কোল ইন্ডিয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ রাজ্য
বাড়ল কয়লার দাম,
বিদ্যুতে সঙ্কটও
ফের কয়লার দাম বাড়ল। আজ, রবিবার থেকেই কোল ইন্ডিয়ার সব গ্রাহককে বর্ধিত দামে কয়লা কিনতে হবে। মূলত কয়লার দাম ঠিক করার পদ্ধতিতে কিছু বদল ঘটানোতেই সব ধরনের কয়লার দাম বাড়ছে বলে কোল ইন্ডিয়া সূত্রে জানা গিয়েছে। সংস্থাটির এই একতরফা সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার। বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত শনিবার জানান, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই কোল ইন্ডিয়া কয়লার দাম অনেকখানি বাড়িয়েছিল। আবার বাড়ানো হল। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থাগুলির উৎপাদন ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। আর্থিক সমস্যায় পড়বে তারা। মণীশবাবু বলেন, “কয়লার দাম ঠিক করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন করা উচিত। কোনও আলোচনা ছাড়াই কোল ইন্ডিয়া একতরফা ভাবে বার বার কয়লার দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।”
কয়লার দাম বাড়ার ফলে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়বে রাজ্যের বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদ। বেসরকারি সংস্থা সিইএসসি ছাড়া সরকারি এই সংস্থাটিই রাজ্যে সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। দিনে তাদের ১০ কোটি টাকার কয়লা কিনতে হয় কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে। কিন্তু আর্থিক অবস্থা খারাপ বলে পর্ষদকে এখন ধারেই কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে কয়লা কিনতে হচ্ছে। এর উপর আরও বেশি দামে কয়লা কিনতে হলে, সংস্থার লোকসানের বোঝা আরও বাড়বে। কারণ জ্বালানি খরচ বাড়লে, গ্রাহকদের কাছ থেকে ‘ফুয়েল সারচার্জ’ নেওয়ার যে ব্যবস্থা রয়েছে, রাজ্য সরকার রাজি না হলে পর্ষদ তা নিতে পারবে না। আর নতুন সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা বিদ্যুতের মাসুল বাড়াতে চায় না।
এত দিন কোল ইন্ডিয়ার কয়লার দাম নির্ধারণ করা হত, ‘ইউজফুল হিট ভ্যালু (ইউএইচভি)’-র নিরিখে। প্রতি কেজি কয়লা জ্বালিয়ে ঠিক কত কিলোক্যালোরি তাপ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে, তা পরীক্ষা করে দেখে কয়লার মান এবং সেই অনুযায়ী তার দাম ঠিক করা হত। অর্থাৎ কয়লার মধ্যে থাকা ছাই ও আর্দ্রতার জন্য উৎপাদিত তাপের যে অংশ নষ্ট হয়ে যায়, তার দাম কোল ইন্ডিয়া নিত না।
নতুন বছরের শুরুতেই যে ব্যবস্থা চালু হল, তাতে এখন থেকে কয়লার দাম নির্ধারণ করা হবে ‘গ্রস ক্যালোরিফিক ভ্যালু (জিসিভি)’-র ভিত্তিতে। এই নিয়মে কয়লা জ্বালিয়ে মোট যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়, সেই নিরিখেই কয়লার মান ও দাম ঠিক হবে। কয়লা জ্বালানোর পর, ছাই বা আর্দ্রতার জন্য যে তাপ নষ্ট হয়ে যায়, দাম ঠিক করার সময় তা বাদ দেওয়া হবে না। এর ফলেই উন্নত থেকে নিম্নমানের সব ধরনের কয়লার দামই কম-বেশি বাড়বে।
কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের দাবি, সারা পৃথিবীতে ‘জিসিভি’ পদ্ধতিতেই কয়লার দাম নির্ধারণ করা হয়। এতে গ্রাহকরা যেমন বেশি দাম দেবেন, তেমনই ভাল মানের কয়লাও পাবেন। ফলে কয়লা জ্বালিয়ে বেশি তাপও পাওয়া যাবে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থাগুলি এতে ক্ষুব্ধ। রাজ্যের কয়েক জন বিদ্যুৎকর্তার দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে যে কয়লা পাওয়া যায়, তাতে ছাই ও আর্দ্রতার পরিমাণ থাকে অনেক কম। তাই বয়লারে কয়লা জ্বালালে অনেক বেশি তাপ পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘জিসিভি’ ব্যবস্থায় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি বাস্তবসম্মত। ওই কর্তাদের যুক্তি, এ দেশের কয়লায় যে পরিমাণ ছাই থাকে, তাতে নতুন ব্যবস্থা একেবারেই অচল। এতে কেবল কোল ইন্ডিয়াই লাভবান হবে। ক্ষতি হবে বিদ্যুৎ সংস্থার।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী এ দিন বলেন, “২০০৭ সালের পর থেকে কোল ইন্ডিয়া কয়লার উৎপাদন সে ভাবে না বাড়ালেও, গত তিন-চার বছরে তাদের মুনাফা বেড়েছে পাঁচ গুণ।” কয়লার দাম বাড়িয়েই সংস্থার লাভ বাড়ছে বলে মন্ত্রীর ইঙ্গিত।
কিছু দিন আগেই কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের সচিব অলোক পার্তি, কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এন সি ঝা-কে কয়লার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘জিসিভি’ ব্যবস্থা চালু করার জন্য পরিকাঠামোগত যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকেই যাতে নতুন নিয়মে কয়লার দাম ঠিক যায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন পার্তি। শুক্রবার, কোল ইন্ডিয়ার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে নতুন পদ্ধতিতে কয়লার মূল্য নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর তার জেরেই ফের দাম বাড়ল কয়লার। এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সঙ্কটও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.