তথ্য -পরিসংখ্যান দিয়ে রাজ্যের শিল্পায়ন নিয়ে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের সমালোচনাকে নস্যাৎ করলেন বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার নৈহাটিতে এক আলোচনাসভায় পার্থবাবু বলেন, “এ রাজ্যে শিল্পে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে এই মুহূর্তে। এর সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে যুক্ত করা হলে তা ৯০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে ২ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। শিল্পের জন্য পরিবেশ দরকার। আগের সরকারের আমলে সেটাই ছিল না ! ”
শুক্রবারেই বর্ধমানে দলের জেলা সম্মেলনে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী বলেছিলেন, “রাজ্যে নতুন শিল্প স্থাপনের কথা আমার জানা নেই।” তিনি বর্তমান সরকারের শিল্পের জন্য ‘এক জানালা’ নীতির বিষয়ে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, “জানলায় দাঁড়ানোর লোক নেই ! ” এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে পার্থবাবু বলেন, “বিনিয়োগকারীদের এখন অনুমোদন পেতে সমস্যা হচ্ছে না। দ্রুত সেই কাজ হচ্ছে। নিরুপমবাবুদের জেনে রাখা ভাল, লোক এখনও আছে। লোক তখনও ছিল। কিন্তু তখন জানলা ছিল না। ওঁরা লোক খোঁজেন। আমরা বাণিজ্য খুঁজি। শিল্পের কথা বলে ওঁরা যাঁদের সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন, তাঁদের ইতিহাস করেছেন। আমরা সেই ইতিহাস খুঁড়ে তাঁদের রাজ্যের স্বার্থে ফিরিয়ে আনছি।”
নৈহাটি রেল ময়দানে ‘নৈহাটি উৎসব’ উপলক্ষে এ দিন ওই আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহ ব্যারাকপুর -কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে ধুঁকতে থাকা শিল্পের পুনরুজ্জীবন নিয়ে পার্থবাবুকে প্রশ্ন করেন। অর্জুনবাবুর অভিযোগ, “এখানকার সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়েছে। শ্রম দফতর কোনও কাজ করছে না। ইএসআই হাসপাতালের বেহাল দশা।” তার জবাবেই পার্থবাবু বলেন, “পাটজাত সামগ্রী ব্যবহার করা নিয়ে আগের সরকারের কোনও ধ্যানধারণা ছিল না। তাই এই শিল্পাঞ্চলের অন্যতম বড় এই শিল্প মরসুমী শিল্পে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ৩৪ বছরের কালাপাহাড়কে সরিয়ে যখন একটা সরকার এসেছে, সেটাকে মানুষ যদি গোড়াতেই বটগাছ ভাবেন, তা হলে ভুল হবে।” ব্যারাকপুর -কল্যাণী শিল্পাঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে পার্থবাবু বলেন, “নৈহাটিতে এতগুলি চটকল রয়েছে। হয় সেগুলি খুলতে হবে, নইলে ওই জমিকে অন্য কোনও শিল্পে ব্যবহার করতে হবে। শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রতিটি জেলায় ছোট শিল্পে বাড়ির বেকার ও মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এক ছাদের নীচে আনতে চাইছি।”
এর পরেই রাজ্যের শিল্পায়ন নিয়ে এক গুচ্ছ তথ্য দিয়ে শিল্পমন্ত্রী জানান, রাজ্যে টিভিএস সংস্থা মোটরবাইক তৈরির কারখানা করছে। যা পূর্ব ভারতে প্রথম। ১০ জানুয়ারি ওই সংস্থার কর্ণধার বেণু শ্রীনিবাসন আসছেন আলোচনা করতে। ক’দিন আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরে গিয়ে তিনি ‘ট্রাক্টর্স ইন্ডিয়া’র উদ্বোধন করেছেন। ইতিমধ্যেই রাজ্যে ১৭টি শিল্পতালুক তৈরি হয়েছে। শীঘ্রই বসিরহাটে ফুড প্রসেসিং হাব, বারাসতে গার্মেন্টস পার্ক চালু হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। বর্ধমান, দুই দিনাজপুর এবং নদিয়াতে শিল্পের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। নৈহাটিতে শিল্প -বাণিজ্য দফতরের ৯৭ একর জমিতে মাল্টি -সেক্টর ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব, খড়্গপুর আইআইটি -র মতো কল্যাণীতেও একটি তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোককে নিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছে এবং পাট নিয়ে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব বলে শিল্পমন্ত্রী জানিয়েছেন। |