নতুন বছরে মেলা, উৎসব
ছোটদের জন্য
ত্যি যে কোথায় শেষ হয় স্বপ্ন যে কোথায় শুরু হয় বলা মুশকিল এই আশ্চর্য মন্ত্রে মাতোয়ারা ছিল কচিকাঁচা-বয়ঃসন্ধির দল, বছরের শেষটায় সদ্য-সমাপ্ত ‘প্রথম কলকাতা আন্তর্জাতিক শিশু কিশোর চলচ্চিত্র উৎসব’-এ। উদ্যোগে ছিল শিশু কিশোর আকাদেমি। কলকাতায় তখন জমকালো শীত, বড়দিনের আনন্দ, পাতাঝরা বিদায়ী দিন। নতুন বছরে সে ভাবেই আবার কমবয়সিদের আনন্দে মাতাতে কলকাতায় শুরু হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-এর ছোটদের ছবির উৎসব: ‘সেলিব্রেটিং ইউরোপিয়ান কালচার উইথ চিলড্রেন অ্যান্ড ইউথ’। উদ্যোগে সিনে সেন্ট্রাল, সঙ্গে নন্দন। তুলোর মতো বরফ আর রঙিন শুকনো পাতা ইউরোপ থেকে উড়িয়ে আনছে এ-উৎসব। সেখানে শাসনের বালাই নেই, বাবা-মা-র চোখ রাঙানি নেই তেমনই একটা ছবি, ফরাসি দেশের ‘ট্রাবল অ্যাট টিমপেলটিল’, দেপারদ্যু অভিনয়ও করেছেন তাতে (সঙ্গের স্থিরচিত্র)।
এমন একগুচ্ছ ছবি নিয়েই উৎসব, ৫-৮ জানুয়ারি, নন্দন-২-এ, রোজ তিনটি করে শো। অন্য দিকে কলকাতার কাছেই সবুজ মাঠে রঙ-বেরঙের তাঁবু। একটিতে স্যান্ড অ্যানিমেশন, একটিতে দুর্গম পর্বত অভিযানের ছবি ও সরঞ্জামের সারি, একটিতে আবার বি আই টি এম-এর বিজ্ঞান প্রদর্শনী। মাঠের চার পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরিবহণ দফতরের সচেতনতা শিবির এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্যাভিলিয়ন ‘শৈশব ও রবীন্দ্রনাথ’। আর এত কিছুর মধ্যে প্রায় পাঁচশো শিশু রঙিন তাঁবুর মধ্যে বসে আপন খেয়ালে এঁকে চলেছে যা-খুশি তাই, এই দিনটা একদম স্বাধীন। সকাল থেকে সন্ধ্যা ছবি এঁকে, প্রদর্শনী দেখে, নিজের হাতে খাবার খেয়ে ওরাও সে দিন ‘স্বনির্ভর’। দিনের শেষে সবার জন্য ঝুলিভর্তি পুরস্কার। আজকের বারাকপুর পত্রিকা আয়োজিত এই শিশুমেলার বয়স ছ’বছর। বারাকপুরে গঙ্গার ধারে গাঁধী মিউজিয়ামে ৮ জানুয়ারি, রবিবার শিশুমেলায় যোগ দেবে পথশিশুরাও। হাত মেলাবে মানসিক প্রতিবন্ধী, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তরা। হোক না বছরে একটা দিন। তবু একটা বছরের রেশ নিয়ে পরের বছরের প্রতীক্ষা যদি থাকে, সেটাই এই শিশুমেলার সার্থকতা।

