|
|
|
|
বিক্ষোভ-লাঠি-অবরোধ মেদিনীপুরে |
এসএসসি-র ফর্ম সংগ্রহ ঘিরে ধুন্ধুমার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সময় শেষ হয়ে গিয়েছে বলে ফেরানো চলবে না, লাইনে দাঁড়ানো সবাইকেই ফর্ম দিতে হবে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষার ফর্ম বিলির প্রথম দিন, মঙ্গলবার এই দাবি ঘিরেই বিক্ষোভে উত্তাল হল মেদিনীপুর। কিন্তু দিনের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গিয়েছে, এই ‘যুক্তি’তে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ফর্ম দিতে রাজি হননি। এতে বিক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশ ও আরআইবি জওয়ানদের। এরই মধ্যে মাওবাদীদের নাম করে কেউ একটা বলে ওঠেন, ‘ওদের হুমকিতে কাজ হত’। ব্যস, আর যায় কোথায়! ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন জওয়ানেরা। শুরু করেন তুমুল লাঠিচার্জ। তাতে তিন বিক্ষোভকারী আহত হন। এর পরেই শুরু হয় অবরোধ। দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলে। যানজটের সৃষ্টি হয়। শহরের পথে বেরোনো মানুষ চরম সমস্যায় পড়েন। ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয়। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত নমনীয় হতে হয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেই। লাইনে দাঁড়িয়েও এ দিন ফর্ম পাননি এমন ১০৭ জনকে ‘কুপন’ দেওয়া হয়। আজ, বুধবার তাঁদেরই প্রথম ফর্ম দেওয়া হবেএই প্রতিশ্রুতির পরেই রাত আটটা নাগাদ অবরোধ ওঠে। |
|
এলআইসি চকে পুলিশের লাঠিচার্জ। |
মঙ্গলবার থেকেই এসএসসি-র ফর্ম দেওয়া শুরু হয়েছে। মেদিনীপুর শহরের এলআইসি চকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি শাখা থেকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে এই ফর্ম বিলি হচ্ছিল। ফর্ম সংগ্রহের জন্য সকাল ৭টা থেকেই ব্যাঙ্কের সামনে হাজির হন চাকরি-প্রার্থীরা। ব্যাঙ্ক খোলার সময় দেখা যায়, ফর্ম সংগ্রহের আঁকাবাঁকা লাইন চলে গিয়েছে অনেক দূর পর্যন্ত। অন্তত হাজার চারেক চাকরি-প্রার্থী তখন লাইনে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ফর্ম দেওয়ার কথা। কিন্তু তার কিছুটা আগেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ একটি দরজা (যে পথে চাকরি-প্রার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল) বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) অমলেন্দু সরকারের অবশ্য বক্তব্য, “ব্যাঙ্কের দরজার ভিতরে তখনই ছিলেন প্রায় একশো জন। তাঁদের ফর্ম দিতেই ঘণ্টাখানেক লেগে যাওয়ার কথা। তাই চারটের কিছুক্ষণ আগে বাইরের দরজা বন্ধ করা হয়।” যদিও বাইরে অপেক্ষারতদের দাবি, ৩টের সময়েই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র নেতা দীপক পাত্রের অভিযোগ, “আড়াইটের পরেই ব্যাঙ্কের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাঁরা সকাল সাতটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের কী অবস্থা হতে পারে ভেবেই দেখলেন না কর্তৃপক্ষ। আবার যদি পর দিন সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও এমনই হয়, তখন কী হবে?” |
|
অবরোধ বিক্ষুব্ধদের। |
এই আশঙ্কা থেকেই লাইনে দাঁড়ানো কয়েক জন সোজা ঢুকে পড়েন ব্যাঙ্কে। বাইরে আরও যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন ফর্মের আশায়, এজিএমের অফিসের সামনে তাঁরাও বিক্ষোভ শুরু করেন। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, তাঁদের কর্মীরাও আবেদনপত্র দেওয়ার জন্য সকাল দশটা থেকে টানা পরিশ্রম করে চলেছেন। ফলে আর সম্ভব নয়। তখন সবাই প্রশ্ন তোলেন, কেন একটিমাত্র কাউন্টার থেকে ফর্ম দেওয়া হচ্ছে। একাধিক কাউন্টার কেন খোলা হল না? ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, অন্য কাজ সমান তালে চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তাই একাধিক কাউন্টার খোলা সম্ভব নয়। অত কর্মী নেই। ব্যাঙ্কের ভিতরে এই নিয়ে বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের বাইরে বের করে দেয়। তার পরেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা চাকরি-প্রার্থীরা ফের ব্যাঙ্কে ঢোকার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে ‘মাওবাদী’ উল্লেখে মন্তব্য। মারমুখী হয়ে ওঠেন আইআরবি জওয়ানেরা। লাঠিচার্জে কয়েক জন জখম হন। শুরু হয় অবরোধ।
আজ, বুধবারও বিক্ষোভের আশঙ্কা রয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এসএসসি-র পক্ষ থেকে ব্যাঙ্কের এই শাখায় মাত্র ৫ হাজার ফর্ম পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে মঙ্গলবারই ৩২০০ ফর্ম দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি যা ফর্ম রয়েছে তাতে বড়জোর বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দেওয়া যাবে। লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম না পেলে ফের বিক্ষোভ হতে পারে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আশঙ্কার কথা পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছেন। এজিএম বলেন, “ফর্ম শেষ হয়ে গেলে তো আমাদের কিছুই করার থাকবে না। তখন এমনিতেই কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাবে।”
|
ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
|
|
|
|
|