কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে যে দলের শীর্ষ নেতা রথযাত্রা করেন, সেই বিজেপি-ই মায়াবতীর দল থেকে দুর্নীতির দায়ে বিতাড়িত দুই প্রাক্তন মন্ত্রীকে দলে নিল।
উত্তরপ্রদেশে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সূর্যপ্রতাপ শাহি এবং বিনয় কাটিয়ারের উপস্থিতিতে আজ বাবুসিংহ কুশওয়াহা এবং বাদশা সিংহ বিজেপিতে যোগ দিলেন। মায়াবতীর ঘনিষ্ঠ এই নেতারা মাস কয়েক আগে পর্যন্ত মন্ত্রীও ছিলেন। তবে হালে দুর্নীতির দায়ে দু’জনকেই বহুজন সমাজ পার্টি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এক জনের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চলছে। অন্য জনের বিরুদ্ধে লোকায়ুক্ত অভিযোগ এনেছে।
এ হেন ব্যক্তিদের দলে নেওয়ায় প্রশ্ন যে উঠবে, তা বিজেপি নেতৃত্বও জানতেন। তাই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার আগেই বিনয় কাটিয়ার সাফাই দেন, বাবুসিংহের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা আসলে মায়াবতীর দুর্নীতি। বাবুসিংহকে মায়াবতী বলির পাঁঠা করেছেন। আর সরকারের দুর্নীতির সঙ্গে বাদশা সিংহের কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর পরিবারের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু যে বিজেপি নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় স্তরে কংগ্রেস ও মনমোহন সরকারের দুর্নীতির প্রচার উচ্চগ্রামে নিয়ে গিয়েছেন, তাঁরা কি উত্তরপ্রদেশে ভোটের দিকে তাকিয়ে দুর্নীতির সঙ্গে আপস করলেন না?
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে কবুল করেছেন, এটি নিতান্তই রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর দুর্গে ফাটল ধরানোর কৌশল হিসাবে তাঁদের ঘনিষ্ঠ নেতাদের পাশে নেওয়া হচ্ছে। গতকালও বিজেপি মায়াবতীর দলের দুই নেতা দদন মিশ্র ও অবধেশ বর্মাকে দলের টিকিট দিয়েছে। তা ছাড়া এই দুই নেতাই অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির নেতা। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি এখন সেই শ্রেণির ভোটের দিকেও তাকিয়ে রয়েছে। ফলে ভোট-রাজনীতির বাধ্যবাধকতার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। কংগ্রেস অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপিকে ছেড়ে কথা বলছে না। উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা অখিলেশ প্রতাপ সিংহ বলেন, “যে বিজেপি মুখে দুর্নীতি নিয়ে এত বড় কথা বলে, আজ তাঁরাই দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের দলে আশ্রয় দিল। মায়াবতী যাঁদের ত্যাজ্য করেছেন, বিজেপি তাঁদের ঠাঁই দিল। দুর্নীতি মোকাবিলায় বিজেপি যে আসলে দ্বিচারিতা করছে, আজ সেটাই বোঝা গেল।”
এ ধরনের সমালোচনার মুখে যে পড়তে হবে, তা আঁচ করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের এক নেতার কথায়, সে কারণেই আজ এই নেতাদের দলে নিয়ে আসার সময় কোনও শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন না। বিনয় কাটিয়ারের মতো নেতাদের দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে। অতীতেও টেলিকম কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সুখরাম যখন বিজেপিতে যোগ দেন, এ ধরনের সমালোচনা হয়েছিল। সেই সময় সংসদ তোলপাড় হওয়ায় সুষমা স্বরাজকে তার সাফাই দিতে হয়। বিরোধীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, “আপনারা সুখরামের সুখ ছিনিয়ে নিয়েছেন। এখন শুধু রাম পড়ে রয়েছে।” বেঙ্কাইয়া নাইডু দলের সভাপতি থাকার সময়ও দলে ডি পি যাদবকে নেওয়ায় একই সমালোচনা হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ এ প্রসঙ্গে আবার বলছে, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেই যে এ দেশে ভোটে জেতা যায় না, তা-ও ঠিক নয়। অতীতে চিনি-কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কল্পনাথ রাই জেলে থেকেও ভোটে জিতেছেন। এখন-ও অনেক নেতাই জেলে থেকে অনায়াসে ভোটে জেতেন। |