু সেই সেতু দিয়ে বড় গাড়ি যাতায়াত সম্ভব ছিল না। স্বাধীনতার পরে চওড়া নতুন সেতু গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ‘গ্যামন’ সংস্থা সেতু নির্মাণের দায়িত্বে ছিল। তা থেকেই সেতুটি ‘গ্যামন ব্রিজ’ নামে পরিচিত হয়ে যায়। নতুন সেতু গড়ে ওঠায় দক্ষিণবঙ্গের একাংশের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগও সহজ হয়ে যায়। |
কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সেতুর উপরে চাপ বাড়তে থাকে। পরের দিকে দামোদরের দুই পাড় দুর্গাপুর ও বড়জোড়ায় নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের ফলে সেতু দিয়ে ভারি ট্রাকের চলাচলও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাছাড়া বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় আগের থেকে ওই সেতুর উপরে চাপ বেড়ে যায় বহু গুণ।
গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর রেলিং ভেঙে গিয়েছে। কংক্রিট উঠে গিয়ে সেতুর এক দিকে থাকা ফুটপাথটিও বেহাল হয়ে পড়েছে।এই অবস্থায় পথচারীরা বিপদের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন। সেতুর নীচের কংক্রিটের কাঠামোতেও ক্ষয় ধরেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অবিলম্বে সেতু সংস্কার করা না হলে যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে। বড়জোড়ার একটি কারখানার কর্মী, দুর্গাপুরের বেনাচিতির বাসিন্দা শ্যামল সাউ, বিধান সাউরা বলেন, “প্রতিদিন দু’বার করে প্রাণ হাতে নিয়ে ওই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।” |
বাসিন্দাদের দাবি, সেতুর কোনও অংশ ভেঙে পড়লে ক্ষয়ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হবেই। পাশাপাশি হাওড়া-দিল্লি রেললাইনও স্তব্ধ হয়ে যাবে। এমনকী দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম রাস্তাটিও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।এ ব্যাপারে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)-র সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গিয়েছে, পুরনো সেতু সংস্কার নয়, ওখানে নতুন সেতু তৈরির পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকে। সম্প্রতি ছাড়পত্রও মিলেছে। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কেন্দ্রীয় জওহরলাল নেহেরু আরবান রিনিউয়াল প্রকল্পে নতুন সেতু গড়া দেওয়া হবে।
|