নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
নতুন বছরের শুরু থেকেই পৃথক ট্রাফিক পরিকাঠামো গড়ার কাজ শুরু করে দিল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। এখন থেকে স্থানীয় থানার নিয়ন্ত্রণে নয়, ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে স্বতন্ত্রভাবে। এছাড়া এলাকায় পথ দুর্ঘটনা এড়াতে জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি ট্রাফিক বিধি নিয়ে মানুষকে লাগাতার সচেতন করতে উদ্যোগী হয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ। মঙ্গলবার দুর্গাপুরে বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে এক সচেতনতা মিছিলের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ-সহ পুলিশের অন্যান্য পদাধিকারিরা। এ দিন ট্রাফিক সপ্তাহ পালন অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, “মানুষ সচেতন না হলে দুর্ঘটনার হার কমানো যাবে না। তাই ধারাবাহিকভাবে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ চলবে।”
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেই সড়কের সঙ্গে সংযোগকারী এলাকার অন্যান্য রাস্তাগুলিতেও প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। একই সঙ্গে শিল্পাঞ্চল ও খনি অঞ্চল হওয়ায় এই এলাকায় যানবাহনের সংখ্যাও তুলনামূলক অনেক বেশি। ফলে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ এতদিন এই এলাকায় ট্রাফিক পরিকাঠামো তেমন ছিল না। |
ট্রাফিক সচেতনতা মিছিল দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকায়। নিজস্ব চিত্র। |
গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশকর্মী পাঠিয়ে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হত। গত বছর সেপ্টেম্বরে কমিশনারেট চালু হওয়ার পরেই ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ হয়। সম্প্রতি এই কমিশনারেট এলাকায় এক হাজার ‘সিভিক পুলিশ’ নিয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে চারশো জন শুধু ট্রাফিক সামলানোর কাজ করছেন। তাঁদের সহযোগিতা করছেন একশো জন কনস্টেবল। পুরো কমিশনারেট এলাকাকে ৮টি ভাগে ভাগ করে প্রতিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক এক জন ওসিকে। সঙ্গে থাকছেন ২ জন করে এএসআই। সকলের উপরে থাকছেন ডিসি (ট্রাফিক)।
পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ জানান, ট্রাফিক বিধি নিয়ে সচেতনতা গড়তে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল, আলোচনাচক্র ও অন্যান্য কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। শুধু ট্রাফিক সপ্তাহেই নয়, অন্য সময়ও এমন কর্মসূচি নেওয়া হবে। জাতীয় সড়কের বিভিন্ন সিগন্যাল পোস্ট গাড়ির ধাক্কায় হেলে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে দীর্ঘদিন ধরে তা সারানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। সেই সময়ে সাধারণত যানবাহন চলাচল করে কোনও সিগন্যাল না দেখেই। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়ে যায়। এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।” ট্রাফিক বিধি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুর শাখা। জানুয়ারির শুরুতে ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে প্রতি বছর বিশেষ অনুষ্ঠান করে থাকে সংস্থাটি। তবে এ বার তাদের সাংগঠনিক নির্বাচন সংক্রান্ত কারণে ফেব্রুয়ারির শুরুতে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হবে বলে সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সমীর রায় জানান, এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা এ ভাবে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগে তাঁরা খুশি। এতে দুর্ঘটনার হার অনেকটাই কমবে বলে মনে করেন তাঁরা। তবে যে সমস্ত ‘সিভিক পুলিশ’ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন তাঁরা ততটা দক্ষ নন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। সমীরবাবু বলেন, “প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হলে আমরা সাধ্যমতো সহয়োগিতা করব।” |