নিজস্ব সংবাদদাতা • আলিপুরদুয়ার |
রাজ্যের সরকার অনুমোদিত স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করানোর জন্য অভিভাবকদের ছোটাছুটির অন্ত নেই। আসন সংখ্যার তুলনায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ-আন্দোলনও চলছে। একদম উল্টো ছবি ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ারে। সেখানে বাংলা মাধ্যমের একাধিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক পড়ুয়ার দেখা মিলছে না। এমনও স্কুল রয়েছে, যেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে এখনও একজন পড়ুয়াও ভর্তি হতে চেয়ে আবেদন করেনি। কী ভাবে ছাত্রছাত্রীদের বাংলা মাধ্যমের স্কুলে আগ্রহী করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। এই সমস্যার কথা জানেন আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত বিদ্যালয় পরিদর্শক দিলীপ দাসও। তিনি বলেন, “শহরের কয়েকটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সংখ্যা কমছে। তুলনায় বেসরকারি স্কুলগুলিতে ভিড় বাড়ছে। আসলে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করিয়ে রাজ্য ও সবর্ভারতীয় স্তরে প্রতিযোগিতা মুলক পরীক্ষার যোগ্য করতে চাইছেন। আমাদের স্কুলগুলিতে পাশ ফেল তুলে দেওয়া নিয়েও অভিভাবকদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।” শীঘ্রই বিষয়টি শিক্ষা দফতরে জানানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। আলিপুদুয়ার ম্যাকউইলিয়ম হাই স্কুলের কথা ধরা যাক। পড়াশোনার মান ভাল বলে ফি বছর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে উপচে পড়ে ভিড়। এবার পঞ্চম শ্রেণির অনেক আসন এখনও ফাঁকা রয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুধাংশ বিশ্বাস বলেন, “এবার যা আসন সংখ্যা ঠিক হয়েছিল তা এখনও পূর্ণ হয়নি। আমরা ফের আবেদনপত্র গুলো নিয়ে বসব।” আলিপুরদুয়ার বয়েজ হাই স্কুলের স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তনু দত্ত জানান, পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে আগ্রহ কমা থেকেই স্পষ্ট যে, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা এখন সরকারি স্কুলে তাদের বাচ্চাদের পড়াতে চান না। আলিপুরদুয়ার বালিকা শিক্ষা মন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা কাকলি ভৌমিক জানান, তাদের স্কুলে গত বছর পঞ্চম শ্রেণিতে ১০০ জন ছাত্রী ভর্তি হয়েছিল। এবছর মাত্র ৩০ জন ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তাদের স্কুলে ক্লাস ফাইভে ১৫০ ছাত্রী পড়ানোর পরিকাঠামো রয়েছে। আলিপুরদুয়ার গোবিন্দ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অসীম চক্রবর্তী জানান, তাদের স্কুলে ১০০ জন ছাত্র ভর্তির পরিকাঠামো রয়েছে। এ বছর সেখানে মাত্র ২০ জন ভর্তি হয়েছে। অরবিন্দনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে আসন ৫০টি। একজনও ভর্তি হতে চেয়ে আবেদন করেনি। অথচ ওই স্কুলে মডেল ক্লাস রুম রয়েছে। প্রজেক্টরের সাহায্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা করার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা অনুদান মিলেছে। কিন্তু, কোনও পড়ুয়া ভর্তি না-হলে স্কুল চলবে কী ভাবে? স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নন্দিতা ঘোষও বলেন, “আমরা সকলে মিলে অনেক কষ্টে স্কুলটাকে বড় করেছি। মূলত গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা আমাদের পড়ুয়া। এবার যে কী হল, এক জনও ভর্তি হতে আসেনি। আমরা বাড়ি-বাড়ি যাব ভাবছি। অভিভাবকদের বোঝাতে হবে।” এলাকার বিধায়ক তথা কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তির হার বাড়ানোর জন্য শিক্ষার মান বাড়ানো জরুরি। কলকাতায় অনেক বড় বড় বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থাকলেও নরেন্দ্রপুরে ছাত্র ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা চলে।” |