মহকুমায় ঘেরা মাঠ মাত্র একটি। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল দশা সেটিরও। ফলে খেলাধুলোর পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামোই নেই কালনায়।
কালনা মহকুমার পাঁচ ব্লকে জনসংখ্যা প্রায় দশ লক্ষ। কালনা শহরে রয়েছে অঘোরনাথ পার্ক নামে একটি স্টেডিয়াম। হাজার পাঁচেক দর্শকাসন বিশিষ্ট এই স্টেডিয়ামই মহকুমার একমাত্র ঘেরা মাঠ। সারা বছর ধরে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, অ্যাথলেটিক্স-সহ নানা প্রতিযোগিতা চলতেই থাকে এই স্টেডিয়ামে। শুধু খেলার আসরই নয়, বইমেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসরও বসে এই স্টেডিয়ামে। অভিযোগ, তৈরির পর থেকে নানা ভাবে ব্যবহার হচ্ছে এই স্টেডিয়াম। কিন্তু সংস্কারের কাজে সে ভাবে হাত দেওয়া হয়নি। বছর চারেক আগে মাটি ফেলে মাঠটিকে উঁচু করার চেষ্টা হলেও খেলোয়াড়দের অভিযোগ, তা খুব একটা কাজে আসেনি। মাঠ অসমান হয়ে পড়ায় খেলতে অসুবিধা হয়। ভারী বৃষ্টি হলে মাঠের নানা জায়গায় জল জমে যায়। ফুটবলের মরসুমে জমা জলেই কয়েকটি খেলা হওয়ার পরে খাটালের চেহারা নেয় স্টেডিয়াম। মাঠের নিকাশি ব্যবস্থাও ভাল নয়। |
এই মাঠেই আয়োজিত হয় ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ। খেলতে আসে মহামেডান স্পোর্টিং, চিরাগ ইউনাইটেড, টালিগঞ্জ অগ্রগামীর মতো কলকাতার নামী দল। প্রতি বারই এই সব দলের তরফে গ্যালারি ও মাঠের মধ্যে বেড়া না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। মাঠ থেকে গ্যালারির দূরত্ব খুব বেশি হলে দশ ফুট। ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের উদ্যোক্তাদের তরফে সুবীর ঘোষ বলেন, “কলকাতার নামী দলগুলি এক বার খেলে যাওয়ার পরে ফের আমন্ত্রণ জানালে মাঠের ফেন্সিং নিয়ে প্রশ্ন তোলে। নিরাপত্তার ব্যাপারে নির্দিষ্ট আশ্বাস না পেলে খেলতে রাজি হয় না।”
গত বার ওই প্রতিযোগিতার ফাইনালে টাইব্রেকার দেখতে বহু মানুষ মাঠে নেমে পড়েন। বিরক্ত হন দু’দলের খেলোয়াড় ও কোচ-কর্মকর্তারা। পুলিশ কোনও রকমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মাঠের পিছনের দিকের অংশে এখনও উঁচু গ্যালারি তৈরি হয়নি। সামনের যে অংশে গ্যালারি রয়েছে সেখানে লোহার রেলিংয়ের নড়বড়ে দশা। মাঠে ভিড় হলে সামান্য চাপেই ওই রেলিং ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী শৌচাগারও নেই মাঠে। নেই মহিলা খেলোয়াড়দের জন্য কোনও আলাদা ড্রেসিংরুম। স্টেডিয়ামের একটি ঘরে ব্যায়ামাগার তৈরি হলেও নেই কোনও প্রশিক্ষক।
সম্প্রতি পঞ্চায়েত যুব ক্রীড়া অভিযানের জেলা পর্যায়ের ফুটবল প্রতিযোগিতায় মাঠে হাজির ছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। মন্ত্রীর কাছে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার তরফে মাঠটির উন্নয়নে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আর্জি জানানো হয়। মদনবাবু বলেন, “এলাকার বিধায়ক মারফৎ মাঠটির আধুনিকীকরণের জন্য আগেই আবেদন জানানো হয়েছে। মহকুমাশাসককে মাঠটির উন্নয়নের ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা দ্রুত দফতরে পাঠাতে বলেছি।” অনুষ্ঠানে ক্রীড়ামন্ত্রী জানান, ‘ফেন্সিং’-এর অসুবিধার জন্য অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন অনুমোদিত খেলা আয়োজনের অনুমোদন পাওয়া মুশকিল।
কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামের ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা জেলাশাসকের দফতর মারফৎ রাজ্য ক্রীড়া দফতরে পাঠানো হয়েছে।” |