রাজনীতির চাপেই
আটকে গেল পেট্রোলের দামবৃদ্ধি
খোদ প্রধানমন্ত্রী বর্ষশেষের বার্তায় পেট্রোপণ্যে ভর্তুকির বহর কমানোর পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তেল সংস্থাগুলোরও যুক্তি ছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম এবং ডলারের তুলনায় টাকার মূল্যের বিচারে পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি প্রায় দু’টাকা হারে বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু ফের সেই রাজনীতির কাছে পরাজয় হল অর্থনৈতিক যুক্তির। ‘রাজনৈতিক ছাড়পত্র’ না মেলায় আজ পেট্রোলের দাম বাড়াতে পারল না তেল সংস্থাগুলো।
পেট্রোলের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত হলেও দাম বাড়ানোর জন্য কার্যত সরকারের ‘অনুমতি’ লাগে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর। এ বার উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন সামনে। এ ছাড়া, সম্প্রতি পেট্রোলের দামবৃদ্ধির পরে তৃণমূল কংগ্রেসের চরম অবস্থানের কথা মাথায় রেখে আজ ফের দাম বাড়ানোয় ‘রাজনৈতিক অনুমোদন’ দেওয়ার ঝুঁকি নেয়নি কংগ্রেস তথা ইউপিএ-সরকার। তেল সংস্থাগুলোর কর্তাদের আশঙ্কা, পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট পর্যন্তই আর পেট্রোলের দাম বাড়ানোর ছাড়পত্র মিলবে না সরকারের কাছ থেকে।
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কাছে অর্থনৈতিক যুক্তি এই ভাবে হার মানায় আজ উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু বলেন, “আমি ধরে নিচ্ছি, তেল সংস্থাগুলোই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ পেট্রোলের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে হয়তো কোনও পরামর্শ ছিল। আশা করি, ভবিষ্যতে পেট্রোলের দাম নির্ধারণে রাজনীতি বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।”
সাধারণত ১৫ দিন অন্তর রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ও ডলারের তুলনায় টাকার দাম দেখে পেট্রোলের মূল্য নির্ধারণ করে। গত দু’বার পেট্রোলের দাম কমানো হয়েছে। কিন্তু ডলারের তুলনায় টাকার দাম অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। তাই অশোধিত তেলের দাম মোটামুটি এক থাকলেও, তা আমদানির খরচ বেড়ে গিয়েছে। এই সব যুক্তি নিয়ে সকাল থেকে সওয়াল শুরু করেছিল পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকও। মন্ত্রকের হিসেবে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডিজেল, কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসে তেল সংস্থাগুলোর ক্ষতির (আন্ডার-রিকভারি) পরিমাণ ৬৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। তাই পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ১ টাকা ৭৮ পয়সা দাম বাড়াতে চাইছিল তেল সংস্থাগুলো। এর সঙ্গে কর যোগ হলে পেট্রোলের দাম বাড়ার পরিমাণ হত ২ টাকার সামান্য বেশি। সোমবার রাত থেকেই পেট্রোলের দাম বাড়ছে ধরে নিয়ে আজ সকাল থেকে গাড়ির মালিকরাও তেলের ট্যাঙ্ক ভর্তি করে ফেলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেল সংস্থাগুলোকে দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্তই নিতে হয়।
আপাতত তেল সংস্থার কর্তারা বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন। সেখানে সবুজ সঙ্কেত না পেলে তিন মাসের জন্য আর পেট্রোলের দাম না বাড়ারই সম্ভাবনা বলে তাঁদের ধারণা। কারণ বিধানসভা নির্বাচনের পরেই আবার বাজেট অধিবেশন শুরু হয়ে যাবে। সে সময়ও অধিবেশন ভণ্ডুল হওয়ার আশঙ্কায় পেট্রোলের দাম বাড়ানোর ঝুঁকি হয়তো নিতে চাইবে না কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে সরকারের আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে অর্থ মন্ত্রক। কৌশিকবাবুও আজ সেই কথাই বলেছেন। তেলের দাম না বাড়ানো প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এখন অশোধিত তেলের দাম ও ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য যেখানে রয়েছে, তাতে হয়তো দাম না বাড়ালেও চলছে। তবে ভবিষ্যতে ইরানের পরিস্থিতির জন্য অশোধিত তেলের দাম বাড়তে পারে। তখন তেলের দাম বাড়াতে হতে পারে।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের এখনও কিছুটা দেরি আছে। তাই আজই তেলের দাম বাড়ানোর সুর্বণ সুযোগ ছিল তেল সংস্থাগুলোর সামনে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন বাদ দিলেও প্রধান শরিক তৃণমূল কংগ্রেসকে আর নতুন করে চটাতে রাজি হয়নি কংগ্রেস। লোকপাল বিল নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে তৃণমূলও আপত্তি তোলায় রাজ্যসভায় নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে সরকারকে। এখনও সে বিষয়েই তৃণমূলকে রাজি করানো যায়নি। পেট্রোলের দাম বাড়ানো নিয়ে এর আগে তৃণমূল যে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছিল, তা মাথায় রেখে আর ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষপাতী নয় সরকার। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, মন্ত্রিসভার বৈঠকে তৃণমূল তথা অন্য শরিকদের মনোভাব দেখে তবেই প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কিন্তু রাজনৈতিক চাপের কাছে সরকারকে বারবার সংস্কারের পথ থেকে যে ভাবে সরে আসতে হচ্ছে, তাতে হতাশা চেপে রাখেননি কৌশিকবাবু।
তিনি বলেন, “আমরা সংস্কারের পথে এগোতে পারছি না। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে অনেক আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু রাজনীতিকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কারণ, সংস্কার করেও জনপ্রিয় হওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই বিধানসভা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা বজায় থাকার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.