সিডনি উইকেটে ভারতীয়েরা যে পরিমাণ গোলাগুলির সম্মুখীন হলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি আগুনে বোলিং ধেয়ে এল ম্যাচ পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে। ভারতীয় কোচের বিরুদ্ধে গরগরে ক্ষোভ। ডানকান ফ্লেচার অপদস্থ হলেন চূড়ান্ত। কিন্তু এক বারও যে মাথা গরম করলেন না আশ্চর্য। সময় সময় তাঁর মতো নামী কোচকে দেখে খারাপই লাগছিল।
|
প্রশ্ন: এমন হতচ্ছাড়া অবস্থা হল কেন? দেখে তো মনে হচ্ছে স্ট্র্যাটেজিতে অস্ট্রেলীয় কোচ আবার আপনাদের হারালেন!
ফ্লেচার: হল, অস্ট্রেলিয়া বোলাররা দারুণ বল করায়। লাইন-লেংথ এরা এত ভাল রেখেছে যে, আমাদের ব্যাটসম্যানরা চাপে পড়ে যায়।
প্র: তার মানে এমনই চলতে থাকবে? এক-একটা টেস্টে বিপক্ষ বোলাররা ভাল বল করে যাবে। আর আমরা একই কাসুন্দি গেয়ে যাব যে, অমুক টিম ভাল বল করে আমাদের চাপে ফেলেছে। পরিষ্কার বলুন, ব্যাটিংটা এমন ঘেঁটে গিয়েছে কেন?
ফ্লেচার: গিয়েছে কারণ, ব্যাটিং ইউনিট এক সঙ্গে ক্লিক করতে পারছে না। ইংল্যান্ডে রাহুল এত ভাল খেলল। এখানে সাময়িক ফর্ম হারিয়েছে। এখানে আবার সচিন খুব ভাল ব্যাট করছে। কিন্তু বাকিরা দাঁড়াতে পারছে না। লক্ষ্মণ রান পাচ্ছে না। তবে আমি নিশ্চিত খুব শিগগির লাকি (লক্ষ্মণ) রান পেয়ে যাবে।
প্র: আর সেটা কবে আসবে ভাবতে ভাবতে আমরা সিরিজটা খুইয়ে ফেলব!
ফ্লেচার: দেখা যাক না, কালকের দিনটা আছে তো! আমাদের বোলাররা যদি ম্যাচে ফেরাতে পারে।
প্র: জুলাই মাস থেকে এই জিনিস শুরু হয়েছে। বিদেশে কেবল বিপর্যয় আর বিপর্যয়।
ফ্লেচার: এতে আতঙ্কিত হয়ে একে-ওকে বাদ দিয়েই বা কী হবে? তাতে কোনও লাভ হয় না। বিদেশি টিমগুলোকে দেখুন না। ওদের ভারতে এসে একই সমস্যা হয়। স্পিন খেলতে পারে না। স্পিনের জালে পড়ে হাঁসফাঁস করে। আমাদের তেমনই বিদেশে গিয়ে সুইং আর সিম খেলার দুর্বলতা।
প্র: চেঞ্জিংরুমের মুড কী রকম? মানে আপনার সংসারে?
ফ্লেচার: ভাল। আমরা ম্যাচে পিছিয়ে গিয়েছি আরও তো দুর্ভাগ্যের কারণে। সচিন যে বলটায় বোল্ড হল, গড়পড়তা দিনে এক্সট্রা কভার দিয়ে সোজা চার হয়। অথচ ব্যাটে লেগে বলটা ঢুকে এল।
প্র: আপনাদের যা অবস্থা, বাকি দুটো টেস্টেও মনে হচ্ছে হারবেন। যা খেলছে তাতেই হারছে!
ফ্লেচার: আমরা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে কথা বলেছি। ছেলেরা কনসেনট্রেট করছে। দেখাই যাক না কী হয়! |
প্র: গৌতম গম্ভীর যেমন মানসিক দিক দিয়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে। অফ স্টাম্পের বাইরে ওঁর এই রোগটা যদি সারাতে না পারেন, তা হলে আপনি কেন আছেন?
