সহকর্মী নিগ্রহে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে বসিরহাট আদালত চত্বরের গেটে তালা ঝুলিয়ে বুধবার বিক্ষোভ দেখালেন আইনজীবী এবং মুহুরিরা। এই অবস্থায় আদালতে এসেও চলে যেতে বাধ্য হন বিচারকেরা। বিক্ষোভকারীরা দাবি জানান, তাঁদের দুই সঙ্গীকে মারধর করার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। আইনজীবী এবং মুহুরিদের নিরাপত্তার দাবিও জানান তাঁরা। পরে দুপুর নাগাদ বারাসাত থেকে জেলা ও দায়রা জজ অসীম মণ্ডল এবং সিজেএম বসিরহাটে আসেন। আইনজীবীদের অভিযোগ শুনে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে বলা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসনাবাদের কালুতলা গ্রামে একটি জমির দখলকে কেন্দ্র করে দুলাল চন্দ্র দাস এবং বিশ্বনাথ দাসের মধ্যে ঝগড়া আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বসিরহাট দেওয়ানি আদালতের বিচারকের নির্দেশে ‘কমিশনার’ হিসেবে গত ১৮ ডিসেম্বর আইনজীবী দেবাশিস দাস এবং মুহুরি তাপস মণ্ডল ওই গ্রামে যান। অভিযোগ, সেই সময় বিশ্বনাথ দাসের নেতৃত্বে একদল লোক আইনজীবী এবং মুহুরির উপর চড়াও হয়ে তাঁদের একটি ঘরে আটকে রেখে মারধর করে। এই ঘটনায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত বিশ্বনাথ দাস-সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হাসনাবাদ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। |
কিন্তু তা সত্ত্বেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে ঘটনার ছ’দিন পরে আইনজীবী এবং মুহুরিরা মিছিল করে বসিরহাটের এসডিপিও -র দফতরে বিক্ষোভ দেখান। অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। একই দাবিতে বসিরহাট আদালতের এসিজেএম এবং এডিজে-র কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ।
এ দিন সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা আদালত চত্বরে মিছিল করেন। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মাইকে স্লোগান দেওয়া হয়, পোস্টার মারা হয়। আদালত চত্বরে ঢোকার গেটে তালা ঝুলিয়ে রাখায় বিচারপ্রার্থীরা ঢুকতে পারেননি। আদালতে ঢুকতে না পেরে ফিরে যান বিচারকেরাও। দুপুরে বারাসাত থেকে জেলা ও দায়রা জজ এবং সিজেএম ঘটনাস্থলে আসেন। আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হয়। এর পর বার অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত নেয় বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থে কেবলমাত্র এসিজেএম-এর আদালতের কাজে তারা কোনও বাধা সৃষ্টি করবেন না। তবে অপরাধীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আদালতের কাজ বন্ধ রাখা হবে। বসিরহাট দেওয়ানি আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অমিত মজুমদার বলেন, “আইনের সুশাসন জরুরি। যেখানে আইনজীবী আক্রান্ত হলেও পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করে না সেখানে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। তবে জনগণের স্বার্থে কেবল এ সি জে এম আদালত খোলা থাকবে।”
বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “অভিযুক্তরা পলাতক। তাদের ধরতে জোর তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ রেহাই পাবে না।” |