উত্তরপ্রদেশে সাংগঠনিক শক্তি না থাকলেও আসন্ন বিধানসভা ভোটে পা রাখতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলীয় সূত্রের খবর, এই লক্ষ্যেই আগামী ১৮ জানুয়ারি লখনউতে নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধন করতে চলেছে তারা। তবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন লড়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তা হওয়ার পরেই লখনউতে নির্বাচনী কার্যালয় খোলা হবে।”
গত এক মাসে কখনও লোকপাল বিল, কখনও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের মতো একাধিক বিষয় নিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মতপার্থক্যে জড়িয়েছে তৃণমূল শিবির। বিশেষ করে লোকপাল বিল নিয়ে রাজ্যসভায় তৃণমূলের অবস্থান মোটেই ভাল ভাবে নেননি কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রে তৃণমূল-নির্ভরতা কমাতে শরিক দল হিসেবে সমাজবাদী পার্টিকে দেখতে চাইছে কংগ্রেসের একাংশ। এমনকী উত্তরপ্রদেশ আসন্ন নির্বাচনে মুলায়ম সিংহ যাদবের দল সরকার গড়ার জায়গায় এলে তাদের সমর্থন করার পক্ষে একটি মতও রয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে। পরিবর্তে লোকসভায় ইউপিএ সরকারকে সরাসরি সমর্থন দিতে বলা হবে মুলায়মকে। উত্তরপ্রদেশের ভোটের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রে কংগ্রেস যে শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, সে সম্বন্ধে বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের একাংশের বক্তব্য, কংগ্রেসকে বার্তা দিতেই উত্তরপ্রদেশে ভোটে নামার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে তৃণমূল শিবির।
মুকুলবাবু সরাসরি স্বীকার না করলেও গোয়া এবং মণিপুরের মতো উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটেও তৃণমূল যে লড়তে চলেছে, তা স্বীকার করছেন দলের অনেকেই। উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন শুরু হবে ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে। সাত পর্বের ওই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই ওই রাজ্যের একাধিক ছোট-বড় দলের সঙ্গে বৈঠক করে ফেলেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। তবে হিন্দিবলয়ের সবথেকে বড় রাজ্যে তাঁদের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না তাঁরা। দল একা লড়বে না কারও সঙ্গে জোট গড়বে, ক’টি আসনে প্রার্থী দেবে-সহ নানা বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা নির্বাচনী কাযার্লয় খোলার দিনই করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশে ভোটে লড়ার জন্য দলের একাংশের পরিকল্পনা হল, বিভিন্ন ছোট দলের সঙ্গে জোট বাঁধা। ইতিমধ্যেই ওই রাজ্যে বিভিন্ন ছোট দল নিজেদের মধ্যে জোট গড়ে ‘পরিবর্তন মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছে। গত মাসেই ‘পরিবর্তন মঞ্চে’র শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে এক দফা কথা বলেছেন মুকুলবাবু। তবে তৃণমূল একক ভাবে লড়বে না জোট প্রার্থী দেবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া এখনও বাকি। মুকুলবাবু বলেন, “আমরা তো হারার জন্য প্রার্থী দেব না। তাই সব দিক বিবেচনা করেই প্রার্থী দেওয়া হবে। উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই রাজ্যে নির্বাচন লড়া হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
জাতীয় দলের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের এক সাংসদের কথায়, “কংগ্রেস নেতারা বরাবরই বলেন যে, তৃণমূল তাঁদের পরিবারের সদস্য। সেই পরিচিতির খোলস ভেঙে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল এখন নিজের পৃথক পরিচিতি গড়ে তুলতে চাইছে।” বর্তমানে মণিপুরে তৃণমূলের বিধায়ক রয়েছে। ফলে ওই রাজ্যে অধিকাংশ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল শিবির। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উইলফ্রেড ডি’সুজা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেখানেও অনেক আসনে প্রার্থী দিতে চাইছে দল। মুকুলবাবু বলেন, “পঞ্জাবেও যাতে তৃণমূল নির্বাচনে লড়া সম্ভব কি না, তা দলীয় নেতৃত্ব খতিয়ে দেখছেন।” |