এসেছে ফিরিয়া
ডবল-ক্রাউন ষোলো পেজি আকারের ২৪ পৃষ্ঠার কাগজ। হেডপিসে চাবুক প্রহাররত এক ‘বীর’পুরুষের ছবি, সবুজ কালিতে। এই ছিল শনিবারের চিঠি-র প্রথম দর্শন। রবীন্দ্রনাথ মৈত্র লিখেছিলেন, ‘প্রথমে সপ্তাহে সপ্তাহে, তাহার পরে মাসের পর মাস এই ক্ষুৎপীড়িত বঙ্গদেশে শনিবারের চিঠি রসের জোগান দিয়া চলিয়াছে।’ সেই ঐতিহাসিক পত্রিকাটি সেই ধারাবাহিকতাতেই এ বার নবরূপে। সম্পাদক সাগর মিত্র। পঞ্চাশ বর্ষের এই প্রথম সংখ্যায় থাকছে পুরনো লেখার সঙ্গে বহু নতুন লেখা, সাক্ষাৎকার। বজায় রাখা হচ্ছে পুরনো বিখ্যাত প্রচ্ছদটিই। সম্পাদক জানিয়েছেন, ত্রৈমাসিক পত্রিকাটির প্রতি সংখ্যাতেই থাকবে সেই বিখ্যাত বিভাগ, ‘সংবাদ-সাহিত্য’। প্রথম সংখ্যার প্রকাশ ৯ জানুয়ারি।

হাতেখড়ি
নতুন বছরে এক নবীন নাট্যদলের আত্মপ্রকাশ হতে চলেছে। তাঁরা তাঁদের দলের নাম রেখেছেন ‘হাতেখড়ি’। প্রথম প্রযোজনা ‘ইটসিবিটসি’। নাট্যকার চিরঞ্জীব বসু। অভিনয়ে গৌতম হালদার (সঙ্গের ছবি) সহ আরও কুশীলব। নির্দেশনায় নবীন পরিচালক দেবাশিস ঘোষদস্তিদার। যাঁর আলো ছাড়া মঞ্চের অবধি মনখারাপ হয় সেই জয় সেন আছেন, আর মঞ্চ পরিকল্পনায় আছেন গ্রুপ থিয়েটারের আদি অকৃত্রিম বন্ধু হিরণ মিত্র, আবহে ‘ভূমি’-পিতা সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বস্তুত নাটকে তাঁর এই প্রথম সুর দেওয়া। এটি আদ্যোপান্ত একটি রাজনৈতিক নাটক। আমরা-ওরা-র বাইরে এক তৃতীয় কণ্ঠস্বরের নাটক, যার মহলা শুরু হয়েছিল অগস্ট থেকে। জানুয়ারি মাসের সপ্তম দিবসে অ্যাকাডেমিতে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় ইটসিবিটসি-র প্রথম পর্দা উন্মোচন। হাতেখড়ি-র হাত আর খড়ি দীর্ঘদিন একসঙ্গে অক্ষুণ্ণ থাকুক।

সুতানুটি বইমেলা
স্বভাবে স্বতন্ত্র সুতানুটি বইমেলা মেতে উঠবে তার অষ্টম বর্ষপূর্তি উৎসব যাপনে, ৬-১৫ জানুয়ারি প্রতিদিন ৩-৯টা। নিছক বইকেন্দ্রিকতার গণ্ডী পেরিয়ে ইতিমধ্যেই এ-বইমেলা নিজেকে বিস্তার করেছে সংস্কৃতি চর্চার নানা ক্ষেত্রে। যেমন একদা পথপ্রদর্শক যে সব ব্যক্তিত্ব বা প্রতিষ্ঠান কালের অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছেন তাঁদের তুলে আনা এ-বইমেলার অন্যতম প্রধান কাজ। পুরনো আস্তানা ছেড়ে এ বারে বড় পরিসরে, রাজবল্লভপাড়ার জগৎ মুখার্জি পার্কে মেলা। বিনোদিনী দাসী উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী স্বামী বিবেকানন্দ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-এর জন্ম-সার্ধশতবর্ষ, আর কমল দাশগুপ্ত হেমাঙ্গ বিশ্বাস রানী চন্দ-এর জন্ম-শতবর্ষ উপলক্ষে আলোচনা বিতর্ক আর সংগীতময় অনুষ্ঠানের বিবিধ আয়োজন অশোককুমার সরকার স্মৃতি প্রাঙ্গণে।

