দিনভর অক্লান্ত কূটনৈতিক প্রয়াসের ফলে অবশেষে মুক্তি পেলেন ইয়ুর হোটেলে ‘বন্দি’ দুই ভারতীয় ব্যবসায়ী। তবে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ছোট হলেও একটা ছাপ রেখে গেল এই ঘটনা। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত আলোচনার যখন আর বেশি বাকি নেই। এবং দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত।
দুই ভারতীয় ব্যবসায়ীকে মুক্ত করতে আজ দিল্লিতে দফায় দফায় ডেকে পাঠানো হয় চিনা রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং ইয়ানকে। বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ তাঁকে বারংবার বলেন পরিস্থিতির গুরুত্ব চিন সরকারকে বোঝাতে। ভারত যে ভাল চোখে বিষয়টি দেখছে না, সে কথাও জানানো হয়। অবশেষে পদক্ষেপ করে চিন।
দলাই লামাকে নিয়ে তৈরি বিতর্কে বাতিল হয়েছে নভেম্বরের সীমান্ত আলোচনাটি। এ মাসে সেটি হওয়ার কথা। তার আগে দিল্লি চাইছে না, আবার কিছু নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হোক। তাই সকাল থেকে টানাপোড়েনের পর বিকেলে যখন পুলিশ পাহারায় দুই ‘নজরবন্দি’ ভারতীয় ব্যবসায়ীর সাংহাই পৌঁছনোর খবর নয়াদিল্লিতে এল, তখন ‘খুশি’ বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ। |
ভারতীয় কনস্যুলেট মঙ্গলবারই ইয়ুংয়ে ব্যবসা বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
বুধবারও ইয়ুংয়ের বাজারে এক ভারতীয়। পি টি আই |
অথচ ওই দুই ব্যবসায়ী দীপক রাহেজা এবং শ্যামসুন্দর অগ্রবালের হোটেলে আটকে থাকা এবং তাঁদের মুক্তির জন্য গিয়ে ভারতীয় কূটনীতিক এস বালচন্দ্রনের নিগৃহীত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি বেজিং। বরং চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হং লেই এক বিবৃতিতে জানান, বিষয়টি মোটেও তা নয়। ইয়ুর ওই দুই ব্যবসায়ীকে হেনস্থা করার ঘটনায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আইনি কার্যকলাপ শুরু হয়েছে বলে তিনি ‘হোটেলবন্দি’ থাকার বিষয়টিও এড়িয়ে যান।
এ দিকে, হোটেলের ঘর থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ফোন করে নিজেদের দুর্দশার কথা জানাতে থাকেন দীপকরা।
তাঁদের আবেদন ছিল, “যে পারছে আমাদের মারছে, অত্যাচার করছে, পশুদের থেকেও খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে।” কিন্তু সাংহাইয়ে ভারতীয় কনস্যুলেটের আবেদন অগ্রাহ্য করে ইয়ু’র স্থানীয় প্রশাসন জানিয়ে দেয়, ওই দু’জন তাঁদের সংস্থার বকেয়া না মেটালে পুলিশ পাহারায় তাঁদের হোটেলেই থাকতে হবে।
স্থানীয় জনতার রাগের কথা মাথায় রেখে এর থেকে বেশি কিছু সাহায্য করা সম্ভব নয়।
কূটনৈতিক টানাপোড়েনে তিতিবিরক্ত দীপক-শ্যামসুন্দর এর পর জানিয়ে দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা আত্মহত্যা করবেন। এই ‘হুমকি’র কথা জানার পরেই চিনা রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং ইয়ান দিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে দীপকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। বেজিংও এক বিবৃতিতে জানায়, ওই দুই ব্যবসায়ী-সহ চিনে থাকা সমস্ত ভারতীয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের। এর পরেই সাংহাই আনা হয় দীপকদের। তবে মামলা চলায় তাঁরা এখনই চিন ছাড়তে পারবেন না। |