সম্পাদকীয় ২...
শক্তিরূপেণ
ত বৎসরটি প্রধানমন্ত্রীর ভাল কাটে নাই। প্রশাসনিক ব্যর্থতার ধারা তাঁহাকে নিশ্চিত পীড়া দিয়াছে। নববর্ষের বার্তায় তিনি বলিয়াছেন, এই দুঃসময় অতিক্রম করিয়া তাঁহার সরকার ঘুরিয়া দাঁড়াইবে। ‘ঘুরিয়া দাঁড়ানো’-র অর্থ কী, তাহার বিশদ ব্যাখ্যা বার্তায় নাই। অনুমান করা চলে, গত বৎসর সরকার যে পথে চলিতে চাহিয়াও ব্যর্থ হইয়াছে, এই বৎসর সেই পথে নূতন উদ্যমে যাত্রা আরম্ভ হইবে। তাহা সংস্কারের পথ। প্রধানমন্ত্রী বার বার দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কারের কথা বলিয়াছেন বটে, কিন্তু ২০১১ সাক্ষী, বাহিরের বাধায় এবং অন্তরের জোরের অভাবে সেই পথে তাঁহার চলা হয় নাই। নূতন বৎসরে হইবে কি? বৎসরের প্রথম দিন একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দিল। অর্থ মন্ত্রক ঘোষণা করিল, অতঃপর ভারতের শেয়ার বাজারে বিদেশি লগ্নিকারীরা সরাসরি বিনিয়োগ করিতে পারিবেন। এক ভাবে দেখিলে, ইহা সামান্য পদক্ষেপ। এত দিন পর্যন্ত মিউচুয়াল ফান্ডে বিদেশি বিনিয়োগ স্বীকৃত ছিল। অর্থ মন্ত্রক যেমন বলিয়াছে, বর্তমান সিদ্ধান্তটি পূর্বের যুক্তিসঙ্গত অগ্রগতি মাত্র। অন্য ভাবে দেখিলে, ইহা ঘুরিয়া দাঁড়াইবার ইঙ্গিত। গত বৎসরের শেষ লগ্নে ভারত বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে এক অলীক কুনাট্যের সাক্ষী থাকিয়াছে। দেশের অর্থনীতির পক্ষে অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও বিরোধিতার ঘোলা জলে তলাইয়া গিয়াছে। বৎসর ঘুরিতেই প্রধানমন্ত্রী ফের বিদেশি বিনিয়োগের প্রসঙ্গটি টানিয়া আনিলেন। ইহা প্রমাণ করিতেই কি যে তিনি ভয় পান নাই? যদি তাহাই হয়, ভারতীয় অর্থনীতির মঙ্গল, ভারতের মঙ্গল। দেশের অভিভাবক যদি ভীত হন, সেই দেশে সুশাসন আসিতে পারে না।
২০১১-পরবর্তী অধ্যায়ে মনমোহন সিংহের পরীক্ষা কঠিনতর। প্রমাণ করিতে হইবে, তিনি সত্যই সাহস হারান নাই। সংস্কারের যে সিদ্ধান্তগুলি বকেয়া পড়িয়া আছে, অবিলম্বে সেইগুলির রূপায়ণে যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। খুচরা বিপণনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, পেনশন ক্ষেত্রে সংস্কার, অসামরিক বিমান পরিবহণে বিদেশি লগ্নি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিশ্চিত ভাবেই কঠিন। তাঁহাকে শ্রম আইন সংস্কারের কথাও ভাবিতে হইবে। কিন্তু, প্রকৃত বাধা বাহিরের নহে, অন্তরের। সাম্প্রতিক কালে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েক বার জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কথা বলিয়াছেন। বোঝা সম্ভব, তিনি সরকারের স্থায়িত্ব লইয়া ভীত। তাঁহাকে ভাবিতে হইবে, তিনি কোন পরিচয়ে ভারতের ইতিহাসে থাকিতে চাহেন সংস্কারের ভগীরথ হিসাবে, নাকি এক ভীরু প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, যিনি কোনও ক্রমে তাঁহার প্রধানমন্ত্রিত্বের দ্বিতীয় দফা শেষ করিয়াছিলেন? যদি দ্বিতীয় পরিচয়টিই তাঁহার কাম্য হয়, তবে তাঁহার বিশেষ কিছু করিবার নাই। কিন্তু, যদি তিনি প্রথম পরিচয়টির প্রত্যাশী হইয়া থাকেন, তবে শরিকদের চাপে নত হইলে চলিবে না। তিনি স্মরণে রাখিতে পারেন, তাঁহার দল এখন যতখানি বিপর্যস্ত, বিরোধী শিবিরের অবস্থা তাহার তুলনায় খুব বেশি উন্নত নহে। ফলে, এখনই সরকার ফেলিবার ঝুঁকি কেহ না নেওয়াই স্বাভাবিক। আর, সংস্কারের পথে হাঁটিলে যদি শেষ পর্যন্ত সরকার পড়িয়াও যায়, জনতার আদালতে অন্তত কেহ তাঁহাকে দোষী সাব্যস্ত করিবে না। ফলে, তাঁহার এখন আর কিছু হারাইবার নাই। গত বৎসরের ভুল, ভীতি গত বৎসরেই পড়িয়া থাকুক নূতন বৎসরে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী রূপটি প্রকাশ হউক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.