দুই ভাই
ভারতীয় সিনেমার চার্লি চ্যাপলিন ছিলেন তিনি, এ দেশের তো বটেই তামাম দুনিয়ার আমজনতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন। রুশ ভাষায় ডাব করে দেখানো হত তাঁর ছবি, একদা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সোভিয়েত-শাসিত পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে। বলিউড ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম কর্ণধার ও একাধারে অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজক-কাহিনিকার রাজ কপূরকে নিয়ে ছবি করেছেন সিদ্ধার্থ কাক (রাজ কপূর)। আর সুরেশ শর্মা ছবি করেছেন শাম্মি কপূরকে নিয়ে, তারকা হিসেবে বলিউডের অন্যতম বাদশা ছিলেন যিনি। তাঁর অভিনয় নিয়ে আমির খান রণবীর কপূর প্রমুখ কথা বলেছেন এই দ্য কিং অব রোমান্স: আ রেবেল শাম্মি কপূর ছবিটিতে। ফিল্মস ডিভিশন-এর এই দু’টি ছবিই দেখানো হবে নন্দন-২-এ, ৪ জানুয়ারি সন্ধে ৬টায়: ‘ব্রাদার্স অব বলিউড’। অন্য দিকে আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাব-এর উদ্যোগে ৩ জানুয়ারি সন্ধে সাড়ে ছ’টায় গোর্কি সদনে দেখানো হবে দু’টি ছবি। অনাবাসী ভারতীয় অনিরুদ্ধ সান্যালের ডিসকানেক্টেড জিনিয়াস দ্বারকানাথ অ্যান্ড রবীন্দ্রনাথ এবং পাকিস্তানের জিয়া মহিউদ্দিন-এর ’৮৩-তে তোলা দুর্লভ ছবি সত্যজিৎ রায়ের সাক্ষাৎকার। ৪-৫-৬-এ ওখানেই একই সময়ে দেখা যাবে মধ্যবর্তিনী, তখন তেইশ, নটবর নট আউট

প্রয়াণ
১৯৪৫। দুর্ভিক্ষের জন্য চাঁদা তুলতে ‘ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ’-এর (আই পি টি এ) অনেক শিল্পী গুজরাত, মহারাষ্ট্রে গেলেন। তাঁদের মধ্যে দেবব্রত বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, বিজন ভট্টাচার্য প্রমুখ ছিলেন। বাংলা থেকে যাওয়া আই পি টি এ-র নাটক আর গানের এই দলের নাম ছিল ‘বেঙ্গল স্কোয়াড’। এর নেতৃত্বে ছিলেন সত্যজীবন ভট্টাচার্য (জন্ম ১৯২০)। এর আগে ঐতিহাসিক ‘নবান্ন’ নাটকে প্রথম অভিনয়ের সন্ধ্যা থেকেই একাধিক ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। আই পি টি এ-তে থাকাকালীন ‘জবানবন্দি’, ‘মুক্তধারা’ নাটকেও অংশ নেন। ‘বহুরূপী’-র হয়ে শম্ভু মিত্রের পরিচালনায় ‘নবান্ন’ ছাড়াও ‘ছেঁড়া তার’, ‘মুক্তধারা’-য় অভিনয় করেন। গুয়াহাটিতে এসে অসম আই পি টি এ-এর সঙ্গে যোগ দেন। ‘বিসর্জন’-এ জয়সিংহ, ‘মুক্তধারা’-য় অভিজিৎ, ‘রক্তকরবী’-তে বিশুপাগলের অভিনয় ছাড়া ‘যুবতীর্থ’ নাট্যদলের পরিচালক হয়ে ‘দুই মহল’, ‘রক্তকরবী’ ইত্যাদি নাটক করেন। শেষ দিন পর্যন্ত গান ও আবৃত্তি ছিল সদ্য প্রয়াত মানুষটির সঙ্গী।

