গোটা সাতেক ডিম আর কেজি চার-পাঁচেক মুসুর ডাল ‘পাচার’ করার অভিযোগ তুলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকাকে ধরে সোমবার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই দুই মহিলাকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার দুবরাজপুর আদালতে হাজির করায়। বিচারক ধৃতদের জামিন মঞ্জুর করেন।
ঘটনাটি কাঁকরতলা থানা এলাকার বড়রা গ্রামের বাউরিপাড়া শিশুবিকাশ কেন্দ্রের। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীটির উপরে মা ও শিশু মিলিয়ে ১০৯ জন নির্ভরশীল। স্থানীয় সূত্রের খবর, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির কর্মী সুচিত্রা শীলের বাড়ি বড়রা গ্রামেই। কেন্দ্রের সহায়িকা নারায়ণী মণ্ডল কাঁকরতলা থানা এলাকারই বাবুইজোড় গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দিনভর কেন্দ্রেই থাকেন। রাতে গ্রামে এক জনের বাড়িতে শুতে যান। সোমবার সকালে গ্রামে একটি রাস্তার কাজ চলছিল বলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা ওই কেন্দ্রের সামনেই উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামবাসী অর্জুন বাউরি, সেনাপতি, বাউরি, লবান বাউরিদের অভিযোগ, “সকাল সাড়ে ৮টা সময় যখন কেন্দ্রে সুচিত্রাদেবী ও নারায়ণীদেবী রয়েছে, তখন নারায়ণীদেবীর ছোট ছেলে কেন্দ্র থেকে একটি থলিতে করে কিছু নিয়ে যাচ্ছিলেন। কৌতূহল বশত আমরা থলিতে কী আছে জানতে চাইলে উনি বলেন, কাপড়। আমাদের সন্দেহ হয়। এক জন তখন থলি খুলে দেখেন, তার ভিতর ডাল আর ডিম রয়েছে। ততক্ষণে অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। পুলিশে খবর দেওয়া হলে তারা এসে ওই দু’জনকে নিয়ে যায়।” গ্রামবাসীদের দাবি, কর্মী ও সহায়িকা ‘যোগসাজশ’ করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন সুচিত্রাদেবী। তাঁর বক্তব্য, “১৯ বছর ধরে এই কেন্দ্রে কাজ করছি। কেউ কোনও দিন এ ধরনের অভিযোগ করেননি। কিন্তু সামান্য একটা ভুলবোঝাবুঝি থেকে স্থানীয় মানুষ আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলেন।” তাঁর দাবি, “সহায়িকার বয়স হয়েছে। সোমবার ছেলেকে নোংরা কাপড় দেওয়ার বদলে ভুল করে মুসুর ডালের থলি দিয়েছিলেন। তাতে ডিম কোনও ভাবেই ছিল না। পরে কেউ থলিতে ডিম ঢুকিয়ে আমাদের বেকায়দায় ফেলেছেন। ভুল করে হলেও আমি আর সহায়িকা ক্ষমা চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ কিছু শুনতেই চাইল না!”
নারায়ণীদেবীও একই দাবি করেছেন। তাঁর ছেলে স্বপনের বক্তব্য, “প্রত্যেক সপ্তাহে মায়ের ছাড়া কাপড় নিয়ে যাই। পরে কাচা কাপড় দিয়ে যাই। ভুল করে ওই থলি আমার হাতে চলে এসেছিল।” অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সুচিত্রাদেবীর স্বামী রতন শীল সিপিএমের বড়রা লোকাল কমিটির সদস্য। তাঁর অবশ্য অভিযোগ, “ষড়যন্ত্র করে আমার স্ত্রীকে ফাঁসিয়েছে তৃণমূল।” একই অভিযোগ লোকাল কমিটির সম্পাদক বিমল ঘোষের। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা মুজিবর রহমানের দাবি, “মা ও শিশুদের খাবার পাচার করার সময় গ্রামবাসীর হাতেই ওঁরা ধরা পড়েছেন। এখানে ষড়যন্ত্রের কিছুই নেই।”
বিডিও বলেন, “আচমকা উভয় পক্ষের মধ্যে ঝামেলা বাধায় কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানিয়েছি।” ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে নলহাটি থানার পুলিশ। রাত পর্যন্ত ঘেরাও ওঠেনি।
|