মোবাইল চার্জ করতে ২ কিমি দূরে হরিপুর যেতে হয়। এক বছর ধরে গ্রামের রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে থাকলেও কবে তা পোঁতা হবে কেউ বলতে পারছেন না। রাস্তাঘাট বেহাল। বিঘের পর বিঘে জমিতে বালি পড়ে। কৃষক পরিবারের অসংখ্য যুবক কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে। উন্নয়নের বঞ্চনা নিয়ে এমনই অভিযোগের খেদ মেটাতে এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে জমি দিতে একজোট হয়ে এগোতে চান কোচবিহার-২ ব্লকের মধুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালাপানি গ্রামের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রোর (এল অ্যান্ড টি ) প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কালাপানি গ্রামে জমি পাওয়া যাবে বলে বাসিন্দাদের তরফে দাবি করেছিল কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতি। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও দেয় তারা। শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমে ব্যবসায়ী সমিতির আর্জির কথা পড়ে গোটা কালপানি জুড়েই বাসিন্দারা একজোট হয়ে এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আলোচনায় মাতেন। কালাপানির বাসিন্দা তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আমিনা বিবির বাড়িতে এমনই আলোচনার ছবি দেখা গেল। শুক্রবার দুপুরে ওই বাড়িতে হাজির হন আব্দুল আজিম, আজিজার রহমান, সাহেবউদ্দিন মিয়াঁ, নুরজামাল হক, আহমেদ মিয়ার মতো জনা দশেক বাসিন্দা। এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে জমি দেওয়ার ব্যাপারে যেখানে সকলের এক সুর। ষাটোর্ধ্ব আব্দুল আজিম সাফ বলেন, “গ্রামে উন্নয়ন বলে কিছু হয়নি। বিদ্যুতের খুঁটি রাস্তায় পড়ে আছে এক বছর। ভাল চাষ হয় না বলে ছেলেটা বছরে ৬ মাস দিল্লিতে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছে। এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে বাইরে যেতে হবে না। মনেপ্রাণে চাইছি কারখানাটা হোক। পাশে বসা নুরজামাল হক, আহমেদ মিয়াঁরা বললেন, “আমরা সকলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য একজোট থাকব। জমি নিয়ে সমস্যা হবে না, লিখে রাখুন।” জমিতে বালি পড়ে থাকায় যাঁদের চাষবাস শিকেয় উঠেছে তাদের অনেকে ব্যেবসায়ী সমিতির প্রস্তাবের কথা জেনে জমি দিতে মুখিয়ে আছেন। কালাপানির সামসুল হক তাঁদের একজন। তোর্সার পাড়ে বালিতে ঢাকা জমি দেখিয়ে সামসুল বলেন, “দেড় বিঘা জমির বালি পড়ে রয়েছে। দিনমজুরি করে সংসার চালাচ্ছি। তার চেয়ে ভাল জমিটা বিক্রি করে দিয়ে ব্যাঙ্কে ভবিষ্যতের জন্য কিছু রাখতে পারব।” ইব্রাহিম মিয়াঁ বলেন, “বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বসত বাড়ি গেলেও হাসতে হাসতে দিয়ে দেব। সেটা ৫০ হাজার টাকা কাঠা হলেই হবে। বিনিময়ে শুধু কারখানায় কাজের একটা সুযোগ চাইব।” তাঁর মতো জমি দেওয়ার বিনিময়ে চাকরির নিশ্চয়তা চান যুবক আমিনুর রহমানদের মতো আরও অনেকে। কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে সম্পাদক রাজেন্দ্র বৈদ্য এ দিন ওই এলাকায় যান। তার কাছে বাসিন্দারা নানা বিষয়ে বিশদে খোঁজ নেন। যা দেখে তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত এল অ্যান্ড টি এলে মানুষ ওদের ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানাবেন। আমি জেলাশাসককেও তা বলেছি।’’ কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী জানান, ডিএলএলআরওকে সেখানকার জমি নিয়ে রির্পোট দিতে বলেছি। |