পুলিশের সামনেই যথেচ্ছ বোমা-গুলি ছুঁড়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের তলবি সভা ভেস্তে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়। মঙ্গলবার সকালে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মুকুলবাবু ইটাহারে রিয়াজুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। সেখানে দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর সামনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তা শোনার পরে মুকুলবাবুও পুলিশের একাংশের ভূমিকার সমালোচনা করেন। মুকুলবাবুর অভিযোগ, “বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে দেখে কংগ্রেস-সিপিএম মিলে খুন ও সন্ত্রাসের রাস্তা বেছে নিয়েছে। সে কথা জেনেও তলবি সভা নির্বিঘ্নে করাতে পুলিশ উদ্যোগী না হওয়ায় আমাদের দলের একজনের প্রাণ গিয়েছে।” তিনি জানান, দলের তরফে মৃত কর্মীর পরিবারকে সবরকম সাহায্য করা হবে। পাশাপাশি, তিনি পুলিশ-প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। বস্তুত, সোমবার ইটাহারের মারনাই গ্রাম পঞ্চায়েতের তলবি সভা ভেস্তে দিতে বোমা-গুলি নিয়ে হামলায় এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর পরেই পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। ওই পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে একসময়ে কংগ্রেসের ১০টি, সিপিএমের ৪টি ও ১টি তৃণমূলের দখলে ছিল। সম্প্রতি ৯ জন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলের একমাত্র সদস্য কংগ্রেসে চলে যান। বামেদের সমর্থনে কংগ্রেসের প্রধান টিঁকে রয়েছেন। সে জন্য তলবি সভা ডাকা হলেও হামলায় ভেস্তে যায়। বোমায় রিয়াজুদ্দিন আহমেদ নামে তৃণমূল সমর্থক এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়। |
গুলিবিদ্ধ হন একজন। বোমাবাজির মুখে পড়ে পুলিশ গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যায় বলে অভিযোগ। তা জানার পরে ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক অমল আচার্য, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও পুলিশের ভূমিকায় সরব হন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান সহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জেলা পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তাঁদের বিরুদ্ধে খুন-জখমের মামলা হয়েছে। বোমা ছুঁড়ে পুলিশের জিপ সহ তিনটি সরকারি গাড়ি নষ্টের অভিযোগও রয়েছে। ওসি প্রশান্ত রাইকে ‘ক্লোজ’ করে তাঁর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে।” মৃতের পরিবারের লোকজনদের কর্মসংস্থানের আশ্বাসও দেন তিনি। পরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ তৃণমূল কর্মী নাজিমুল হকের সঙ্গে দেখা করেন। তবে প্রায় একই সুরে তৃণমূলের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। উত্তর দিনাজপুর কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তের অভিযোগ, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই মিথ্যে অভিযোগ করছে তৃণমূল। ওই পঞ্চায়েতের ৯ কংগ্রেস সদস্য শুধু নন, কংগ্রেস প্রধানও তৃণমূলে যোগ দেন। তিনি প্রধান পদ থেকে সরতে না-চাওয়ায় তৃণমূলের মধ্যেই গোলমাল বাধে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই হামলা হয়। তাতে কংগ্রেসের কোনও ভূমিকা নেই। বরং কংগ্রেসকে খতম করতে সিপিএমের সাহায্যে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অপূর্ব পাল জানান, তাঁদের ওই পঞ্চায়েতে কোনও ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, “শুনেছি প্রধান হওয়া নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধে তলবি সভা ভেস্তে দিতে হামলা হয়। মুকুলবাবু এত বড় মাপের নেতা হয়েও সব কিছু খতিয়ে না-দেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।” |