ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করায় সহকর্মীদের একাংশের হেনস্থার মুখে পড়ে প্রায় তিন মাস ধরে এক জন শিক্ষিকা স্কুলে যেতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের সুনীতি অ্যাকাডেমিতে। ওই শিক্ষিকার নাম ইলোরা ঘোষ। সহকর্মীদের হেনস্থার হাত থেকে তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকাকেও সহকর্মীদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ।
স্কুল সূত্রের খবর, কলকাতার দমদমের বাসিন্দা ইলোরাদেবী ২০০৬ সালে সুনীতি অ্যাকাডেমি স্কুলে বাংলার শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন। তাঁর প্রথম বিয়ে টেকেনি। বিচ্ছেদের পরে ২০০৯ সালে তিনি কলকাতার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক তাজগের আলিকে বিয়ে করেন। তার পর থেকে কয়েকজন সহকর্মী তার উপর নানা ভাবে মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এখন তিনি ছুটিতে রয়েছেন। মঙ্গলবার কলকাতা থেকে ফোনে ইলোরাদেবী বলেন, “ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করায় বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকজন সহকর্মীর কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। আমার পাশে দাঁড়ানোয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকাকে অপমান করা হয়। জেলা প্রশাসন, শিক্ষা দফতর সর্বত্র বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়নি। তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে হয়েছে। দেখি শেষ পর্যন্ত কী হয়।”
এই অবস্থায় ইলোরাদেবীকে অন্য স্কুলে বদলি করার জন্য জেলাশাসকের কাছে আবেদন করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মাধবী দাস তালুকদার। তিনি বলেন, “ইলোরা আমাকে আগে সে ভাবে বলেননি। গত সেপ্টেম্বরে ইলোরা ছবি আঁকার জন্য একটি আলাদা ঘরের জন্য অনুরোধ করেন। তা দেওয়ার পরে কয়েকজন সহকর্মী আমাকেও হেনস্থা করেন। তখনই ইলোরা অভিযোগ করেন, ভিন্ন
ধর্মের একজনকে বিয়ে করায় সহকর্মীদের একাংশ ওঁকে নানা ভাবে হেনস্থার চেষ্টা করছেন।” মাধবীদেবী বিষয়টি মেটাতে পারেননি। তিনি জানান, সমস্যা মেটাতে না-পেরে ইলোরাকে অন্যত্র বদলি করার জন্য জেলাশাসককে অনুরোধ করতে হয়।
কোচবিহারের জেলাশাসক তথা ওই স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি মোহন গাঁধী সমস্যার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। তিনি বলেন, “প্রধান শিক্ষিকাকে সকলকে নিয়ে বৈঠক করে সমস্যা মেটাতে বলেছিলাম। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং কেন সমস্যা মেটেনি সেই ব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্য জানতে হবে। তার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ অবশ্য দাবি করেছেন, ভিন্ন ধর্মে বিয়ের জন্য ইলোরাকে হেনস্থা করার বিষয়টি ঠিক নয়। তাঁদের বক্তব্য, স্কুলের একটি ঘর শুধু ওঁকে ছবি আঁকার জন্য কেন দেওয়া হবে, সেই প্রশ্ন তোলাতেই ভিন্ন ধর্মের বিয়ের বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে। ইলোরাদেবীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল প্রভাবিত স্টেট গভর্নমেন্ট স্কুল টিচার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি বিজনকুমার সাহা। তিনি বলেন, “ইলোরাদেবী আমাদের সংগঠনের সদস্য। ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করার জেরে কয়েকজন সহকর্মী ওঁকে অপদস্থ করছেন। যা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইব।” |