স্তালিনের নীতি নিয়ে আপত্তি উঠল সিপিএমে !
আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে সিপিএমের জেলা অফিস কার্ল মার্ক্স, ভ্লাদিমির লেনিনের সঙ্গে যোসেফ স্তালিনের ছবি অবশ্যই দেখা যাবে। কারণ, এই ত্রয়ীকে সামনে রেখেই গড়ে উঠেছে সিপিএম। ক’দিন আগেও সাড়ম্বরে স্তালিনের জন্মদিন পালন করেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল।
কিন্তু জাতিসত্তার প্রশ্নে পৃথক দলিল পেশ করতে গিয়ে উপজাতি সমস্যা নিয়ে স্তালিনের নীতিতেই আপত্তি তুলেছে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা কমিটি। দলিলে বলা হয়েছে, ‘আমাদের বুঝতে হবে, বিশ্বায়ন ও উদারীকরণ নীতির যুগে পরিচিতিসত্তা বা জাতিসত্তার প্রশ্নটি, বিংশ শতাব্দীতে এই প্রশ্নের মতো নয়। বা কমরেড স্তালিন যে ভাবে উপজাতি সমস্যাকে জমির সাথে যুক্ত একটি সমস্যা বলে অভিহিত করেছিলেন, আজকের যুগে তার সাথে অনেক পার্থক্য আছে’।
সিপিএমের সব নেতাই যে স্তালিন -নীতির সমর্থক, তা নয়। কিন্তু এ নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁদের মুখ খুলতে দেখা যায় না। সম্প্রতি দার্জিলিং জেলার সম্মেলনে পৃথক জাতিসত্তার দলিলের উপরে আলোচনা করতে গিয়ে প্রতিনিধিদের একাংশ মত প্রকাশ করেন, উপজাতি সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে স্তালিনের মত এ যুগে অচল। স্তালিন যে পথে উপজাতি -সমস্যা সমাধানের কথা ভেবেছিলেন, তার সঙ্গে এ যুগের অনেক পার্থক্য আছে জানিয়েই দলিলে বলা হয়েছে, ‘আজকের যুগে সব জাতি -উপজাতিদের মধ্যে অগ্রগতির অধিকার ও উন্নত চিন্তা জাগ্রত হয়েছে। তাদের মধ্যে উন্নত জীবনযাত্রার আকাঙ্ক্ষা বা প্রত্যাশাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আকাঙ্ক্ষা বা প্রত্যাশার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই’। এই সূত্র ধরে দলিলে বলা হয়েছে, ‘শুধুমাত্র শ্রেণি আন্দোলন করলে হবে না। সামাজিক সমস্যাকে সামনে রেখে জাতিসত্তা বিকাশের প্রশ্নটিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে’।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা দার্জিলিং জেলার অন্যতম নেতা অশোক ভট্টাচার্যকে ওই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “রাশিয়ার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে স্তালিন উপজাতিদের সমস্যাকে মূলত আর্থিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করে দেখেছিলেন। ধনী -দরিদ্র ও শ্রেণি -বৈষম্যের ভিত্তিতে তিনি সমস্যার সমাধান করার কথা ভেবেছিলেন। স্তালিন ভেবেছিলেন, উপজাতিরা যদি নিজেদের জন্য জমি পান, তা হলেই তাদের সমস্যার সমাধান হবে। স্তালিনের সেই ভাবনা তাঁর সময়ে হয়তো ঠিক ছিল। কিন্তু বিগত ৮০ -৯০ বছরে পৃথিবী অনেক এগিয়েছে। তাই এই ভাবনার নিরিখে সমস্যার সমাধান করতে গেলে তা সফল হবে না।” ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তো বটেই, পৃথিবীর সর্বত্রই মানুষের কাছে ‘পরিচিতিসত্তা’র বিষয়টি অত্যন্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে দেখা দিয়েছে বলেও অশোকবাবুর অভিমত। তিনি বলেন, “পাহাড়ের গোর্খা বা জঙ্গলমহলে আদিবাসীরা শুধু জমি পেলে বা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হলেই তাঁদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। তাদের পরিচিতিসত্তা বা জাতিসত্তার বিষয়টিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। গত শতাব্দীতে স্তালিনের ভাবনায় এই বিষয়টি ছিল না।” অশোকবাবু জানিয়েছেন, তাদের এই দলিল রাজ্য সম্মেলন ও পার্টি কংগ্রেসেও পেশ করা হবে। সেখানে প্রতিনিধিরা কী বলেন, এখন সেটাই দেখার। |