সযত্ন উদ্যোগ
রবীন্দ্র-রচনার চিত্রণ শুরু হয়েছিল হরিশ্চন্দ্র হালদার বা হ চ হ-র হাতে। বালক পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ কবিতার সঙ্গে প্রকাশিত সেই অলংকরণেই যাত্রা শুরু। তার পরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (সঙ্গে তাঁর একটি অলংকরণ), নন্দলাল বসু, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অসিতকুমার হালদার, সুকুমার রায়, দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈল চক্রবর্তী, পূর্ণেন্দু পত্রী একের পরে এক উজ্জ্বল নাম। বিষয়টি নিয়ে প্রথম একটি সচিত্র গ্রন্থ রচনা করেন অভীককুমার দে (রবীন্দ্রসৃষ্টির অলংকরণ)। তার পরে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় অর্চি মিত্রের সংকলন ও সম্পাদনায় (রবীন্দ্রনাথের লেখার ছবি)। এ বার ২৯৫ পৃষ্ঠা জুড়ে আর্ট পেপারে এই অলংকরণ সংকলন করল ‘পরিকথা’র সাম্প্রতিক সংখ্যা (সম্পাদক দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়)। বাবুল দে ও সম্পাদকের ভাবনায় সযত্নে মুদ্রিত অলংকরণগুলি, আছে শিল্পী পরিচিতিও। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন সুশোভন অধিকারী। সঙ্গে কক্বরক্ ভাষায় গীতাঞ্জলি-র অনুবাদ করেছেন চন্দ্রকান্ত মুড়া সিংহ। এই উদ্যোগ অভিনব বইকী!

‘আপনাদের সেবায়’
ইহুদি মেনুহিন তাঁকে একদা বলেছিলেন, ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পী’। কিন্তু খ্যাতিমানদের চেয়ে সাধারণ মানুষের প্রশংসারই তিনি গুরুত্ব দিতেন বেশি। সঙ্গীতের দীক্ষিত শ্রোতার কাছে নিবেদিতপ্রাণ সেই মানুষটির আত্মজীবনীর নাম তাই যথার্থ ভাবেই, আপনাদের সেবায়। ১৯২২-এ কুমিল্লার শিবপুর গ্রামে জন্ম উস্তাদ আলি আকবর খানের। বাবার কাছে প্রথমে শিখতেন কণ্ঠসঙ্গীত আর কাকা ফকির আফতাবউদ্দিনের কাছে পারকাশন। বাবা উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের ঘরানা ছিল মাইহার। আর উত্তর ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের সেই ঘরানাকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আলি আকবর। তাঁর জন্মের ৯০ বছরে অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রন্থিত তাঁর আত্মজীবনীটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ আজ, সাড়ে ছ’টায় প্রকাশক থীমা-র ঘরে, আশীষ খানের হাতে। চলচ্চিত্র-সঙ্গীতে আলি আকবরের অবদান নিয়ে বলবেন অতনু চক্রবর্তী।

আলোকচিত্র দিবস
২ জানুয়ারি ১৮৫৬। কলকাতার টাউন হলে প্রতিষ্ঠিত হল ‘ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বেঙ্গল’। সম্পাদক রাজেন্দ্রলাল মিত্র। এর আগে-পরে বহু ধারায় এগিয়েছে বাঙালির ফোটোগ্রাফি চর্চা। কিন্তু সিদ্ধার্থ ঘোষের পরে সে বিষয়ে কোনও ধারাবাহিক গভীর চর্চার ফসল দেখা যায়নি। সুখের কথা, ‘ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বেঙ্গল’-এর প্রতিষ্ঠাদিবসকেই ‘বেঙ্গল ফোটোগ্রাফি ডে’ হিসেবে পালন করে ‘বই-চিত্র’। এ বারও সেখানে (কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের তিন তলায়) এই উপলক্ষে আলোচনা ও প্রদর্শনীর আয়োজন। আজ পাঁচটায় আলোচনায় থাকবেন অলোক রায়, আহমেদ আলি এবং মালা মুখোপাধ্যায়। শুরু হবে হিরণকুমার সান্যালের তোলা ছবির প্রদর্শনী (সঙ্গে তারই একটি)। ১০ থেকে আহমেদ আলি, অরুণ গঙ্গোপাধ্যায় ও মালা মুখোপাধ্যায়, আর ১৭ থেকে আটজন সাম্প্রতিক শিল্পীর ছবির প্রদর্শনী।

পুতুলনাটক
শিল্পী রঘুনাথ গোস্বামী লোকশিল্পের নানা আঙ্গিকে কতটা উৎসাহী ছিলেন, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে রক্ষিত তাঁর বিপুল সংগ্রহ দেখলেই সে কথা অনুমান করা যায়। ১৯৬১-তে আর গোস্বামী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস তৈরি করার পরই শুরু হয় তাঁর পুতুল নিয়ে গবেষণা ও সংগ্রহের কাজ। পুতুল নাটকের একটি দলও তৈরি করেন তিনি। প্যারিসের ভারত-উৎসবে ছিল তাঁর পরিকল্পিত পুতুলনাটক। ভারতীয় জাদুঘরে এ বার তাঁর সেই অবদান ফিরে দেখার আয়োজন। ৬-১২ জানুয়ারি আশুতোষ শতবার্ষিকী হল-এ ওঁর সংগ্রহ নিয়ে ‘পাপেটস’ শীর্ষক প্রদর্শনী (১১-৪, সোমবার বাদে), শুক্রবার সকাল ১১টায় উদ্বোধন করবেন শুভাপ্রসন্ন। ৬-৮ জানুয়ারি জাদুঘর প্রাঙ্গণে অমর নস্কর দেখাবেন রড ও স্ট্রিং পাপেট, ১০-১২ রামপদ দেখাবেন গ্লোভ পাপেট। জাদুঘরের এ মাসের দ্রষ্টব্যেও থাকছে রঘুনাথবাবুর সংগ্রহের ৬টি পুতুল।

অন্তরঙ্গ
বয়সে নবীন। ছিলেন নিউ ইয়র্ক-এ। বানিয়েছেন পুরস্কারজয়ী তথ্যচিত্র। ফিচার ছবি করেছেন আগেও। তৈরি করেছেন বাংলায় প্রথম ‘সেক্স কমেডি’। নিজে সিনেমার দক্ষ সম্পাদকও বটে। ‘বং কানেকশন’ বা ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’-র মতো ছবি তাঁরই সম্পাদনায় উজ্জ্বল। অতঃপর, মৈনাক ভৌমিক তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘বেডরুম’ নিয়ে জনতার দরবারে হাজির। শয্যাকক্ষ যে ছবির শীর্ষনাম, তা নিয়ে নানাবিধ কৌতূহল স্বাভাবিক। মৈনাক হাসছেন। ‘প্রথম ছবি ‘আমরা’য় আমি নতুন প্রজন্মের কথাগুলো এনেছিলাম, সে দিক থেকে ‘বেডরুম’ একটু আলাদা। বলতে পারেন, চরিত্রগুলোর মধ্যে ঢুকতে চেয়েছি আমি, তাদের এক্সপ্লোর করতে চেয়েছি।’ সুতরাং, ‘বেডরুম’ শোনামাত্র যদি খুল্লামখুল্লা নিষিদ্ধ স্বপ্নের তৃষ্ণা জাগে, হতাশ হওয়াই নিয়তি। ‘বেডরুম’ হল সেই পরিসর যেখানে ধরা থাকে ব্যক্তির গভীর, সব চেয়ে অন্তরঙ্গ পরিচয়। আড়াল সরিয়ে সেই সব মুখই দেখতে চান মৈনাক, ‘সেই অর্থে এই ছবি একটা উপন্যাসের মতো।’ শেষ প্রশ্নটি ছিল, নিজে দক্ষ সম্পাদক, কিন্তু নিজের ছবির সম্পাদনায় অন্য জন কেন? ‘কারণটা সহজ। নিজে দেখলে নানা রকম পিছুটান কাজ করে, অবজেক্টিভ ধাঁচে গোটা জিনিসটাকে দেখাটা সম্ভব হয় না, তাই অন্য চোখে দায়িত্ব সমর্পণ।’ মৈনাকের উত্তর। নিঃসন্দেহে, তাঁর উপস্থিতির মতোই ঝকঝকে।

