নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
রাজ্য নেতৃত্বের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্বেও ‘পরিচিত মুখ’ সামনে রেখেই এক ঘন্টার প্রতীকী জাতীয় সড়ক অবরোধ করল বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি। ধান, পাটের দাম না পাওয়া, সারের মূল্যবৃদ্ধি সহ কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শুক্রবার জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া ৩১ ডি জাতীয় সড়কে বেলা ১২টা থেকে এক ঘন্টার অবরোধ করে বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি। রাজ্য জুড়েই একই দাবিতে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ২৬ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন জেলা নেতৃত্বকে নিজেদের সুবিধে মতো এই অবরোধ আন্দোলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মতো শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলায় এই কর্মসূচি পালন করে বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি। এই আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে সিপিএমের কৃষক সংগঠনের রাজ্য কমিটি তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার পক্ষ থেকে নির্দেশ পাঠানো হয়। রাজ্য সম্পাদকের পক্ষে নৃপেন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশের (সার্কুলার নম্বর-২-১২-২০১১) প্রথম অনুচ্ছেদেই জানানো হয়, ‘কর্মসূচিতে কোনও রাজনৈতিক দলের ফ্ল্যাগ বা ফেস্টুন ব্যবহার করা যাবে না। বামপন্থী নেতৃবৃন্দের পরিচিত মুখ সামনে না-থাকাই ভাল।’ রাজ্য নেতৃত্বের এই নির্দেশ থাকা সত্বেও শুক্রবার জলপাইগুড়িতে সিপিএম, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লকের পতাকা নিয়েই অবরোধ আন্দোলন চলে। এমনকী সিপিএমের সদর জোনাল সম্পাদক জিতেন দাস, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক গোবিন্দ রায়, আরএসপি নেতা প্রকাশ রায়-সহ সিপিএম ও শরিক দলগুলির প্রথম সারির ‘পরিচিত’ নেতৃবৃন্দই অবরোধ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এই ঘটনায় কৃষক সংগঠনগুলির নিচুতলার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ১৪ ডিসেম্বর জারি করা রাজ্য নেতৃত্বের সার্কুলার কৃষক সভার সব ব্লক নেতৃত্বের কাছেও পাঠানো হয়েছে। সে কারণেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে নিচুতলায়। যদিও সিপিএমের কৃষক সভার নেতা তথা সদর জোনাল সম্পাদক বলেন, “এটা কৃষক সভার কর্মসূচি। যারা কৃষক সংগঠনের নেতা বা কর্মী তাঁরাই ছিলেন। তাঁর বাইরে পার্টির কেউ ছিলেন না।” কৃষকরা ধান, পাট ও আলুর দাম পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে এদিন অবরোধে পাট পোড়ানো হয়। রাস্তার মাঝেই আলু ফেলে বিক্ষোভ দেখায় বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি। দাম না পেয়ে জেলায় আলু চাষির আত্মহত্যার ঘটনারও প্রতিবাদ জানানো হয়। বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরবর্তী ছয় মাসে কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। কৃষকরা আলুর দাম না পেয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়লেও রাজ্য সরকারের সে দিকে নজর নেই বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তা সেতু সহ জাতীয় সড়ক বেহাল হয়ে পড়লেও রাজ্য সরকার উদ্যোগী নয় বলে অভিযোগ করা হয়। জিতেনবাবু বলেন, “কৃষি থেকে সড়ক কোনও দিকেই রাজ্য সরকারের নজর নেই। সারের দাম বাড়ছে, কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছেন না। ধান, পাটের দাম নিয়েও সমস্যা। সব দিক থেকেই কৃষকরা জাঁতাকলে পড়েছেন। আর রাজ্য সরকার কেবল প্রতিশ্রুতিই দিয়েই হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। কৃষকদের স্বার্থে আমাদের প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।” |