|
|
|
|
মাঠে বিডিও |
ঘাটালে ফুটবল ঘিরে নতুন উদ্দীপনা |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। সারাদিনের প্রশাসনিক কাজকর্মের ঝক্কি সামলে তা দেখিয়েও দিচ্ছেন ঘাটালের বিডিও দেবব্রত রায়।
ছাত্রাবস্থায় পড়াশোনার চাপ সামলে নিজে চুটিয়ে ফুটবল খেলতেন। চাকরি পাওয়ার পরেও ফুটবলের নেশা ছাড়তে পারেননি। গত বছর সেপ্টেম্বরে বিডিও হয়ে ঘাটালে আসার পর থেকেই ব্লক জুড়ে ফুটবল-চর্চা বাড়াতে নেমে পড়েছেন। ক্লাব আর স্কুলে-স্কুলে ঘুরে ফুটবলের প্রতি ছেলেদের আগ্রহ বাড়ানোর কাজ করে চলেছেন। প্রশাসনিক পরিচয় বাধা হয়নি, ক্লাবের বা স্কুলের ছেলেদের নিয়ে দিব্যি নেমে পড়েছেন মাঠে। নিজের পকেটের টাকায় ফুটবলও কিনে দিয়েছেন একাধিক ক্লাবে। এমনকী ব্লক অফিসের বিভিন্ন স্তরের কর্মীদেরও মাঠমুখী করতে সফল এই ক’মাসেই। |
|
মধ্যমণি বিডিও। ঘাটালের বরোদা বাণীপীঠ হাইস্কুলের শিক্ষকদের মুখোমুখি ব্লককর্মীরা। |
বিডিওর উদ্যোগ দেখে অফিসের কর্মী থেকে পঞ্চায়েতের কর্মী, এমনকী জয়েন্ট বিডিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও উৎসাহিত হয়েছেন। নিজের কাজ সামলে সময় পেলেই এখন নিয়মিত মাঠে যেতে শুরু করেছেন তাঁরা। কর্মী-অফিসারদের সহযোগিতা আরও অনুপ্রাণিত করেছে দেবব্রতবাবুকে। ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েত এলাকার স্কুল-ক্লাব মিলিয়ে তাঁর উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ৩০টি নতুন ফুটবল-দল। সে-সব দলের ছেলেরা এখন ব্লকের বাইরেও বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে।
কেন ফুটবলের জন্য এত উদ্যোগ? দেবব্রতবাবুর কথায়, “ঘাটালে বিডিও হয়ে আসার পরে জানতে পারি এখানে ফুটবলের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। খেলাটার চর্চাও রয়েছে। তবে সেই চর্চায় এখন যে কিছুটা ভাটার টানতা-ও জানতে পারি। গোটা ব্লক জুড়ে খেলাটাকে ঘিরে যাতে নতুন করে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়, সেই চেষ্টা শুরু করি।” বিডিও বলেন, “আমার আগ্রহের কথাটা মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারীকেও জানিয়েছিলাম। উনিও আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন।”
বিডিও সাহেবের এমন উদ্যোগে খুশি ঘাটাল শহর-সহ ব্লকের বিভিন্ন ক্লাবের ছেলেরাও। খুশি একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষও। ঘাটাল শহরের অগ্রণী ক্লাবের প্রদীপ বেরা, ন্যাশনাল বয়েজ ক্লাবের দীপক ঘোষাল থেকে শুরু করে দলপতিপুর গ্রামের পেঙ্গুইন ক্লাবের সুজিত রায়, রঘুনাথপুর তরুণ সঙ্ঘের ক্ষুদিরাম হান্দলরা এক সুরে বলেন, আমাদের এখানের ক্লাবগুলিতে ফুটবলের চর্চা একটা ছিলই। তবে বিডিও সাহেবের উদ্যোগ আমাদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। নিয়মিত চর্চাও শুরু হয়েছে। খেলাটাকে ঘিরে নতুন একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। ক্রিকেট-সর্বস্ব বিনোদনের এই সময়ে ফুটবল নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ছেলেরা।” ইড়পালা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোমোহন চক্রবর্তী, নতুক স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বদেশ সাঁতরারাও বলেন, “আমাদের ছেলেদের সঙ্গে বিডিও সাহেব নিজে খেলেছেন। উৎসাহ দিয়েছেন। ফুটবল কিনে দিয়েছেন। ফলে ছেলেরাও খুব খুশি। এখন প্রতিদিনই টিফিনে ছেলেরা বল নিয়ে মাঠে চলে যায়। এতে যেমন শরীরচর্চাও হয় তেমনই দলগত খেলার মাধ্যমে ছেলেদের মধ্যে একটা ঐক্যবোধও তৈরি হচ্ছে। আত্মপর এই সময়ে সেটাও খুব বড় পাওনা।”
নদিয়ার রানাঘাট-বীরনগরের গ্রামে বাড়ি দেবব্রতবাবুর। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়েই সমবয়সীদের নিয়ে গ্রামে একটা ক্লাব তৈরি করেন। ক্লাবের ছেলেরা মিলে চুটিয়ে ফুটবল খেলতেন। বাবা নীরোদ রায় এবং তিন দাদাও নিয়মিত ফুটবল খেলতেন। ছোট থেকেই পড়াশোনার সঙ্গে খেলার প্রতি একটা টান রয়ে গিয়েছে। বীরনগর হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে ভর্তি হয়েছিলেন কল্যাণীর কলেজে। তাঁর দল চ্যাম্পিয়ন হয় কলেজ ফুটবলে। পরে কৃষ্ণনগরে ইংরাজি অনার্স পড়ার সময়েও একই ভাবে ফুটবল টিম নিয়ে সুনাম বাড়িয়েছেন কলেজের। পড়াশোনা, তার ফাঁকেই খেলা চালিয়ে গিয়েছেন যিনি, প্রশাসনিক কর্মজীবনেও ঠিক ফুরসৎ খুঁজে নিয়েছেন ফুটবলের জন্য। খেলাটার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তুমুল আবেগই ধরা পড়ে যখন দেবব্রতবাবু বলেন, “ঘাটালেই বিডিও হিসাবে প্রথম যোগ দিয়েছি। আবার যেখানে পোস্টিং হবে, সেখানেও প্রশাসনিক কাজ সামলে ফুটবলের জন্য একই রকম চেষ্টা চালিয়ে যাব।” |
|
|
|
|
|