ভোট বছরে অগ্নিপরীক্ষার মুখে কংগ্রেস
ধ্যরাতের মুলতুবি পর্ব নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। আর তার মধ্যেই ২০১২-য় পা রেখে এক মহাগুরুত্বপূর্ণ ভোট-বষের্র্ ঢুকে পড়ল কংগ্রেস। যে বছরে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং মণিপুরে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। লোকসভা নির্বাচনের আরও আড়াই বছর বাকি ঠিকই, কিন্তু এই পাঁচ রাজ্যের ভোট কংগ্রেসের কাছে প্রকৃত অর্থেই অগ্নিপরীক্ষা। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, সে কথা মাথায় রেখেই সনিয়া-রাহুলের স্পষ্ট নির্দেশ, বর্ষশেষের উৎসব মিটলেই সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে হবে পাঁচ রাজ্যের ভোটযুদ্ধে।
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বও মানছেন, ২০১২-র ভোট-বর্ষ প্রকৃত অর্থেই তাঁদের কাছে লিটমাস পরীক্ষা। শতেক সমস্যা ও নেতিবাচক বাতাবরণ কাটিয়ে কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কংগ্রেস? নাকি এ বছরেই প্রমাণ হয়ে যাবে, উপর্যুপরি দুর্নীতির ঘটনা, নীতি নির্ধারণে পঙ্গু দশা আর শরিকি টানাপোড়েনে দুর্বল হয়ে পড়েছে ১২৫ বছরের পুরনো দলের জনভিত্তি? তাঁরা মেনেই নিচ্ছেন, যা-ই ঘটুক, সর্বভারতীয় রাজনীতির সমীকরণের চালচিত্রটাই বদলে দিতে পারে ২০১২!
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, ভোট-বর্ষে গুরুত্বের নিরিখে সবার উপরে উত্তরপ্রদেশের ভোট। দিল্লির তখতের ঠিকানা বরাবরই লুকোনো থেকেছে লখনউয়ের সিন্দুকে। কিন্তু একার ক্ষমতায় উত্তরপ্রদেশ দখলের পরিস্থিতিতে কংগ্রেস যে নেই, ২৪ আকবর রোডের কনিষ্ঠতম সদস্যেরও তা অজ্ঞাত নয়। দলের চ্যালেঞ্জ, সেখানে শক্তি বাড়িয়ে নেওয়া। এ-ও চ্যালেঞ্জ, পিছনের সারি থেকে উঠে এসে উত্তরপ্রদেশে ‘কিং মেকার’ হয়ে ওঠা। কিন্তু শুধু সেটাই যথেষ্ট হবে না বলে মত দলের শীর্ষ নেতাদের। বরং তাঁরা মনে করছেন, সমান গুরুত্বপূর্ণ পঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা দখল করাও। কারণ, সেই জয় শুধু কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারের স্থিতিশীলতায় রসদ যোগাবে না, প্রধান বিরোধী বিজেপির মনোবলও ভেঙে দিতে পারে। অপ্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারে অণ্ণা হজারে ও তাঁর সহযোগীদের। সর্বোপরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও রাহুল গাঁধীর রাজনৈতিক উত্তরণের বিষয়টি তো রয়েছেই।
কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণ না হলে? অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ ভোটে কংগ্রেস সফল না হলে? সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রে ইউপিএ জোটে আরও বড় শক্তিতে পরিণত হয়ে উঠতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। বদলে যেতে পারে সর্বভারতীয় রাজনীতির পাশাও। আড়াই বছর পরের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে পর্যুদস্ত করতে তখন অনিবার্য ভাবেই আরও মরিয়া হয়ে উঠবে বিজেপি।
এই সব ‘আশঙ্কা’র কথা যে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মাথায় নেই, তা নয়। তাই ভোট-প্রস্তুতিতে ফাঁক রাখতে চাইছে না হাইকম্যান্ড। দলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, ভোটযুদ্ধে পুরোদস্তুর নামার আগে আগে যে কাজটি দশ জনপথ নিঃশব্দে করে ফেলেছে, তা হল দায়িত্বের বণ্টন। রাহুল গাঁধী যখন উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন, তখন উত্তরাখণ্ড ও পঞ্জাবের দায়িত্ব নিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। শারীরিক অসুস্থতার জন্য শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে না পারলেও গত মাসে উত্তরাখণ্ডেই প্রথম নির্বাচনী সভা করার কথা স্থির করেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
