দুলটা ‘বাবার স্মৃতি’। তাই সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাত বিরেতে বাড়িতে চড়াও হওয়া ডাকাতের হাতটা চেপে ধরেছিলেন কণিকাদেবী। হাঁসখালির পন্ডিতপুর গ্রামের সোমবার রাতের সেই ডাকাতির ঘটনা বলতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠছে মহিলার। বলচেন, “আর যাই হোক ছেলেটি কিন্তু আমার কথা শুনে কিঞ্চিৎ দুর্বলই হয়ে পড়ল। থলের ভিতর হাতড়ে হাতড়ে সোনার দুলটা ঠিক তুলে দিয়ে গিয়েছিল আমার হাতে।”
ফিরে পাওয়া বলতে ওইটুকুই। ডাকাতেরা গয়না, আলমারিতে রাখা নগদ হাজার কয়েক টাকা, মোবাইল সবই নিয়ে গিয়েছে ওই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। দুই ভাই বিকাশ ও প্রদীপ সরকার উত্তরপ্রদেশের গ্রামের হাতুড়ে। দিন কয়েক আগেই তাঁরা বাড়ি ফেরেন। সোমবার রাত প্রায় একটা নাগাদ তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় জনা দশেকের ওই ডাকাত দলটি।
বিকাশবাবুর জামাই অলোক বিশ্বাস রাতে বাড়ির বাথরুমে গেলে ডাকাতরা প্রথমে তাঁকে ধরে। তারপর খোলা দরজা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে বাড়িতে। এই সময়ে বাড়ির কয়েক জন টাকা কিংবা গয়না দিতে দেরি করায় মারধরও করে তারা। তারপর বিকাশবাবুর ভাই স্বপনের পিঠে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে পাশেই প্রদীপবাবুর বাড়িতে। এই সময়েই প্রদীপবাবুর স্ত্রী কণিকাদেবী তাঁর কাছে থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুল জোড়া ফেরত চেয়েছিলেন। তা অবশ্য ফিরিয়ে দেয় ডাকাতেরা। নির্বিচারে সেখানেও লুঠপাট চালিয়ে দু-বাড়ির লোকজনকে তালা বন্ধ করে রেখে হানা দেয় পড়শি সুধাংশু বিশ্বাসের বাড়িতে। একই ভাবে টাকা-গয়না-মোবাইল ফোন নিয়ে চম্পট দেয় তারা।
স্বপনবাবু বলেন, ‘‘দুষ্কতীরা অন্তত দশ-বারোজন ছিল। প্রত্যেকেই ছিল সশস্ত্র, মুখঢাকা, আলমারির চাবি দিতে না চাইলে ওরা মেয়েদের গলায় দা ধরেছিল। ছেলেদের চড় থাপ্পড়ও মেরেছিল।” রাতের আতঙ্ক সকালেও কাটেনি তাঁর। তবে ঘটনার পরে রাতেই সীমান্তরক্ষীবাহিনী ডাকাতদের এক জনকে ধরে ফেলেছে বলে পুলিশের দাবি। রানাঘাটের এসডিপিও আব্দুল আজহার বলেন, ‘‘বিএসএফ এক জনকে ধরেছে। তবে সে ওই দলের সদস্য কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ |