ইন্দিরা ভবন
নজরুলেও ‘আপত্তি’, মমতাকে চিঠি প্রদীপের
ন্দিরা ভবন নিয়ে রাজ্য সরকারের উপর ‘চাপ’ আরও বাড়াচ্ছে জোট শরিক কংগ্রেস।
ইন্দিরা ভবনে নজরুল অ্যাকাডেমি গড়ার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নিয়েছে, তাতে প্রকারান্তরে ‘আপত্তি’ জানিয়ে শনিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ওই ভবনের নামকরণ ইন্দিরা গাঁধীর নামেই রাখতে হবে বলে তিনি দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। বদলে অন্য কোথাও নজরুল অ্যাকাডেমি করে সল্টলেকের ওই বাড়িতে ইন্দিরা গাঁধীর স্মৃতিতে সংগ্রহশালা গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি।
এ দিন ইন্দিরা ভবন নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্ব বৈঠক করেন। সেখানে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ইন্দিরা ভবন নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত এবং তার জেরে প্রদেশ কংগ্রেসের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সবিস্তারে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে জানাবেন শাকিল। নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিরোধিতাকরে সকালেই বসিরহাট, মালতীপুর, চাঁপাপুকুর ও হাড়োয়ায় রেল অবরোধ করে যুব কংগ্রেস। বসিরহাটে অবশ্য যাত্রীরাই অবরোধ উঠিয়ে দেন। হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ ও সন্দেশখালিতে পথ অবরোধ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীকে প্রদীপবাবু লিখেছেন, ‘ওই বাড়িতে ইন্দিরা গাঁধী গবেষণাকেন্দ্র হোক। এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেও অনুরোধ যেতে পারে। বর্ধমানের চুরুলিয়া বা নজরুলের স্মৃতি-বিজড়িত কোনও জেলায় নজরুল অ্যাকাডেমি হোক। কলকাতার অন্য কোথাও নজরুল সদন নামে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও হতে পারে’। এমনকী, কলকাতার নব মহাকরণের নামকরণ নজরুলের নামে করার প্রস্তাবও দিয়েছেন প্রদীপবাবু। প্রসঙ্গত, ওই বিষয়ে বিতর্ক শুরুর পরেই শুক্রবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, “গত ৩৪ বছর বা তার আগে নজরুলকে সম্মান দিতে কোনও সরকারই উদ্যোগী হয়নি। এখন যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই চেষ্টা করছেন, তখন কংগ্রেসের একাংশ তাতে বাধা দিচ্ছে!”
ওই বাড়িতে নজরুল অ্যাকাডেমি করার জন্য এবং বাড়ির নাম ‘নজরুল ভবন’ করা হবে, এই মর্মে সরকারি ঘোষণার পরেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পথে নেমে বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করেন কংগ্রেস কর্মীরা। প্রতিবাদ জানান প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য মানস ভুঁইয়া শুক্রবার দাবি করেছিলেন, ওইদিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মমতা তাঁকে জানান, তিনি ইন্দিরা গাঁধীর স্মৃতি বিসর্জনের কথা ভাবছেন না। সল্টলেকের ওই বাড়িটি ভেঙে ফেলে নতুন করে সেখানে বাড়ি গড়ে অথবা ওই বাড়িটির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে সেখানে তৈরি হবে নজরুল অ্যাকাডেমি। ইন্দিরা গাঁধীর যে স্মৃতিফলকটি এখন ওই বাড়িতে রয়েছে, সেটিও নতুন বাড়িতে রেখে দেবে সরকার। রাজ্য সরকারের এই ‘মধ্যপন্থা’র আশ্বাস পেয়েও নিজেদের দাবিতে ‘অনড়’ই রইলেন প্রদেশ নেতৃত্ব।
ইন্দিরা ভবন নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই প্রদেশ নেতৃত্ব জরুরি বৈঠকে বসেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, ইন্দিরা ভবনে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিতে সংগ্রহশালা করার প্রস্তাব দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। এবং ভবনের নাম ‘ইন্দিরা ভবন’ই রাখার জন্য চিঠি দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। বৈঠকের পর প্রদীপবাবু বলেন, “ওই বাড়িতে শুধুমাত্র ইন্দিরা গাঁধীর স্মৃতিফলক রাখলেই হবে না। ইন্দিরা ভবনের নামবদল যে হচ্ছে না, তা কিছুদিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে সাংবাদিক সম্মেলন করে অথবা সরকারের তরফে ঘোষণা করার অনুরোধ করছি।”
প্রসঙ্গত, সল্টলেকের যে বাড়িটি নিয়ে দুই শরিকের মধ্যে ‘টানাপোড়েন’ চলছে, ১৯৭২ সালে সল্টলেকে (তৎকালীন লবণহ্রদ) কংগ্রেসের সর্বভারতীয় অধিবেশনের প্রাক্কালে তৈরি হয়েছিল সেটি। তখন সেটির খড়ের চাল ছিল। নাম ছিল ‘পর্ণকুটির’। ওই বাড়িতে ইন্দিরা গাঁধীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলেই বাড়িটি গড়ে ওঠে। তখনও মুখে মুখেই তার প্রচলিত নাম ছিল ‘ইন্দিরা ভবন’। সরকারি ‘অতিথিশালা’ ওই বাড়ির ‘ইন্দিরা ভবন’ নামকরণ হয় বামফ্রন্ট সরকারের আমলে, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা প্রয়াত হওয়ার পরে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে জ্যোতিবাবু সেখানে থাকতে শুরু করেন ১৯৮৯ সাল থেকে। তবে ওই বাড়িতে ‘ইন্দিরা ভবন’ নামে কোনও ফলক নেই। ইন্দিরা গাঁধী বাড়িটির দ্বারোদঘাটন করেছিলেন, এই মর্মে একটি ফলক আছে।
এখন প্রদেশ সভাপতির চিঠির জবাবে মুখ্যমন্ত্রী কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.