জয়চণ্ডী
উৎসবই সার, তৈরি হয়নি পর্যটনকেন্দ্র
র্যটকদের আকর্ষণ করার উদ্দেশে শুরু হয়েছিল জয়চণ্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসব। কিন্তু ওই উৎসব ছ’বছর পার করার পরেও জয়চণ্ডীকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ার কাজ বিশেষ কিছুই এগোয়নি। স্থানীয়দের ক্ষোভ, বছর শেষের অনুষ্ঠানের মধ্যেই উৎসবটি সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে।
রঘুনাথপুর শহরের উপকন্ঠে নন্দুয়াড়াতে জয়চণ্ডী পাহাড়ে পর্যটন কেন্দ্র গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যেই ২০০৬ সালে জয়চণ্ডী পাহাড়কে ঘিরে পর্যটন উৎসব শুরু হয়েছিল। উৎসব কমিটিতে স্থানীয় বাসিন্দারা থাকলেও কমিটির ‘নিয়ন্ত্রণ’ ছিল সিপিএমের হাতেই। টানা পাঁচ বছর উৎসব কমিটির সম্পাদক ছিলেন সিপিএমের রঘুনাথপুর জোনাল কমিটির সদ্য প্রাক্তন সম্পাদক তপন লাহিড়ি। সভাপতি রয়েছেন এলাকার সিপিএমের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া। কমিটির নানা পদে বামপন্থী মনোভাবাপন্নরা ছিলেন। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, সিপিএম রাজ্যের ক্ষমতায় থাকার সময় এই উৎসব কমিটি জয়চণ্ডীর পর্যটনের পরিকাঠামো গঠনের কাজ করতে ব্যর্থ। প্রাপ্তি বলতে, উৎসব প্রাঙ্গণে পরিকল্পনামাফিক পানীয় জলের ব্যবস্থা ও মোরাম রাস্তা। পর্যটন কেন্দ্র গঠনের আর কোনও কাজ চোখে পড়েনি।
কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রোপওয়ে নির্মান, যুব আবাস তৈরি, এলাকায় সবুজায়ন-সহ সার্বিক ভাবে পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ছয় বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়িত হয়নি। বাসুদেববাবুর দাবি, জয়চণ্ডী পাহাড়কে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার কাজ ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সেই লক্ষ্যেই তাঁরা কাজ করছেন। তিনি বলেন, “যুব আবাস নির্মানের কাজ এগিয়েছে। তৎকালীন যুব কল্যণ মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় যুব আবাসের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছিলেন।” বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল। তারপর একটি ইঁটও গাঁথা হয়নি। এছাড়া জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশনটিকে কোচবিহারের রাজবাড়ির আদলে তৈরি করা সহ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জয়চণ্ডী পাহাড়ে পর্যটনের বিকাশ নিয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব তাঁরা দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করতে এসে ঘোষণা করেছিলেন জয়চণ্ডী পাহাড় ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়বেন তাঁরা। কিন্তু নতুন রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত এখানকার পর্যটন পরিকাঠামো গঠনের জন্য কোনও ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করেনি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযোগ উঠছে বাম সরকারের মতোই জয়চণ্ডী পাহাড় কি ‘ব্রাত্য’ থাকছে তৃণমূল সরকারের কাছেও? যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা রঘুনাথপুর পুরসভার দলীয় নেতা বিষ্ণু মেহেতা বলেন, “জয়চণ্ডী পাহাড়ে পর্যটন কেন্দ্র গঠনে আমরা আন্তরিক বলেই স্বনির্ভর গোষ্ঠী মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো পরপর দু’দিন উৎসব প্রাঙ্গণে ঘুরে গেছেন। যুব আবাস নির্মান, এলাকায় শিশু উদ্যান নির্মান, জয়চণ্ডী পাহাড়ের সৌন্দর্যায়নের জন্য আরো বেশি সবুজায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” শান্তিরামবাবু বলেন, “যুব আবাস নির্মানের কাজটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, জয়চণ্ডী পাহাড়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়া হবে। আমরা নির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে তাঁর সাথে কথা বলে এলাকার পর্যটনের বিকাশ করব।”
পুরোনো কমিটিতেও কিছু রদবদল ঘটেছে। এই বছরেই কমিটির সম্পাদক হয়েছেন রঘুনাথপুরের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ‘অরাজনৈতিক’ ব্যক্তি সুকুমার মণ্ডল। তৃণমূল ও সিপিএম নেতৃত্ব জয়চণ্ডীর পর্যটনের বিকাশের জন্য আশ্বাস দেওয়ায় ‘নতুন’ উৎসব কমিটি আশায় বুক বেঁধেছে। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, শুধু উৎসবের দিনগুলি নয়, জয়চণ্ডী পাহাড় ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গঠনের লক্ষ্যে সারা বছর কাজ করবে। সুকুমার মণ্ডল বলেন, “জয়চণ্ডী পাহাড় ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গঠনের জন্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় কাজ করার প্রাথমিক রূপরেখা আমরা তৈরি করছি। উৎসব কমিটির সভাপতি তথা সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া, রাজ্যের স্বনির্ভরগোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দুজনেই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কমিটিতে শান্তিরামবাবুকে বিশেষ পদ দিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে সমন্বয় গড়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.