প্রশ্নের মুখে সুরক্ষা-যন্ত্রই
পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁয় বিস্ফোরণ, জখম ১
ছরের শেষ দিনে খাস পার্ক স্ট্রিটেই কিছু ক্ষণের জন্য উৎসবের তাল কেটে গেল।
শনিবার, ছুটির দুপুরে রেস্তোরাঁয় খানা-পিনার ফাঁকেই হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ! যার জেরে খাবার ফেলে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে গেলেন সকলে। রেস্তোরাঁটি বন্ধই করে দিতে হল।
বিকেল থেকেই আলোয় সাজা পার্ক স্ট্রিট যখন লোকে লোকারণ্য বা বর্ষবরণের প্রাক্-মুহূর্তে দু’ধারের রেস্তোরাঁগুলোয় তিলধারণের জায়গা নেই তখনও ওই রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকল।
প্রায় দু’বছর আগে স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের জেরে কলকাতার ‘ফুড স্ট্রিট’ পার্ক স্ট্রিট জুড়েই নেমে এসেছিল বিপর্যয়ের ছায়া। এ বারও ঘটনাস্থল: স্টিফেন কোর্টের নীচের একটি রেস্তোরাঁ। ২০১০ সালের ২৩ মার্চের আগুনের পরেও বহুতলটির একতলায় ‘ওয়ান স্টেপ-আপ’ নামের রেস্তোরাঁটি বেশ কিছু দিন বন্ধ রাখা ছিল। কিন্তু সে-বার ওই রেস্তোরাঁয় অঘটনের ছাপ পড়েনি। এ দিন বিস্ফোরণ ঘটে রেস্তোরাঁর হেঁসেলে। দমকলের দাবি, অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র ফেটেই বিপত্তি। যন্ত্রটি ঘাড়ে পড়ে রেস্তোরাঁর একজন কর্মচারী গুরুতর জখম। তিনি এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আরও তিনজন কর্মী অল্প-বিস্তর জখম হয়েছেন।
আগুনের বিপদ থেকে বাঁচতে যে-সরঞ্জামটির উপরে দমকল বিশেষ ভাবে নির্ভর করতে বলে, তাতেই এ যাত্রায় গোলযোগ দেখা গিয়েছে। দমকলের এডিজি দেবপ্রিয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে মামলা রুজু করা হচ্ছে। দমকলের ডিভিশনাল অফিসার তপন ঘোষের বক্তব্য, “রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে আগুন নেভানোর যন্ত্র নিয়ম অনুযায়ী ঠিকঠাক পরীক্ষা করা হয়নি। ফায়ারডিল সংস্থার ওই ‘ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার’-এর আইএসআই শংসাপত্রও ছিল না।”
রান্নাঘরে পড়ে সেই ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার। — নিজস্ব চিত্র
রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, “দিন দশেক আগেই আগুন নেভানোর সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হয়। নামী সংস্থার যন্ত্র। স্রেফ দূভার্গ্যবশতই অঘটন ঘটেছে।” ওই অগ্নিনিবার্পণ সরঞ্জামের সংস্থার হয়ে যন্ত্রটি তদারকির জন্য যে কর্মীরা গিয়েছিলেন তাঁদের ভূমিকাও দেখা হবে বলে জানিয়েছে দমকল। বিস্ফোরণে গুরুতর জখম বছর সাতাশের রোহিত বণিককে ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসাও করানো হচ্ছে বলে ওয়ান স্টেপ-আপ মালিকপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে।
কী ঘটেছিল এ দিন দুপুরে? তখন বেলা সওয়া তিনটে। রেস্তোরাঁ সূত্রের খবর, ছুটির দিনে ‘অর্ডার’-এর চাপ ছিল যথেষ্টই। ‘কুকিংরেঞ্জ’-এর কাছে দেওয়ালে ঝুলন্ত আগুন নেভানোর সিলিন্ডারটি ফেটে রোহিতবাবুর ঘাড়ে পড়ে। জখমদের মধ্যে অন্যতম, রেস্তোরাঁর শেফ মৃত্যুঞ্জয় প্যারিস বলেন, “আমিও কুকিংরেঞ্জেই কাজে ব্যস্ত ছিলাম। রোহিত সিলিন্ডারটার সব থেকে কাছে ছিল। হঠাৎ একটি শব্দ। তারপর দেখি রোহিত মাটিতে পড়ে। আমার গায়েও কী সব ছিটকে পড়ে। ঘাড়ের কাছটা ফুলে আছে।”
এ দিন বিকেলে ওই রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা যায়, দু-একটি চেয়ার উল্টে পড়ে। টেবিলে পড়ে আধ-খাওয়া ফিশফ্রাই, আলুভাজা বা চিকেনের স্টেক। রান্নাঘরের দেওয়ালের মার্বেল খসে পড়েছে। আগুন নেভানোর তেল-চিটে সিলিন্ডারটাও এক ধারে পড়ে।
শহরের পুরনো বহুতল স্টিফেন কোর্টের একতলায় ওয়ান স্টেপ-আপ ছাড়াও শহরের বেশ কয়েকটি নামজাদা রেস্তোরাঁ, সিডি-বিপণি ও বেসরকারি সংস্থার অফিস। বহুতলের অগ্নি-কাণ্ডের পরে তাদের ‘লাইসেন্স’ বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল বলে দমকল সূত্রের খবর। বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকার পরে তাদের ‘বন্ড’ সই করিয়ে শর্তসাপেক্ষে দোকান খোলার অনুমতি দেয় প্রশাসন। দমকলের এক কর্তার কথায়, “ওই তল্লাটে বিপণি-রেস্তোরাঁগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থায় কিছু খামতি আছে। বিপদের সময়ে বেরোনোর বিকল্প দরজাও কোথাও কোথাও অপরিসর।”
এ দিন বিকেলে, স্টিফেন কোর্টের সামনে দমকল-পুলিশের গাড়ি দেখে বর্ষশেষের দিনে পার্ক স্ট্রিটে ভিড় করা আমুদে জনতার মনে ফিরে এসেছে, বিপর্যয়ের স্মৃতি। পাশেই কেকের দোকান থেকে বেরিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে কৌতূহলীদের অনেকেরই প্রশ্ন, “আবার আগুন লাগল না কি?”
তবে, বিক্ষিপ্ত এই দৃশ্য বাদ দিয়ে ২০১১-র শেষ দিনে ফুর্তির মেজাজে কলকাতা ছিল স্বমহিমায়।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.