শান্তিপুরের পর এ বার নবদ্বীপ। বুধবার ভরদুপুরে নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে কয়েক লক্ষ টাকা লুঠ করে চম্পট দিল এক দল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ জনা ছয়েকের ওই দলটি রিভলভার, বোমা নিয়ে ব্যাঙ্কে ঢোকে। তারপর কর্মী ও গ্রাহকদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে বাথরুমে আটকে রেখে প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে ‘অপারেশন’ চালায়। ব্যাঙ্ক থেকে বেরোনোর সময় বেশ কয়েকটি জায়গায় বোমা রেখে তারা শাসিয়ে যায়, আধ ঘন্টার মধ্যে ব্যাঙ্ক থেকে বের হলেই বোমা ফাটবে! ব্যাঙ্ক কর্মীরা অবশ্য ডাকাতরা সরে পড়তেই সাইরেন বাজাতে থাকেন। গ্রাহকদেক চেঁচামেচিতে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন।
ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পঙ্কজ মণ্ডল জানান, ‘‘৫ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৩৩ টাকা ৫০ পয়সা লুঠ হয়েছে।’’ নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন, ‘‘এ দিন প্রায় জনা ছয়েকের একটি দল ব্যাঙ্ক লুঠ করে পালায়। গোটা এলাকা আমরা নাকাবন্দী করে দিয়েছি। পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।’’
নবদ্বীপে গঙ্গার পূর্বপারে স্বরূপগঞ্জে নবদ্বীপঘাট স্টেশন এবং অটোস্ট্যান্ড থেকে কয়েক পা দুরে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। সকালে তখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। পাঁচ ব্যাঙ্ক কর্মী এবং জনা কুড়ি গ্রাহক মিল তখন ভিতরে মেরেকেটে পঁচিশ জন। আচমকা জনা ছয়েক যুবক ঢুকে পড়ে ব্যাঙ্কে। মুখ মাঙ্কি টুপি কিংবা মাফলারে ঢাকা। প্রত্যেকের হাতে রিভলভার। গ্রাহকদের কয়েক জন জানান, ডাকাতরা ঢুকেই নিজেদের মাওবাদী বলে পরিচয় দেয়। |
ব্যাঙ্কের ডেপুটি ম্যানেজার মনোরঞ্জন দাসও বলেন, ‘‘নিজেদের মাওবাদী পরিচয় দিয়ে তারা বলে, ‘আমাদের কথামত কাজ করলে কোন ক্ষতি করব না।’ ততক্ষণে তাকিয়ে দেখি আরও চার পাঁচ জন রিভলভার হাতে ব্যাঙ্কের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বলে, ‘আপনাদের কোন ভয় নেই। আপনাদের কাছে টাকা থাকলেও ভয় পাবেন না। আমরা শুধু ব্যাঙ্কের টাকাই নিতে এসেছি।’ এই বলে আমাদের সবাইকে এক এক করে ব্যাঙ্কের বাথরুমে ঢুকিয়ে দেয় ওরা।’’
মনোরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের দিয়েই ওরা ভল্ট খোলায় সেখানে যা টাকা ছিল সবটাই একটি কালো ব্যাগে ভরে নেয়। টাকার পরিমাণে অসন্তুষ্ট হয়ে ওরা বলে, ব্যাঙ্কে এত কম টাকা থাকার কথা নয়। সব আলমারি আমরা খুলে দেখব। প্রতিটি আলমারি আমাদের দিয়ে ওরা খোলায়।’’
ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কের ভিতরের ক্যান্টিন থেকে খেয়ে অফিসে ঢোকেন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পঙ্কজ মণ্ডল। তিনি বলেন,‘‘ ভিতরের এইসব কান্ডকারখানা আমি টেরই পাইনি। আমাকে দেখেই ওদের এক জন সরাসরি আমার দিকে রিভলভার তাক করে জিজ্ঞাসা করে, আপনি ফোন করছিলেন? আমি জানাই আমি ক্যান্টিনে খেতে গিয়েছিলাম এরপর আমার কাছ থেকে ওরা মোবাইল সেটটা কেড়ে নিয়ে আমাকেও বাথরুমে আটকে দেয়। যাওয়ার আগে তারা বলে যায়, ব্যাঙ্কে বোমা রেখে গেলাম। আধঘন্টা আগে বাথরুম থেকে কেউ বাইরে বেরোলেই বিপদে পড়ে যাবেন।’’ তারপরে দ্রুত মোটরবাইক চালিয়ে উধাও হয়ে যায় ডাকাতেরা। ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ওই ব্যাঙ্কটি চালু হওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার ডাকাতি হল।এর আগে ১৯৯১ সালে ডাকাতি হয়েছিল। প্রসঙ্গত জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালের প্রথম দিকে বাদকুল্লা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, তারপরে গয়েশপুর পোষ্ট অফিস, চাপড়ার কৃষি সমবায় ব্যাঙ্ক এবং গত অক্টোবরে শান্তিপুরে ঘোড়ালিয়া ব্যাঙ্কেও ডাকাতি হয়। কোনটির ক্ষেত্রেই ডাকাতির কোন কিনারা হয়নি। বুধবারের এই ব্যাঙ্ক ডাকাতি সেই তালিকার শেষ সংযোজন বাজারের মধ্যে ভাড়া বাড়ির দোতলার এই ব্যাঙ্কটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এলাকাবাসী ও গ্রাহকদের যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। ডাকাতি চলাকালীনই ব্যাঙ্কে ঢুকে পড়ে ছিলেন দীর্ঘদিনের গ্রাহক শক্তিপদ দাস এবং তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা দাস। শক্তিপদবাবু বলেন,‘‘ নীচে তিনটি মোটরবাইক দাঁড় করানো ছিল। এমন তো থাকেই ফলে আলাদা করে কিছু বুঝতে পারিনি। উপরে উঠতেই মুখঢাকা দুজন ছেলে আমাদের মাথায় পিস্তল ঠেকায় আমি ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি আমাদের দুজনকে জোর করে বাথরুমের ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।” প্রসঙ্গত ওই ব্যাঙ্কে দীর্ঘদিন ধরেই কোন নিরাপত্তা কর্মী নেই এই প্রসঙ্গে ডাকাতির পর ঘটনাস্থলে এসে ওই ব্যাঙ্কের চিফ রিজিওন্যাল ম্যানেজার প্রসূন সাহা বলেন, ‘‘খুব বড় শাখা ছাড়া আমাদের বেশিরভাগ ব্যাঙ্কেই কোন নিরাপত্তা কর্মী নেই ।’’ পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন, ‘‘এই ব্যাঙ্কে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।’’ |