শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্কৃতি-সহ সব ক্ষেত্রেই তাঁর সরকার বাম জমানার ‘ব্যর্থতা’ ছাপিয়ে কাজ করছে বলে ফের জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, বাম জমানায় নানা ক্ষেত্রে ‘দলতন্ত্র’ চেপে বসেছিল। দুর্নীতি বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু নতুন সরকার আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেই রাজ্যের উন্নয়নে যথাসাধ্য করছে।
শিক্ষায় ‘অনিলায়ন’ মুক্তির কথা বলে ইতিমধ্যেই বিল এনেছে রাজ্য সরকার। বিরোধী বামেদের অভিযোগ, অন্য পথে তৃণমূলের সরকার ‘দলতন্ত্র’ই প্রতিষ্ঠা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার মহাকরণে বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আমরা বলেছি, সর্বত্র গণতন্ত্র চাই। দলতন্ত্র চলবে না! আমরা চাই শিক্ষাক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ফিরে আসুক।” যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজ ছাড়া কোনও কলেজের অধ্যক্ষকে তিনি চেনেন না বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “কোনও স্কুলে কোনও ব্যাপারে তৃণমূল হস্তক্ষেপ করছে না। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা-সেলে অরাজনৈতিক যে কেউ থাকতে পারে। ছাত্র সংসদের ভোটে হেরে সিপিএম সমর্থকেরা এ সব বলছে!”
পুলিশ থেকেও ‘দলতন্ত্র’ মুছে দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “পুলিশকে পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হত। নেতারা কাজ না-করে মাসের পর মাস মাইনে নিয়েছেন। পুলিশের রাজনৈতিক সংগঠন
ভেঙে দিয়েছি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।”
বিভিন্ন বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন পূর্বতন বাম জমানা এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে যে বিপুল অভিযোগ করেছেন, তার প্রায় সবই ‘বস্তাপচা’ বলে দাবি করেছে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর বক্তব্য, “ভেবেছিলাম, সরকারের ৬ মাস হয়ে গেলে আবার ঝকঝকে বই বেরোবে। কিন্তু বই আর বেরোচ্ছে না। তা না-করে যা বলছেন, সে সব না-বললেই ভাল হত! তবে এটা ঠিক, এই অল্প সময়ে নজিরবিহীন সব কাজ করেছেন! একের পর এক রেকর্ড সব তৈরি করেছেন!” কৃষি-সহ নানা ক্ষেত্রে যে সব অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, তার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতার কটাক্ষ, “ভিত্তিহীন সব অভিযোগ করা হচ্ছে। বস্তা ছিড়ে পচা আলু বেরোতে শুরু করেছে!”
বামেরা দুর্নীতির আঁতুড় ঘর তৈরি করে গিয়েছে বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “আগে বলেছিলাম রাজ্যের দেনা ২ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা। প্রকৃত দেনা এর চেয়ে অনেক বেশি! বহু ফাইল লোপাট হয়ে গিয়েছে। এটা একটা বড় অপরাধ!” দিনহাটার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের ফাইলও হারিয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর জবাবে বিরোধী দলনেতা বলেন, “কোথায় কী ফাইল হারিয়ে যাচ্ছে, উনি সতর্ক হোন! সুশাসন কেমন হচ্ছে, সেটা খেয়াল রাখুন!”সূর্যবাবুর আরও সংযোজন, “উনি বলছেন, বুদ্ধি খরচ করে সব করছেন। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা খরচ করতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই চিঠি লিখে সেটা ধরিয়ে দিচ্ছেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে, টাকা খরচ করতে হবে না, বুদ্ধি খরচ করেই সব চলবে!”
শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের উল্লেখ করে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “পাঁচ বছরে আমরা যা করব, বামফ্রন্ট সরকার ৬৫ বছরেও তা করতে পারবে ন!” স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা জানান, গত কয়েক মাসে হাসপাতালে সাড়ে তিন হাজার শয্যা যুক্ত হয়েছে। রাজ্যে প্রায় ৩০টি ‘মাল্টি স্পেশ্যালিটি’ হাসপাতাল তৈরির ব্যাপারে যোজনা কমিশনের ছাড়পত্র মিলেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন ব্লকে চিকিৎসক নেই। নার্স নেই। পুলিশ নেই। কী ভাবে ওরা এত কাল চালাল, কে জানে!” এই সঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন দফতরে, বিশেষত পরিবহণ নিগমে বাম জমানায় প্রচুর ‘ভুয়ো নিয়োগ’ হয়েছে। মমতার কথায়, “সরকারের টাকা নেই। অথচ সিপিএমের তিন হাজার পার্টি ক্যাডার মাসে তিন হাজার টাকা মাইনে পেয়েছে!”
বাম আমলে এ রাজ্যের কর্মসংস্কৃতিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর বক্তব্য, “আমরা বিডিও স্তর পর্যন্ত আলোচনা শুরু করেছি। সমানে বৈঠক করছি। কিন্তু প্রশাসনের একাংশ অসহযোগিতা করছে। ওদের চিহ্নিত করছি।” সময়মতো যাঁরা কাজে আসছেন না, তাঁদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ‘হুঁশিয়ারি’, “আশা করব, ওঁরা হাজিরায় ‘পাঞ্চিং’ পদ্ধতি চালু করতে আমাদের বাধ্য করবেন না! করলে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ওঁদের অফিসে ঢুকতে হবে!” মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন অভিযোগ করেছেন, বাম জমানায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে দুর্নীতি হয়েছে। বি এড এবং পিটিটিআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সূর্যবাবুরা নিজেদের ‘আত্মীয়-বন্ধু-কমরেড’দের চাকরি দিয়েছেন। |