নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
সেচের অভাবে বছরখানেক ধরে বারাবনি ব্লকের পানুড়িয়া পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে চাষে অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছেন প্রায় ৬০ জন চাষি। সমস্যার সমাধানে রুনাকুড়া সেচ প্রকল্পটিকে আরও উন্নত করতে উদ্যোগী হয়েছে ব্লক প্রশাসন।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রুনাকুড়া ঘাট সেচ প্রকল্পটি বছর খানেক আগে ডিজেল চালিত পাম্পের সাহায্যে চলত। কিন্তু ডিজেলের খরচ বেড়ে যাওয়ায় একর পিছু জমিতে সেচের জন্য চাষিদের প্রতি মাসে ২০২ টাকা জল কর দিতে হচ্ছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় চাষিদেরও জল কর বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় ব্লক প্রশাসন। এই অবস্থায় আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে চাষিরা ওই সেচ প্রকল্প থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেন। পাশাপাশি ডিজেলচালিত পাম্পটির অশ্বক্ষমতা কম হওয়ায় চাষিদের প্রয়োজনও ঠিকমতো মিটছিল না। মাঝেমধ্যে পাম্পটি খারাপ হয়ে পড়ে থাকছিল।
বারাবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উত্তম চক্রবর্তী জানান, অনেক দিন থেকেই চাষিরা এই সমস্যার সমাধান চাইছিলেন। তিনি বলেন, “আমরাও পরীক্ষা করে দেখেছি, ডিজেলচালিত পাম্পটি দিন দিন অলাভজনক হয়ে পড়ছে। চাষিরা প্রকল্পটিকে বিদ্যুৎচালিত করার দাবি তোলেন। আমরা সেই দাবি কার্যকরী করতে উদ্যোগী হয়েছি।” তিনি আরও জানান, বিদ্যুৎ পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই প্রকল্পের বিদ্যুদ্বয়নের ব্যবস্থা হয়েছে। নতুন করে কিছু পাইপলাইন লাগানো হয়েছে। একটি বিদ্যুৎচালিত মোটর লাগানো হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। পুরো কাজটির জন্য সময় লেগেছে প্রায় এক বছর। তাঁর আশ্বাস, “আরও কিছু কাজ বাকি আছে। তবে দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটি চালু হবে।”
এ দিকে, বছরখানেক ধরে প্রকল্পটি বন্ধ পড়ে থাকায় বিপদে পড়ে গিয়েছেন পানুড়িয়া পঞ্চায়েতের রোসনা, রুনাকুড়া-সহ কয়েকটি গ্রামের চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, সেচের অভাবে এ বছর তাঁরা চাষাবাদ করতে পারেননি। এমনই এক চাষি দুবাই বাউড়ির দাবি, “আমি প্রতি বছর ১২ কুইন্ট্যাল গম চাষ করি। এ বছর একটি দানাও বুনতে পারলাম না। কী করে খাবার জোগাড় করব জানি না।” অপর এক চাষি সুবল বাউড়ির কথায়, “ব্লক অফিস থেকে ধান-গম-সব্জির বীজ পেয়েছি। কিন্তু লাগাতে পারিনি।” চাষিরা জানিয়েছেন, এ বছর তাঁরা আশানুরূপ সব্জি চাষও করতে পারেননি।
চাষিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাওয়া হলে বারাবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উত্তমবাবু দাবি করেন, প্রকল্পটিকে বিদ্যুদ্বয়নের পাশাপাশি ডিজেল পাম্প চালানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। ১৩০ লিটার ডিজেলও দেওয়া হয়। কিন্তু চাষিরা ডিজেলের পাম্প চালাতে চাননি। ফলে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে রয়েছে। বারাবনির বিডিও জুলফিকার আলি হাসান বলেন, “বিদ্যুদ্বয়ন হয়েছে। দ্রুত প্রকল্পটি শুরু করা হবে।” পানুড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ সিংহ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎচালিত পাম্পের সাহায্যে প্রকল্পটি চালু করা হলে কমপক্ষে ২০০ একর জমি চাষ করা যাবে। শতাধিক চাষি এর ফলে উপকৃত হবেন। জলকরও অনেক কমবে।” |