১০০ দিন প্রকল্পের গতি বাড়াতে না পারলে কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওয়া ৩ হাজার কোটি টাকা ফেরত চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, দরকারে পঞ্চায়েতে বাড়তি কর্মী নিয়োগ করেও এই কাজে গতি আনতে হবে।”
সোমবার বর্ধমানে জেলার গ্রামীণ প্রকল্পগুলির ‘ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটরিং কমিটি’র বৈঠকের পরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু বলেন, “১০০ দিন প্রকল্পে জাতীয় গড়ের তুলনায় আমরা প্রায় ৪৫ শতাংশ পিছিয়ে পড়েছি। বৈঠকে নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কাজে গতি আনতে না পারলে রাজ্য ৩ হাজার কোটি টাকা হারাবে। বর্ধমান হারাবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।” আগামী ১৭ জানুয়ারি তৃণমূলের পঞ্চায়েতি রাজ সম্মেলনেও সমাধানসূত্র খোঁজা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বৈঠকে পেশ হওয়া তথ্য থেকে পরিষ্কার, বেশির ভাগ জেলাতেই ২০১০ সালের নভেম্বরের তুলনায় গত নভেম্বরে কাজ দেওয়ার গড় কমেছে। যেমন ২০১০-এর নভেম্বরে জলপাইগুড়িতে এই গড় ছিল ২১। এ বার হয়েছে ২০। |
দক্ষিণ দিনাজপুরের ৩০ থেকে কমে ১২। মুর্শিদাবাদে ২৩ থেকে ১৮, নদিয়ায় ২৬ থেকে ১৭, পূর্ব মেদিনীপুরের ২৬ থেকে ২০। পশ্চিমে ২৮ থেকে ১৭। বাঁকুড়ায় ৩৯ থেকে ২২, পুরুলিয়ায় ৩৬ থেকে ২৭। বীরভূমে ২৯ নেমেছে ১৭-য়। উত্তর ২৪ পরগনায় ২২ থেকে ১৮। হাওড়া জেলায় ১৪ থেকে ১২। হুগলিতে ২৩ থেকে ১১। বর্ধমানে ৪১ থেকে ৩০। কোচবিহারে ছিল মোটে ১১, হয়েছে ৯। শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ছিল ১৪, হয়েছে ১২। দার্জিলিং ও পার্বত্য পরিষদের ২৬ থেকে কমে ২৩।
ব্যতিক্রম তিনটি জেলা। উত্তর দিনাজপুরে কাজের দিনের গড় ২২ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৯। মালদহে ২০ থেকে ২২। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বেড়েছে সামান্যই, ১৮ থেকে ১৯। তবে এই বাড়া রাজ্যের গড়ের বিপর্যয় ঠেকাতে পারেনি। বৈঠকেই বর্ধমান-দুর্গাপুরের সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক উল্লেখ করেছেন, ২০১০-এ সালে রাজ্যে এই প্রকল্পে কাজ পাওয়ার গড় ছিল বছরে ২৭ দিন। ২০১১-য় তা কমে হয়েছে মোটে ১৯। সেখানে গত নভেম্বর মাসে গোটা দেশের গড় ছিল প্রায় ৪৫ দিন।
মুকুলবাবুরা আপাতত কাজে গতি আনার ব্যাপারে নানা পন্থা নেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতির জন্য সিপিএম নতুন সরকারকেই দায়ী করছে। সাইদুল হকের কথায়, “এই সরকারের আমলে ছ’মাসের মধ্যে রাজ্য এতটা পিছিয়ে গিয়েছে। দেশের নিরিখে নেমে এসেছে ১৮ বা ১৯ নম্বরে।’’ জেলার ২৭৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বাম পরিচালিত প্রায় ৭০টিতে কাজের পরিবেশ নেই এবং তৃণমূলের বাধায় প্রকল্পের সুপারভাইজাররা কাজ করতে পারছেন না বলেও তিনি অভিযোগ করেন। মুকুলবাবু অবশ্য তা উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেন, “যে সব পঞ্চায়েতের প্রধান, সদস্য ব কর্মচারীরা দুর্নীতিতে জড়িত, তাঁরাই মানুষের সামনা-সামনি হওয়ার ভয়ে দফতরে আসছেন না।”
বৈঠকে সাংসদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা সভাধিপতি ও বিধায়কেরা। আলোচনায় নানা বিচিত্র সমস্যার কথা উঠে আসে। যেমন কালনায় জব কার্ড দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার মানুষকে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কাজ চেয়েছেন মাত্র ১০ হাজার জন। পাণ্ডবেশ্বরে ডাকঘরে জমা থাকা প্রকল্পের টাকা চুরি করে ধরা পড়েন দু’টি পঞ্চায়েতের প্রধান। তাঁদের প্রায় ৪০ দিন জেলেও কাটাতে হয়। কিন্তু তার পরেও তাঁরা প্রধান পদে রয়ে গিয়েছেন। অনেকে অনুযোগ করেন, ধান কাটার মরসুমে লোকে অপেক্ষাকৃত কম মজুরির এই প্রকল্পে কাজ করতে আসছেন না। প্রকল্পের কাজ চালানোর মতো যথেষ্ট কর্মীও পঞ্চায়েতগুলিতে নেই।
সাংসদের দাবি, জেলায় ১০০ দিনের প্রকল্প বাবদ ৭৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে ৬১টি ভুয়ো। ১৮টির তদন্ত চলছে। মাত্র ২০টি ক্ষেত্রে জেলাশাসকের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানানো হয়, জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে ৬১টি মিথ্যা বলে প্রমাণ হয়নি। ৬১টি অভিযোগের ‘নিষ্পত্তি’ হয়েছে। অর্থাৎ হয় পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে অথবা দোষীদের বিরুদ্ধে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। |