রোগীর এবং তাঁদের পরিবারের লোকেদের পরে এ বার রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলল উত্তর দিনাজপুর জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি। শুক্রবার দুপুরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের প্রসূতি ও শিশু বিভাগ পরিদর্শন করেন জেলার ওই শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যরা। সমিতির চেয়ারপার্সন সুনীলকুমার ভৌমিক বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে কমিটিকে বিচার বিভাগীয় পর্যায়ের তদন্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক না হলে কমিটির তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” হাসপাতাল সুপার অরবিন্দ তান্ত্রী বলেন, “আমি বাইরে আছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।” রাজ্য সরকারের তরফে কমিটি গঠন করে দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানসিক বিকাশ, বাসস্থান ও চিকিৎসা পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে জেলা জুড়ে বিভিন্ন হাসপাতাল, স্কুল, হোম, সংশোধনাগার-সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের কাজ শুরু হয়েছে। এদিন কমিটির প্রতিনিধি দল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রসূতি, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেন। পরিদর্শন চলাকালীন হাসপাতালের প্রসূতি ও শিশু বিভাগের দুই নার্স কমিটির সদস্যদের কাছে একাধিক অভিযোগ তুলে কান্নায় ভেঙে পড়ে নিয়মিত হাসপাতাল পরিদর্শন করার আর্জিও জানান! |
তাঁরা বলেন, “আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে বেহাল চিকিৎসা পরিষেবার অভিযোগ জানালেও লাভ হয়নি। পরিষেবার অভাব থাকায় প্রতিদিনই রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনদের কাছে হেনস্থা হতে হচ্ছে। সমস্যার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জানালে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে।” রায়গঞ্জের বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা রেহেনা খাতুন নামে এক প্রসূতি গত মঙ্গলবার কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এদিন প্রসূতি বিভাগ পরিদর্শন করার সময়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “মেয়ে হওয়ার পরে ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনও চিকিৎসক আমায় দেখতে আসেননি। নার্সরা বলেছেন, আমার সন্তান না কি ভাল আছে। তবে শারীরিক ভাবে খুব দুর্বল অনুভব করছি। চিকিৎসক না দেখায় ছুটিও মিলছে না।” রায়গঞ্জের জামবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সুমতি সিংহ নামে আর এক প্রসূতি অভিযোগ করেন, “আমরা খুব গরিব। হাসপাতাল থেকে ওষুধ মিলছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোথা থেকে টাকা জোগাড় হবে? আপনারা ওষুধের ব্যবস্থা করে দিন।” কমিটির কার্যকরী কার্যকরী সদস্য তথা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। সেখানে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জেরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের পরিষেবা পুরেপুরি ভেঙে পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমরা এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি। পরিষেবা স্বাভাবিক না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |