গাঁধীজিকে সামনে রেখে পুর-কর্তৃপক্ষের খাটাল উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নামতে চলেছেন শিলিগুড়ির খাটাল মালিকেরা! শনিবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁরা পুরসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আগামী ৩ জানুয়ারি পুর-কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন তাঁরা। তাতে কাজ না হলে গরু-মোষ নিয়ে পুরসভায় গিয়ে ধর্নায় বসবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
খাটাল মালিকদের ওই আপত্তিকে অবশ্য আমল দিতে নারাজ পুর-কর্তৃপক্ষ। তবে খাটাল মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় যে তাঁরা রাজি, সে কথাও জানিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত’র বক্তব্য, “শিলিগুড়িকে বাঁচাতে শহর থেকে খাটাল সরাতেই হবে। খাটালের জেরে দূষণ হচ্ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মশা-মাছির উপদ্রব।” তাঁর মতে, “ভাল কিছু করার ক্ষেত্রে বাধা এলে তা কাটিয়েই ওই কাজ করতে হবে।” পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, খাটাল উচ্ছেদের পাশাপাশি মহানন্দা বাঁচাতেও সব রকম পদক্ষেপ করা হবে।
খাটাল মালিকদের সংগঠনের আবার দাবি, খাটালের জন্য শহরে দূষণ হচ্ছে, মহানন্দা দূষিত হচ্ছে-এ কথা ঠিক নয়। মহানন্দার চরে শৌচকার্য করেন অনেকে। শুধু মহানন্দার চর নয়, শহরের অনেক জায়গাই এ ভাবে নোংরা হচ্ছে। পুর-কর্তৃপক্ষ তা বন্ধ করতে পারছেন না। শহরের সমস্ত নর্দমার নোংরা জল মহানন্দায় পড়ছে। সেই দূষণ ঠেকাতেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বদলে খাটাল থেকে দূষণ ছড়ানোর যে কথা বলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন খাটাল মালিক সংগঠনের সভাপতি রাজেশ যাদব। তাঁর দাবি, “শহরের প্রায় তিনশো খাটাল মালিকের রুজিরুটি জড়িয়ে। খাটাল উচ্ছেদ হলে শহরের মধ্যেই তাদের পুনর্বাসন দিতে হবে।” তাঁদের দাবি-আন্দোলনের সপক্ষে রাজেশবাবুরা ‘ঢাল’ করেছেন গাঁধীজিকেও। সভাপতি বলেন, “গাঁধীজি গরুকে পুজা করার কথা বলেছেন। সেই গরুকে শহর থেকে দূর করার কথা বলছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। আমরা খাটাল উচ্ছেদের বিরোধিতা করছি। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহর আমরাও চাই। খাটাল-চত্বর পরিষ্কার রাখার কথা বলা হলে আমরা তা মানব। উচ্ছেদ মানব না।” তাঁর হুমকি, “তেমন হলে গরু-মোষ নিয়ে পুরসভায় গিয়ে লাগাতার ধর্নায় বসব।” গত শুক্রবার কংগ্রেস-তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে খাটাল উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন বামেরাও। তাঁদের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ করে খাটাল কোথায় সরানো হবে, পুনর্বাসনের কী ব্যবস্থা হবেসে সব বিস্তারিত না জানিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টা হলে বাধাদানের ঘোষণাও করেছেন তাঁরা। |