ধান নিয়ে জরুরি বৈঠক খাদ্যমন্ত্রীর
চাষ-সঙ্কট মেটাতে মমতা চান ‘কিষান মান্ডি’
রাজ্যের ধানচাষিদের সঙ্কট নিয়ে আন্দোলন তীব্রতর হওয়ার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, ধানচাষিদের কষ্ট দূর করতে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। সেই ব্যবস্থার মধ্যে যেমন প্রতিটি ব্লকে ‘কিষান মান্ডি’ তৈরির চেষ্টা করার কথা তিনি বলেছেন, তেমনই গবেষণা ও বিশেষ পরিকল্পনার উপরেও জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি, জেলায় জেলায় নতুন চালকল তৈরির কথাও ভাবছে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে মঙ্গলবার বলেন, “ধান বিক্রির কোটি কোটি টাকা আগে দালালদের হাতে যেত। চাষিরা যাতে সরাসরি ধান বিক্রি করে টাকা পান, এখন তার ব্যবস্থা হয়েছে।” রাজ্য সরকার যে ‘কিষান কার্ড’ দেওয়ার ব্যবস্থা করছে, তার সাহায্যে কৃষক যথেষ্ট উপকৃত হবেন বলেও তাঁর দাবি। ধানের সহায়ক মূল্য সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, এই মূল্য নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে রাজ্যের হাত নেই।
বস্তুত, ধান কেনা নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে আঁচ করেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ‘যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে’ চাল সংগ্রহের কাজ শুরু করতে বিভিন্ন জেলার খাদ্য নিয়ামকদের বলেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর দফতরে জেলা খাদ্য নিয়ামকদের নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে এফসিআই-এর পূর্বাঞ্চলীয় দফতরের কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের পরে খাদ্যমন্ত্রী জানান, আগামী তিন মাসে ধান-চাল সংগ্রহের একটা তালিকা করে দেওয়া হয়েছে। ধান সংগ্রহের পর চালকল থেকে দ্রুত চাল উৎপাদনের ব্যাপারে আজ, বুধবার তিনি চালকল মালিক সংগঠনের প্রতিনিধির সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, গ্রামে গ্রামে গিয়ে সহায়ক-মূল্যে চাষিদের ধান বিক্রির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল করতে খাদ্য নিয়ামকদের বলা হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ৪০০টি শিবির করে ধান সংগ্রহ করতে হবে। খাদ্যমন্ত্রী জানান, দু’ভাবে চাল সংগ্রহ করা হয়। প্রথমত, সরাসরি চালকল থেকে। এই পদ্ধতিতে মিলগুলি চালের একটা নির্দিষ্ট অনুপাত (বর্তমানে ৫০%) সরকার নির্ধারিত দামে সরকারকে প্রদান করে। এটাকে লেভি বলে। দ্বিতীয়ত, অভাবী বিক্রি রুখতে ২০০১-০২ খরিফ মরসুম থেকে পর্যায়ে ক্রমে বেনফেড, কনফেড, ইসিএসসি, নাফেড এবং এনসিসিএফের মতো সংস্থাগুলি গ্রামে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন সমবায় সংস্থার মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত দামে ধান কেনে। তা থেকে উৎপাদিত চাল সরকারি দামে সরকারকে দেয়।
তবে, আর্থিক সঙ্কটের কারণে বেনফেড ও কনফেডের ধান সংগ্রহে সমস্যা যে হচ্ছে তা খাদ্যমন্ত্রী এ দিন স্বীকার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে তিনি আলোচনাও করেছেন। খ্যদ্যমন্ত্রীর দাবি, “এ দিনই কনফেডকে ১০ কোটি টাকা এবং বেনফেডকে ১৫ কোটি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।”
চালকল বাড়ানো নিয়ে এ দিনই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজ্যে বাজেটের পরেই বিষয়টি নিয়ে আমি শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করব। চালকল তৈরির ক্ষেত্রে বেসরকারি মালিকদের এফসিআই ৩০ শতাংশ সাহায্য করবে। আর চালকল তৈরিতে খরচও খুব বেশি নয়।”
এ দিকে, ধানের পাশাপাশি আলুর ‘উদ্বৃত্ত’ ফলনেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “যাতে ভাল ফলন হয় এবং চাষিরা ভাল দাম পান, তার জন্য আরও উন্নত মানের আলুবীজ নিয়ে গবেষণা করা হবে।” হিমঘরে আলু রাখার মেয়াদও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য সরকার ১০ কোটি টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
চাষের খরচ বৃদ্ধিতে অন্যতম কারণ সারের দাম বাড়া। কিন্তু তাতে কেন্দ্রের আর নিয়ন্ত্রণ নেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে গত বছরেই কেন্দ্র ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে, সারের দাম তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে। চাষিরা সঙ্কটে পড়েছেন। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে বার বার চিঠি দিয়েছি। সারমন্ত্রী শ্রীকান্ত জেনা এবং অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলেছি। বিশেষ করে ইউরিয়া-র দামের উপর ভর্তুকি দিতে বলেছি কেন্দ্রকে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.