রাস্তাঘাট বেহাল। কিন্তু যথাযথ ভাবে মেরামতি বা রক্ষণাবেক্ষণ করার মতো টাকা নেই। অথচ বাংলার নতুন সরকার রাজ্য সড়কগুলিকে জাতীয় মানে উন্নীত করতে চায়।
এই অবস্থায় বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সড়কের কাজ করাতে চাইছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সড়কগুলির হাল ফেরানোর এই পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পৃথক একটি কর্পোরেশন বা নিগম গঠন করা হচ্ছে। সংস্থাটি গড়ে তোলা হবে কোম্পানি আইন অনুসারেই। নাম হবে ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্মাণ সংস্থা নিগম’।
মুখ্যমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন চেয়ে নতুন নিগমের রূপরেখা তাঁর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে পূর্ত দফতর। ওই নিগমই ক্রমান্বয়ে ‘বিল্ট-অপারেট-ট্রান্সফার’ বা ‘বি-ও-টি’-র ভিত্তিতে রাজ্য সড়কগুলির উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ভার তুলে দেবে বেসরকারি সংস্থার হাতে। যানবাহনের উপরে ‘টোল’ বসিয়ে সেই টাকা তুলে নেবে বেসরকারি সংস্থা। পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন মঙ্গলবার জানান, এর ফলে রাস্তার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ সরকারের উপরে কোনও আর্থিক দায় আসবে না। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে রাস্তা, সেতু, কালভার্ট, উড়ালপুল, সাবওয়ে, ভূগর্ভপথের যাবতীয় দায়িত্ব প্রস্তাবিত নিগমের মাধ্যমে তুলে দেওয়া যাবে বেসরকারি হাতে। নিগমের ভূমিকা হবে ‘নোডাল এজেন্সি’ বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আদলেই গড়া হবে এই নিগম।
রাজ্য সড়কগুলির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার। এখন ওই সব সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে রাজ্যের পূর্ত দফতর। নিগম তৈরি হলে সেটি রাজ্যের রাস্তাঘাটের সুদূরপ্রসারী উন্নয়নে ‘স্পেশ্যাল পার্পাস ভেহিক্ল’ হিসেবে কাজ করবে। পূর্তসচিব বলেন, “শুধু মেরামতি বা দেখভাল নয়। রাজ্য সড়কগুলিকে জাতীয় মানে উন্নীত করাই সরকারের লক্ষ্য।” সেই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার রাশ থাকবে নতুন নিগমের হাতে। নিগমের পক্ষে পিপিপি মডেলে বেসরকারি সংস্থার হাতে রাস্তার ভার দেওয়ার কাজ অনেক সহজ হবে। প্রশস্ত হবে রাজ্যের সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সামিল করার পথও।
পূর্তসচিবের মতে, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, কর্নাটকের মতো বেশ কিছু রাজ্যে দীর্ঘদিন আগে থেকেই এই ধরনের নিগমের মাধ্যমে পিপিপি মডেলে সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রথমে বাছাই করা কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়কের দায়িত্ব দেওয়া হবে নতুন নিগমকে। কারণ, ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ছাড়া বেসরকারি সংস্থাগুলি টোল আদায়ের মাধ্যমে সেগুলির উন্নয়নের দায়িত্ব নিতে রাজি হবে না। ধীরে ধীরে অন্যান্য রাজ্য সড়ক এবং প্রধান জেলা সড়কগুলির দায়িত্বও পাবে এই নিগম।
রাজ্য সড়কগুলির দেখভালের জন্য পূর্ত দফতরের এখন যে-বিরাট পরিকাঠামো রয়েছে, নিগম তৈরি হয়ে গেলে তার কী হবে?
পূর্তসচিব জানান, এক বারে সব রাস্তা নিগমের হাতে যাবে না। যে-সব সড়কের ভার নিগমের হাতে যাচ্ছে না, এখনকার মতো সেগুলির দেখভাল করবে পূর্ত দফতরই। মূলত অর্থাভাবে রাজ্যের ১৩টি রাজ্য সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথ ভাবে হচ্ছে না। বিগত বামফ্রন্ট সরকার রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ঠিকাদারদের প্রাপ্য যে-বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া রেখে গিয়েছিল, তা মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে নতুন সরকারকে। নিগম তৈরির রূপরেখাটি মুখ্যমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন পেয়ে গেলে সেটির আইনগত খুঁটিনাটি যাচাই করবে আইন দফতর। তারা সায় দিলে রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনসাপেক্ষে সড়ক উন্নয়নে রাজ্যের নতুন নির্মাণ নিগম গড়ে তোলা হবে।
রাজ্য সড়কের উন্নয়নের এই উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় সড়কগুলির হাল খতিয়ে দেখতে আসছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের সচিব এ কে উপাধ্যায়। ১৪-১৫ জানুয়ারি বাগডোগরা থেকে শুরু করে বারাসত পর্যন্ত সড়কপথে ৩১ এবং ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের হাল সরেজমিনে দেখবেন তিনি। তাঁর সঙ্গী হবেন রাজ্যের পূর্তসচিব। |