স্কটল্যান্ড ফিরে যাওয়ার জন্য কোন আর্থিক শর্ত পূরণ করতে হবে তা নিয়ে অ্যালান গাওয়ের সঙ্গে কথা বলা শুরু করে দিল ইস্টবেঙ্গল। কর্তারা চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুরো ব্যাপারটি মিটিয়ে নতুন ফুটবলারের সন্ধানে নামতে। যাতে আই লিগের দ্বিতীয় পর্বে একজন ভাল স্ট্রাইকারকে টোলগে ওজবের সঙ্গী করা যায়।
শনিবার সকালে মাঠে নামলেও অনুশীলন করেননি গাও। মাঠের পাশে দৌড়োদৌড়ি করলেও টিমের সবথেকে দামি ফুটবলারটি কোনও কথাও বলেননি। তাঁকে যিনি এনেছিলেন সেই কোচ ট্রেভর মর্গ্যানের সুরও ছিল বেশ নরম। শুরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় প্রথমে তিনি বলেন, “ওর সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে সময় লাগবে। ও থাকলে আমার অন্তত ভাল লাগবে।” তখন তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কর্তাদের কি ভাল লাগবে? মর্গ্যান তখন বলে দিলেন, “আমি আমার মত বললাম। কর্তারা কী বলবেন জানি না।” গাওকে বাতিল করার প্রক্রিয়াটি নিয়ে যিনি আলোচনা করছেন সেই ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য অবশ্য এ দিনও বললেন, “গাও ও তাঁর এজেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েই দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কোচের সঙ্গেও কথা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই সব কিছু মিটে যাবে আশা করছি। এরপরই নতুন ফুটবলার নিয়ে আমরা কোচের সঙ্গে কথা বলব।”
কোচের আনা গাওকে বাতিল করার জন্য ইস্টবেঙ্গলের অবশ্য দু’মাস বা তিন মাসের টাকা খরচ হবে। যেমন হয়েছিল মোহনবাগানের, সাইমন স্টোরিকে বাতিল করার সময়। ক্লাব সূত্রের খবর, গাওয়ের সঙ্গে পুরো মরসুমের জন্য ক্লাবের চুক্তি ছিল প্রায় আশি লাখ টাকার। তিনিই দলের সবথেকে দামি ফুটবলার। এর বাইরে এজেন্টের কমিশন তো আছেই। গড়ে মাসে প্রায় নয় লাখ টাকা দিতে হচ্ছে ফুটবলারটিকে। চার মাসের টাকা ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছেন ফুটবলারটি। কিন্তু খেলেছেন কলকাতা লিগের একটি ম্যাচ ধরে মোট ছয়টি ম্যাচ। অর্থাৎ ম্যাচ প্রতি ছয় লাখ টাকা দিয়ে কার্যত কোনও সাহায্যই পায়নি টিম। গাওয়ের টাকা ও ম্যাচ খেলার হিসাব দিয়ে এক কর্তা দুঃখ করে বললেন, “এখন বাড়ি যাওয়ার জন্য কত টাকা গাওকে দিতে হবে কে জানে? আমরা এত পরিশ্রম করে স্পনসর নিয়ে আসি। সেই টাকাগুলো এ ভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
কর্তারা চাইছেন, গাওকে কিছু টাকা দিয়ে ফুটবলারটির জন্য বরাদ্দ বাকি টাকায় একজন ভাল স্ট্রাইকার আনতে। সাইমন স্টোরিকে বিদায় দিতে গিয়ে প্রচুর টাকা নষ্ট হয়েছিল মোহনবাগানের। মর্গ্যান যেমন গাওকে এনেছিলেন, স্টেরিকেও এনেছিলেন বিতাড়িত আর এক ব্রিটিশ কোচ স্টিভ ডার্বি। কোচেদের পছন্দে সায় দিয়ে এখন কর্তারা নিরুপায়। ফুটবলারের সঙ্গে এজেন্টের টাকা গুনতে গুনতে হাঁফিয়ে উঠছেন তাঁরা।
গাওকে বিদায় পর্ব এবং গোয়ায় বিশ্রী হারের ধাক্কা সামলে অবশ্য সোমবারের এয়ার ইন্ডিয়া ম্যাচের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেল। টোলগে-মেহতাবের মধ্যে কোনও ঝামেলা নেই এটা বোঝাতে দু’জনকে এ দিন পাশাপাশি দাঁড় করিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। দু’জনেই জানিয়ে দিলেন, তাঁদের মধ্যে কোনও হাতাহাতি হয়নি। টোলগের কথায়, “কয়েক সেকেন্ডের একটা তর্কাতর্কি হয়েছে মাত্র। সেটাই গোয়ার কিছু লোক বড় করে দেখাতে চাইছে।” মেহতাব মেনে নিলেন, মাঠে মাঝেমাঝেই মাথা গরম করে ফেলছেন। তাঁর বক্তব্য, “টোলগে আমার খুব ভাল বন্ধু। ওর সঙ্গে মারামারি করতে যাব কেন?” তবে ড্রেসিংরুমের চেয়ার ভাঙার কথা অস্বীকার করেননি তাঁরা।
এ দিকে সামনের মরসুমে নিজেদের মাঠে আই লিগ খেলার চেষ্টা চালাবে ইস্টবেঙ্গল। অন্যতম কর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “পরের বছরের আই লিগের হোম ম্যাচ নিজেদের মাঠেই খেলতে চাই আমরা। সে জন্য যা যা দরকার, তা তৈরি করা হয়ে যাবে আগামী ছ’মাসের মধ্যেই। গ্যালারির নীচে তৈরি হবে অ্যাওয়ে টিমের ড্রেসিংরুম। মিডিয়া কনফারেন্স রুম থেকে শুরু করে এমনকী রেস্তোরাঁও। টোলগেদের ড্রেসিংরুম তো আধুনিক হয়েছে আগেই।” নিজেদের মাঠে আই লিগ খেলার জন্য বহু দিন চেষ্টা চালাচ্ছেন মোহনবাগান কর্তারা। এখনও সফল হননি। দেখার ইস্টবেঙ্গল সফল হয় কি না। |