পঞ্চায়েত অফিসের সামনে গুলি-বোমায় মৃত্যু হল এক তৃণমূল-কর্মীর। পঞ্চায়েতের তলবি সভা ভেস্তে দিতে ওই হামলা হয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে ইটাহার থানার মারনাই গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনে। পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের অফিসারদের সামনেই কংগ্রেসের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীরা যথেচ্ছ বোমা ও গুলি ছোড়ে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। তবে কংগ্রেস দাবি করেছে, প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে কোন্দলের জেরে তৃণমূলের এক গোষ্ঠী গুলি-বোমা নিয়ে হামলা চালিয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার ইটাহারে নিহতের বাড়িতে যাবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়।
পুলিশ জানায়, বোমায় জখম হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় রিয়াজুদ্দিন আহমেদের (২০)। গুলিবিদ্ধ হন নাজিমুল হক। তাঁকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, দু’জনেই দলের সক্রিয় সদস্য। পরিস্থিতি আঁচ করে তলবি সভা স্থগিত করে দেয় প্রশাসন। হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ইটাহারে প্রায় তিন ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখে তৃণমূল। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “তলবি সভাকে কেন্দ্র করেই হামলার ঘটনা ঘটে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।” |
তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও হামলার জন্য কংগ্রেস-সিপিএম উভয় দলকেই দুষেছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর অভিযোগ, “সিপিএমের সমর্থনে কংগ্রেস ওই গ্রাম পঞ্চায়েত চালাচ্ছে। সম্প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য তৃণমূলের শিবিরে সামিল হয়ে অনাস্থা আনেন। হার নিশ্চিত বুঝেই কংগ্রেস-সিপিএম মিলে তলবি সভা ভেস্তে দিতে হামলা চালিয়েছে। ওই কাজে মালদহের দুষ্কৃতীদেরও কাজে লাগানো হয়।” তিনি জানান, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপারকেই তল্লাশি চালিয়ে হামলাকারীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের বক্তব্য, “কে প্রধান হবেন তা নিয়ে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব ছিল বলে শুনেছি। তার জেরেই হামলার ঘটনাটি ঘটে। যেখানে যথেচ্ছ বোমা পড়ছে, সেখানে আমাদের কেউ থাকলে তিনিও তো জখম হতেন। আমাদের কেউ জড়িত নয়।” তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদক বীরেশ্বর লাহিড়ী জানান, ওই পঞ্চায়েতে তাঁদের তেমন শক্তিই নেই। তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যেরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দুই দলের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়ে। কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরাই হামলা চালায়। পুলিশি তদন্তেই সব স্পষ্ট হবে।”
মারনাই গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৫টি। গত পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস ১০টি, সিপিএম ৪টি ও ১টি তৃণমূলের দখলে যায়। বিধানসভা নির্বাচনের পরে কংগ্রেস প্রধান সাজ্জাদ হোসেন ছাড়া বাকি ৯ জনই তৃণমূলে যোগ দেন। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের একমাত্র সদস্য কংগ্রেসে যোগ দেন। সম্প্রতি তৃণমূলের ৯ জন সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। সেই মতো তলবি সভা ডাকা হয়। উৎসাহীরা পঞ্চায়েত অফিসের সামনের রাস্তায় বেলা ১০টা থেকে ভিড় করেন। তিনটি গাড়িতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য, ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক এবং পুলিশ কর্মীরা পঞ্চায়েত অফিসের কাছাকাছি পৌঁছলে বোমাবাজি শুরু হয়। গুলিও চলে। দু’জন লুটিয়ে পড়েন। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই সময়ে সংখ্যায় কম থাকায় পুলিশ গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছলে দুষ্কৃতীরা পিছু হটে। |