ফ্লেচার: (একটুও না চটে) রোগটা যত না টেকনিক্যাল, তার চেয়ে বেশি মানসিক। আমরা ওকে পজিটিভ হতে উৎসাহ দিচ্ছি। নিয়মিত ওর সঙ্গে কথা বলছি। নিশ্চয়ই পরের ইনিংসগুলোয় গম্ভীরকে আরও পজিটিভ দেখব। আর আজ যে ডেলিভারিটায় বেচারি আউট হয়েছে, সেটা ন্যাটা ব্যাটসম্যানের পক্ষে কিছু করা শক্ত। লেগ স্টাম্প থেকে ভেঙেছে বলটা।
প্র: আপনার কি মনে হচ্ছে না সচিনের একশো নিয়ে এত কথাবার্তা ওকে ভয়ঙ্কর চাপে রাখা ছাড়াও টিমের ক্ষতি করছে? টিমের ওপর বাড়তি প্রত্যাশা তৈরি হচ্ছে!
ফ্লেচার: আমার মনে হয় না এটা নিয়ে দলের কেউ কোনও রকম চাপে আছে বলে। সবাই চায় সচিন এই কীর্তিতে দ্রুত পৌঁছাক। সেই অভিযানে সবাই ওর শরিক। তা বলে টিমকে মোটেও ওর এই ব্যক্তিগত লক্ষ্যের দায় বয়ে বেড়াতে হচ্ছে না।
প্র: বোঝা গেল আপনার কাছে উত্তর নেই। বোঝা গেল এ রকম হার চলতেই থাকবে টিমের।
ফ্লেচার: আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে ছেলেরা চিন্তায়-ভাবনায় আরও পজিটিভ থাকে। এই সময়টা থেকে বীরত্বের সঙ্গে বেরিয়ে আসতে পারে।
প্র: জেমস প্যাটিনসন মাত্র চতুর্থ টেস্টেই এত চমৎকার লাইন-লেংথ রেখে বল করতে পারেন। ইশান্ত শর্মা ৪৩ না ৪৪ টেস্টেও ঠিক লাইনে বল করা শিখলেন না। তফাতটা এত বড় মাত্রার কেন?
ফ্লেচার: আপনারা বলছেন বটে। ইশান্ত কিন্তু মেলবোর্নে ভাল বল করেছে। আর প্যাটিনসনের সঙ্গে ওর তুলনা করছেন কেন? প্যাটিনসনের সঙ্গে তুলনা হওয়া উচিত উমেশ যাদবের। উমেশ তো ভাল বল করছে।
প্র: আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে বাকি সিরিজে কী করে ফিরে আসা যায় তা নিয়ে কোনও নকশাই নেই। সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত এবং দিগশূন্য।
ফ্লেচার: ব্যাটিংয়ে পার্টনারশিপ চাই বড়। আমরা পার্টনারশিপ শুরু করছি। কিন্তু সেটা টেনে নিয়ে যেতে পারছি না। মেলবোর্নে যা হল। আজ যা হল। এটা করলে হবে না। সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।
প্র: গ্যারি কার্স্টেনের সময়ে এমন সোনার সময় যাচ্ছিল টিমটার। মধ্যিখানে আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর কী এমন ঘটল যে সব কিছু বিগড়ে গেল?
ফ্লেচার: জানি না। গ্যারির সঙ্গে তো আমার যথেষ্ট বন্ধুত্ব আছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর গ্যারির সঙ্গে আমার দীর্ঘ সময় কথাও হয়েছে। খুঁটিনাটি কী করা যেতে পারে। কী করা উচিত। আমি তো ভেবেই কূল পাচ্ছি না কিছু।
অন্তত আমার তো মনে হয় কোনও কিছুই বদলায়নি। |