কিন্তু প্রশ্ন হল এই পাঁচ রাজ্যের ভোটে কোথায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেস? উত্তরপ্রদেশের চারটি প্রধান শক্তির মধ্যে এই মুহূর্তে বিধানসভায় সদস্যের হিসেবে কংগ্রেসের স্থান চতুর্থ। কিন্তু তাদের এখন মূল লড়াই হল, তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপিকে পিছনে ফেলে সেই জায়গা দখল করা। দলীয় নেতৃত্বের একটা বড় অংশই সেই ‘সাফল্যে’র ব্যাপারে নিশ্চিত। বিভিন্ন মহলেরও বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাতে কংগ্রেসের অগ্রগতি ইতিবাচক। প্রাক্-নির্বাচনী সমীক্ষাও বলছে, উত্তরপ্রদেশ ভোটে এ বার সবথেকে বড় চমক দিতে পারে কংগ্রেস ও অজিত সিংহের জোট। প্রায় আশিটি আসন দখল করতে পারে এই জোট। কিন্তু এই সব অঙ্ক মাথায় রাখতে নারাজ রাহুল। দলীয় কর্মীদের তাঁর কড়া নির্দেশ, কোনও রকম সমীক্ষার দিকে না তাকিয়ে ভোটে সাফল্যের জন্য আরও পরিশ্রম করতে হবে। নিজেও উত্তরপ্রদেশের মাঠে ময়দানে প্রতিদিন সভা করে মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেই চলেছেন। বিরামহীন ভাবে।
উত্তরপ্রদেশের পরেই কংগ্রেসের কাছে গুরুত্বপূর্ণ পঞ্জাব। অকালি-বিজেপি শাসিত যে রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও বিস্তর অভিযোগ। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা পঞ্জাবের নেতা মণীশ তিওয়ারির কথায়, “সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে, পঞ্জাবে কোনও সরকারকেই পাঁচ বছরের বেশি ক্ষমতায় রাখছেন না মানুষ। কিন্তু তা বলে কংগ্রেস লড়াইটা একেবারেই হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না।” সূত্রের খবর, পঞ্জাবে কংগ্রেসের বড় সমস্যা ঘরোয়া কোন্দল। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহের হাতেই রাশ তুলে দিয়েছেন হাইকম্যান্ড। সেই সঙ্গে প্রার্থী মনোনয়নে স্বজনপোষণ যাতে না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে গাঁধী পরিবারের অনুগত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সি পি জোশীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “কয়েক মাস আগে পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেসের লড়াইটা সহজ বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ককে সরিয়ে ভুবনচন্দ্র খাণ্ডুরিকে এনে বিজেপি মোক্ষম চাল দিয়েছে।” তবে গত পাঁচ বছরে উত্তরাখণ্ডে যে ভাবে পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে ও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা কংগ্রেস এখনও অস্ত্র করতে পারে বলেই মনে করেন ওই নেতা। পাশাপাশি রয়েছে গোয়া ও মণিপুরে ভোট। এই দুই রাজ্যেই ক্ষমতায় কংগ্রেস। সেখানে ক্ষমতা ধরে রাখাটাও চ্যালেঞ্জ। কিন্তু গোয়ায় দিগম্বর কামাথ সরকারের বিরুদ্ধে যেমন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তেমনই মণিপুরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিরোধীরা এককাট্টা। তবে এই সঙ্কট থেকে বেরোনোর পথ খুঁজছে হাইকম্যান্ড। দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক প্রবীণ সদস্যের কথায়, “সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মণিপুর ও গোয়ার আপাত ভাবে বিশেষ গুরুত্ব নেই ঠিকই, কিন্তু ৪ মার্চ পাঁচ রাজ্যের ভোটগণনার পর এই গণনাও হবে, ‘পাঁচে’ কত পেল কংগ্রেস?
এই রাজ্যগুলিতে ভোটের ফলাফলের ওপর রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভবিষ্যতও নির্ভরশীল। নির্ভর করছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও।
আক্ষরিক অর্থেই ২০১২-য় অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি সনিয়া-রাহুল। কংগ্রেসও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.