মুক্তমতি
নব্বই বছর বয়সে (২০০৭) এক সাক্ষাৎকারে ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘...বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদকে কী ভাবে দেখতে হয়, ওঁর কাছেই শিখলাম। তা ছাড়া কৃষকদের ভূমিকা সম্পর্কে বুঝতে শিখলাম। আর শিখলাম, বই লিখতে গেলে প্রাইমারি সোর্স-এর গুরুত্ব।’ নরহরি কবিরাজ সর্বার্থেই ছিলেন মুক্তমতি মার্কসবাদী। ১৯৪৭-এ অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়ে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ ছেড়ে কলকাতায় এসে যোগ দেন মুরলীধর গার্লস কলেজে। ১৯৭৭-এ সেখান থেকেই অবসর। পড়াতেন ইতিহাস। সুশোভন সরকারের প্রত্যক্ষ প্রভাবে বাংলার নবজাগরণ বিষয়ক চর্চা শুরু। উনিশ শতকের আলোচনায় মার্কসবাদী বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম পথিকৃৎ। হয়তো সে জন্যই আমৃত্যু ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য থেকেও, প্রগতি লেখক সংঘ-শান্তি আন্দোলন-পার্টিশিক্ষা প্রভৃতি শাখায় নেতৃত্ব দিয়েও নরহরি কবিরাজ অন্ধ ভাবে পার্টি লাইন মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন না। ’৪২-এর আন্দোলন, গাঁধী বিষয়ক আলোচনায় যেমন, তেমনই ১৯৪৮-এর রণদিভে-নির্দেশিত অতিবাম সংকীর্ণতাবাদী লাইনের বিরোধিতায় তিনি ছিলেন স্বাধীন চিন্তায় আস্থাশীল। পার্টির বিভাজন এড়াতে যাঁরা তৃতীয় এক সমন্বয়কারী তাত্ত্বিক অবস্থান নেন, তাঁদের শেষতম জীবিত ব্যক্তি ছিলেন নরহরিবাবু। ১৯৬৫-তে শুরু করেন তাত্ত্বিক পত্রিকা ‘মূল্যায়ন’, ইংরেজিতে ‘প্রবলেমস অব ন্যাশনাল লিবারেশন’ (সত্যেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের সঙ্গে যৌথ ভাবে)। ১৯৪৬-এ প্রথম প্রকাশিত বই: মধ্যবিত্ত কোন পথে। পরে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা, গাঁধী অ্যান্ড নেহরু থ্রু মার্কসিস্ট আইজ, সান্তাল ভিলেজ কমিউনিটি অ্যান্ড সান্তাল রেবেলিয়ন অব ১৮৫৫, আ পিজ্যান্ট আপরাইজিং ইন বেঙ্গল: ১৭৮৩, সহ নানা বই। বহু প্রবন্ধ ছড়িয়ে আছে পত্রপত্রিকায়। মস্তিষ্ক সক্রিয় ছিল প্রায় শেষ দিন অবধি। চলে গেলেন হঠাৎই।
   


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.