|
|
|
|
বেসরকারি হাসপাতালের বিলে বেড়ি পরাতে নতুন নির্দেশ |
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
বেসরকারি হাসপাতালে লাগামছাড়া বিল নিয়ে অভিযোগ বহু দিনের। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ স্বাস্থ্য প্রকল্পের টাকায় চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীরাও অনেকেই এই বিপুল অঙ্কের বিলের শিকার। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার পরে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে জারি করেছেন নয়া নির্দেশনামা।
লাগামছাড়া বিল নিয়ে কী ধরনের অভিযোগ এসেছে? বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগীর ক্যানসার মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। রোগী কোমায় চলে গিয়েছেন। অথচ বাড়ির লোককে সে কথা না জানিয়ে সেই রোগীর ‘ফাংগাল ইনফেকশন’-এর চিকিৎসার নামে প্রতিদিন ৬০ হাজার টাকার ওষুধের বিল ধরিয়েছে হাসপাতাল।
রোগীর জন্য প্রতিদিন ২৫ জোড়া গ্লাভস খরচ হয়েছে বলে বিল করেছে বাইপাসের ধারের অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল। আর একটি হাসপাতালে এক রোগীর জন্য এক সপ্তাহে অ্যান্টিবায়োটিকের বিল করা হয়েছে আড়াই লক্ষ টাকা।
একটি হাসপাতাল বিদেশের এক নামী
হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনার ফি বাবদ ৫৬ হাজার টাকার বিল করেছে। কারা সেই চিকিৎসক? তাঁদের নাম তারা জানাতে পারেনি।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই টাকার জোগান কিন্তু দিয়েছে রাজ্য সরকার। কারণ যে সব রোগীর ক্ষেত্রে ওই বিল করা হয়েছে, তাঁরা সবাই রাজ্য সরকারের হেল্থ স্কিমে চিকিৎসার খরচ পেয়েছেন। এই স্কিমে সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও ৫৪টি বেসরকারি হাসপাতাল প্যানেলভুক্ত রয়েছে। তবে প্যানেলভুক্ত নয় এমন হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও সরকারি কর্মীরা খরচের একটা বড় অংশ সরকার থেকে পেয়ে থাকেন। এক স্বাস্থ্য-কর্তার দাবি, বেসরকারি স্বাস্থ্য বিমার মতো রাজ্য সরকারের হেল্থ স্কিমেও টাকা পাওয়া নিশ্চিত জেনে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ‘অযৌক্তিক’ ভাবে বিল তৈরি করছে। নজরদারির অভাবেই বিভিন্ন সময়ে
স্বাস্থ্য দফতর ওই সব বিল পাশ করেছে বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বিল নিয়ে রোগীর আত্মীয়েরাই প্রশ্ন তোলায়
নড়ে বসেছে দফতর। |
সরকারি কর্মীদের স্বাস্থ্য প্রকল্প |
সাত দফা নির্দেশ |
• প্যাকেজের বাইরে খরচ হলেই জানাতে হবে
• ওষুধের ব্র্যান্ড বদলালেও দামে হেরফের নয়
• পরীক্ষা না করে ওষুধ নয়
• একদিনে ১০ হাজার টাকার বেশি ওষুধ দিলে লিখিত
ব্যাখ্যা
• কেমো-র জন্য দামি ওষুধ দিলে লিখিত ব্যাখ্যা
• চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞদের নাম-ফি জানাতে হবে রোগী
• প্রতি আইভি সেট, গ্লাভস, সিরিঞ্জ নির্দিষ্ট |
|
|
এখন থেকে বেসরকারি হাসপাতালের বিল সরকারের নির্ধারিত প্যাকেজের বাইরে গেলেই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে তার লিখিত ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য
দফতর। ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না-হলে কোনও টাকা মেটানো হবে না। রোগীকে আচমকা দামি ওষুধ দেওয়া শুরু করা হলে,
কিংবা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরীক্ষা করার আগে, অথবা শরীরে দামি যন্ত্র বসানোর আগে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি বা ডিরেক্টরকে তার কারণ লিখিত ভাবে স্বাস্থ্যভবনে জানাতে হবে। আইটিইউ কমিটিতে কোন কোন চিকিৎসক রোগীকে দেখেছেন, এমনকী বিদেশের কোনও হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের নাম ও ফি বিলে আলাদা-আলাদা করে লিখতে হবে।
হেল্থ স্কিমের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “আমরাও তো চিকিৎসক। আমরা বিল যাচাই করে বুঝতেই পারছিলাম, অনেক ক্ষেত্রে অযথা পয়সা নেওয়া হচ্ছে। যে ওষুধ দরকার নেই, তা দেওয়া হয়েছে বলে বিল করা হচ্ছে। রোগী হয়তো কোমা বা ‘ভেজিটেবল স্টেট’-এ চলে গিয়েছেন। অথচ রোগীর আত্মীয়দের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে দিনের পর দিন রোগীকে হাসপাতালে রেখে দিয়ে বিল বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। এটা আর চলবে না।” কয়েক হাজার সরকারি কর্মী এই হেল্থ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত। এঁদের চিকিৎসার নামে বেসরকারি হাসপাতালগুলি যাতে সরকারের থেকে অতিরিক্ত টাকা পকেটস্থ না-করতে পারে, তার জন্যই এই নির্দেশনামা জারি হল বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।
বেসরকারি হাসপাতালগুলি এখন কী করবে?
কয়েকটি হাসপাতাল এখনই জানিয়ে দিয়েছে হেলথ স্কিমে থাকার ব্যাপারে যেহেতু কোনও বাধ্যবাধকতা নেই, তাই নির্দেশনামা অসুবিধাজনক মনে হলে তারা স্কিম থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। নতুন নির্দেশিকা অপছন্দ হলে যে তা মানা হবে না, ইতিমধ্যেই সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে তারা। হাসপাতালগুলির তরফে বলা হচ্ছে, নির্দেশনামা থাকা ভাল।
কিন্তু চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে যদি স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নিতে হয় বা জানাতে হয়, সেটা অসুবিধাজনক। এতে চিকিৎসার দেরিও হতে পারে।
বেসরকারি হাসপাতালগুলো যদি হেলথ স্কিম থেকে বেরিয়ে যায়, তা হলে রাজ্য সরকারের কিছু করার আছে কি?
স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, এমনটা যে হতে পারে তা
তাঁরা ভেবে দেখেননি। |
|
|
|
|
|