এ বার জটিলতা নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলে।
পাথর শিল্পাঞ্চলে ক্রাশারে পাথর বোঝাই করা নিয়ে শ্রমিক-মালিক বিরোধে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল নলহাটি ১ ব্লক অফিস চত্বর। ওই জট কাটাতেই তখন চলছিল প্রশাসনিক বৈঠক। মীমাংসাসূত্র বেরনো তো দূর অস্ত, বরং বিরোধের জেরে বৈঠকই কার্যত ভন্ডুল হয়ে যায়। ব্লক অফিসে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেন দু’টি শ্রমিক সংগঠনের সদস্যেরা। রাত পর্যন্ত অফিসে ঘেরাও হয়ে থাকেন বিডিও এবং পাথর মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। আটকে আছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও।
মালিক পক্ষের অভিযোগ, আলোচনা চলাকালীন শ্রমিক সংগঠনের কিছু সদস্য মালিকদের মারধর করেন। এই নিয়ে মালিক পক্ষ নলহাটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। নিরাপত্তার দাবিতে থানায় অবস্থান করছেন মালিক পক্ষের কিছু প্রতিনিধি।
|
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত আইএনটিইউসি-র বীরভূম জেলা নেতা তরুণ ঘোষ এবং ফরওয়ার্ড ব্লক প্রভাবিত টিইউসিসি-র নেতা অরুণ গুপ্তের অভিযোগ, দীর্ঘদিন যাবত দু’টি শ্রমিক সংগঠনের ৩৬০ জন করে মোট ৭২০ জন পাথর বোঝাই শ্রমিক কাজ পাচ্ছেন না। এই নিয়ে একাধিকবার পথ অবরোধ, পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ-সহ নানা আন্দোলন করেও সমাধান হয়নি। তাঁদের বক্তব্য, “শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালের ২৬ জুন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অমিতাভ সেনগুপ্তের উপস্থিতিতে রামপুরহাট প্রশাসনিক ভবনে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। সেখানে লিখিত চুক্তি হয়েছিল যে, ৭২০ জনকে কাজ দেবে মালিক পক্ষ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চালু ক্রাশারগুলিতে কোনও রকম যন্ত্রের সাহায্যে পাথর বোঝাই করা যাবে না।” তরুণবাবুদের দাবি, চুক্তি হওয়ার পরেও তা মানেনি মালিক পক্ষ। প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি।
সেই জট কাটাতেই এ দিন বিকেলে নলহাটি ১ ব্লক অফিসে বিডিও অচিন্ত্য সিংহের উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক চলছিল। ব্লক অফিস চত্বরে তখন ওই দুই শ্রমিক সংগঠনের কয়েকশো সদস্য। ছিলেন মালিক পক্ষের অনেক লোকজনও। সেখানেই দু’পক্ষের বিবাদও বাধে। ভিতরে বিডিও-র বৈঠক চালাকালীন বিবাদের রেশ গিয়ে পড়ে সেখানেও। কয়েক জন খাদান-ক্রাশার মালিককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরেই শ্রমিকেরা ঘেরাও শুরু করেন। আটকে পড়েন সকলে।
নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলের তিনটি মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাই এ দিন বৈঠকে ছিলেন। তাঁদের পক্ষে পিন্টু সিংহ, আনন্দ যাদব, পরেশ দত্তরা বলেন, “ওই দু’টি শ্রমিক সংগঠনের সদস্যেরা এলাকার ১২০টি ক্রাশারে কাজ করেন। সেগুলির মধ্যে ১৬টি ক্রাশার বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। যার জন্য কিছু শ্রমিক কাজ পাচ্ছেন না। তবে ৭২০ জন কাজ পাচ্ছেন না, এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। কর্মহীন শ্রমিকেরা যাতে কাজ পান, সে জন্য আমরা ওই ১৬টি বাদ দিয়ে অন্য কিছু ক্রাশারে তাঁদের ঢোকানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু শ্রমিক পক্ষ তা মানতে চাইছে না। এ দিন আমাদের কয়েক জনকে মারধরও করা হয়েছে। আমরা পুলিশের কাছে নিরাপত্তার দাবি তুলেছি।”
অন্য দিকে, রামপুরহাটের বারমেশিয়া, দিঘলপাহাড়ি, ধরমপাহাড়ি ও বড়পাহাড়ি এলাকার পাথর শিল্পাঞ্চলে দূষণ সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখতে এ দিনই এসেছিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দু’টি দল। ওই সব এলাকার ক্রাশারগুলিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধি মানা হচ্ছে কি না সরেজমিন খতিয়ে দেখে। ওই দলের সঙ্গে রামপুরহাট ১ ব্লক অফিসের কর্মীরা, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীরাও ছিলেন।
বিডিও (রামপুরহাট ১) শান্তিরাম গড়াই বলেন, “এই নিয়ে পাঁচ বার ওই সব এলাকা পরিদর্শন করল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। ইতিমধ্যে ১৫৬টি ক্রাশার পরিদর্শন করা হয়েছে।” বিডিও জানান, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, ক্রাশারের জমি সংক্রান্ত জটিলতা এবং বৈধ ও অবৈধতা সংক্রান্ত যাবতীয় পরীক্ষা করে কাগজপত্র জেলা পর্যায়ের ‘স্ক্রিনিং কমিটি’তে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে ক্রাশার ও পাথর খাদানগুলির বৈধ এবং অবৈধতা এবং দূষণ বিধির প্রয়োজন আছে কি না দেখা হচ্ছে। তাদের নির্দেশে কোন কোন ক্রাশার ও খাদান আইনগত ভাবে চালু থাকবে তা ঠিক করা হবে।
|