বিদ্যুৎচালিত নয়। হস্তচালিত তাঁত। কুটির শিল্পের আওতাভুক্ত। অথচ প্রতি মাসে এই তাঁতশিল্পীদের বাণিজ্যিক দরে বিদ্যুতের বিল মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ জমা পড়ল বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের কাছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎমন্ত্রীও তাঁর দফতরের অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন, কোথাও নিয়ম ভাঙা হচ্ছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে। যন্ত্রচালিত না-হওয়ায় তাঁত চালাতে দিনের বেলা বিদ্যুৎ লাগে না। তবে নিজেদের বাড়িতেই কাজের চাপে তাঁতিরা বিকেলের পরে ঘণ্টা দুই-তিনেক টিউবলাইট জ্বেলে তাঁত চালান। দিনে ১০০ টাকাও রোজগার হয় না এই তাঁতিদের। অথচ তাঁদের কাছ থেকে বাণিজ্যিক দরে ইউনিট প্রতি দেড় থেকে দু’টাকা বেশি হারে মাসুল নিচ্ছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। বাণিজ্যিক মাসুলের বদলে এই তাঁতশিল্পীদের কাছ থেকে অ-বাণিজ্যিক হারে মাসুল নেওয়ার দাবি তুলে বিদ্যুৎমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন শান্তিপুরের কংগ্রেস বিধায়ক অজয় দে। তাঁর অভিযোগ, “এই তাঁতিরা কুটির শিল্পের আওতাভুক্ত। এঁদের তাঁত চালাতে বিদ্যুৎও লাগে না। তা হলে এঁদের কাছ থেকে কেন বাণিজ্যিক দরে বিদ্যুৎ নেওয়া হবে? বাম আমলে বহু বার বিষয়টি জানানো হলেও সুফল মেলেনি।”
অজয়বাবুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মণীশবাবু বলেন, “যে বাড়িতে বসবাস হচ্ছে, সেখানেই হস্তচালিত তাঁত চললে বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ মাসুল নেওয়া উচিত নয়। গৃহস্থ বাড়ির সমহারেই সেখান থেকে মাসুল আদায় হওয়ার কথা। তবু কোথায় কোথায় নিয়ম অমান্য হচ্ছে, তা দেখতে বলা হয়েছে।”
বিদ্যুৎমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে ২০০৯-এর জনগণনার উল্লেখ করে অজয়বাবু লিখেছেন, বিভিন্ন জেলায় প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ হস্তচালিত তাঁতশিল্পী আছেন। তাঁতশিল্প-খ্যাত নদিয়ার শান্তিপুর, ফুলিয়া, নবদ্বীপেই রয়েছেন প্রায় তিন লক্ষ তাঁতি। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের বক্তব্য, যে বাড়িতে হস্তচালিত তাঁত চলে, সেই বাড়ির বিদ্যুৎ বিলে লেখা থাকার কথা ‘উইদাউট পাওয়ার লুম কানেকশন’। কিন্তু ফুলিয়ার তাঁতি নির্মল বসাকের অভিযোগ, “যে বিল পাঠানো হয়, তাতে লেখা থাকে ‘কমার্সিয়াল-২’। ‘ডোমেস্টিকে’র থেকেও ইউনিট পিছু দেড় থেকে দু’টাকা বেশি নেওয়া হয় আমাদের কাছে। আগে গৃহস্থ বাড়ির সমহারেই বিদ্যুৎ মাসুল দিতাম। বছর পাঁচেক বিনা নোটিসে বাণিজ্যিক হারে মাসুল নেওয়া হচ্ছে আমাদের কাছ থেকে।” ফুলিয়ার আর এক তাঁতশিল্পী শান্তনু বসাকেরও একই অভিযোগ, “তাঁত বিদ্যুতে চললে এই মাসুল নিতে পারত বিদ্যুৎ দফতর। কিন্তু সারা দিন তো বিদ্যুৎ লাগেই না তাঁতের কাজে। বিকেলের দিকে ঘণ্টা দুয়েক টিউব জ্বেলে কাজ করি। তার জন্য গোটা বাড়িকে কেন বাণিজ্যিক মাসুলের আওতায় আনা হচ্ছে?” কুটির শিল্পের অন্তর্গত তাঁতশিল্পীদের স্বার্থে বিদ্যুৎমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেও নিজেদের দলেরই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে অজয়বাবু কিছু জানাননি। কংগ্রেস বিধায়কের কথায়, “কেবল বিদ্যুতের ব্যাপার বলেই বিদ্যুৎমন্ত্রীকে জানিয়েছি। মানসবাবুকে জানাইনি।” |