মুখোমুখি বিতর্কে বসার জন্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর দাবি, আগের বাম আমলের লগ্নি প্রস্তাবের বেশির ভাগ নেহাত প্রস্তাব স্তরেই আটকে ছিল। তারা লগ্নিকারীদের জমি দিতে পারেনি, প্রকল্প রূপায়ণে সাহায্য করতেও ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর কথায়, নতুন সরকার ছ’মাসেই সে সব জটিলতা কাটিয়ে ৮৪টি ‘নতুন’ লগ্নি-প্রস্তাব পেয়েছে। পার্থবাবু বলেন, বুদ্ধ-নিরুপমরা ‘অসত্য প্রচার’ বন্ধ রেখে মুখোমুখি বিতর্কে বসুন। তিনি তাঁদের জবাব দিয়ে দেবেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও নিরুপম সেন সম্প্রতি অভিযোগ করেন, নতুন সরকারের দাবি করা লগ্নির অধিকাংশই তাঁদের আমলের। এ ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস জমি অধিগ্রহণের বিরোধী হলেও, বাম আমলে অধিগৃহীত জমিতেই শিল্প করছে। বুদ্ধদেব-নিরুপমের মন্তব্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন মহাকরণে সরব হন। তিনি বলেন, “কাল সিপিএম নেতারা বলছিলেন, ওরাই নাকি সব শিল্প করেছেন। তা হলে সে সব চালু হয়নি কেন? জিন্দালদের ফাইল তো আমার কাছেই রয়েছে। ওতে কিছু সমস্যা ছিল। সে সব ঠিক করতে হচ্ছে। শুধু কোল ‘ব্লক’ দিয়ে চলে গেলাম। হবেই তো। ওতে অনেক মধু আছে।” মমতা বলেন, “নয়াচর, জেলিংহ্যাম, সুন্দরবন একটা প্রকল্পও হয়নি। সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছে। আমাদের বেশি মুখ না-খোলালেই ভাল।”
আসন্ন শিল্প সম্মেলন ‘বেঙ্গল লিডস’ নিয়ে বলার ফাঁকে মঙ্গলবার বুদ্ধ-নিরুপমের অভিযোগের জবাব দেন পার্থবাবু। তাঁর দাবি, প্রথমে তাঁরা যে ৫৬ হাজার কোটি টাকার লগ্নি পাওয়ার হিসেব দিয়েছিলেন, তার মধ্যে এরোট্রোপলিস, জিন্দল-এর মতো ‘পুরানো’ প্রকল্প ধরা ছিল না। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত পাওয়া নতুন ৮৪টি প্রস্তাবেই লগ্নির পরিমাণ প্রায় ৬৫,৪০৯ কোটি টাকা। ইনফোসিস, উইপ্রো ও কগনিজেন্টের ‘পুরানো’ প্রস্তাব বাদ দিয়েই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ১৪১০ কোটি টাকা নতুন প্রস্তাব পেয়েছে রাজ্য। তবে নতুন ৮৪টি প্রস্তাব কী কী, তা বিধানসভাতেই জানাবেন বলে জানান শিল্পমন্ত্রী। |
রাজ্যে ১৭টি ‘আইটি হাব’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নতুন সরকার। পার্থবাবু জানান, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির বিভিন্ন সময়ে শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, খড়্গপুর, বানতলা, রাজারহাট, বড়জোড়া, বিষ্ণুপুর ও ফলতায় ৮টি আইটি-হাবের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে কিছু নতুন ও কিছু দ্বিতীয় পর্যায়ের বলে উল্লেখ করেন তিনি। ৬ জানুয়ারি কগনিজেন্টের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ভূমিপুজো হবে। পর দিন উইপ্রোর হাতেও জমি তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে হিডকো। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার এক-জানলা ব্যবস্থার কথা বললেও তা নজরেই আসছে না। জবাবে পার্থবাবুর মন্তব্য, “কী করে দেখবেন? এত দিন তো জানলা ছিল আলিমুদ্দিনে। এখন তা চালু হয়েছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমে।”
শিল্পমন্ত্রীর দাবি, জিন্দলদের জমির বিষয়টি চার বছর ধরে ঝুলে ছিল। চুক্তিও হয়নি। ম্যাটিক্সকে ডেকে এনেও জমি দিতে পারেনি বাম সরকার। পরে তাঁরা জমি দিয়েছেন। পার্থবাবুর দাবি, তাঁরা ১১টি সংস্থার জমির সমস্যা মিটিয়েছেন। সিঙ্গুরের জমি মিললেই বিকল্প শিল্প গড়া হবে। এ ছাড়া ২৭ জানুয়ারি রাজ্যে জাপানের একটি শিল্প প্রতিনিধি দল আসবে বলেও জানান তিনি। আগের আমলের অধিগৃহীত জমি দেওয়ার ক্ষেত্রেও আপত্তির কিছু দেখছেন না শিল্পমন্ত্রী। পার্থবাবু বলেন, “জমি তো কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। কিন্তু ওঁরা যে ভাবে জোর করে জমি নিয়েছিলেন আমরা তা করব না।”
এ রাজ্য এখনও যে লগ্নিকারীদের কাছে আকর্ষণীয়, তা বোঝাতে তিনি আসন্ন শিল্প সম্মেলনের প্রসঙ্গও তোলেন। পার্থবাবু জানান, এই সম্মেলনের আলোচনা চক্রে অংশ নেবেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ। থাকবেন সজ্জন জিন্দল, বেণু শ্রীনিবাসন, তাঁর শিল্পোদ্যোগী স্ত্রী মল্লিকা, এস কে বিড়লা, যোগী দেবেশ্বর, জেনারেল মোটরস-এর কর্তা ক্রিস্টোফার বোরিনি বার্ডের পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের এক প্রতিনিধি দল। অম্বানী ভাইদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থাকেও। কিন্তু রতন টাটা কিংবা টাটা মোটরসকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে কি না, তা অবশ্য খোলসা করেননি পার্থবাবু। |