নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নতুন সরকারের নীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। তবু ইউনিটপিছু ৪৪ পয়সা হারে মাসুল বাড়ছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিদ্যুতের। সংস্থা সূত্রের খবর, এখন থেকে তাদের গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটের জন্য ৪ টাকা ৭১ পয়সা দাম দিতে হবে।
এই মাসুলবৃদ্ধি আসলে পূর্বতন বামফ্রন্ট জমানার। বণ্টন সংস্থা তখন বর্ধিত হারে মাসুল নিতেও শুরু করেছিল। কিন্তু মাসুলবৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ট্রাইবুন্যালে মামলা হয়। ট্রাইবুন্যালের নির্দেশে বর্ধিত হারে মাসুল আদায় বন্ধ করে দিয়েছিল বণ্টন কোম্পানি। এত দিনে মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এবং রায় গিয়েছে বণ্টন সংস্থারই পক্ষে। যার প্রেক্ষিতে বণ্টন সংস্থা এ বার তা আদায় করবে বলে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের তরফে শুক্রবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বর্ধিত হারে মাসুল আদায়ের নির্দেশটি বিদ্যুৎ দফতর থেকে এ দিনই বণ্টন সংস্থার হাতে আসে। তাতে সংস্থার কর্তারা কিছুটা স্বস্তিতে। এক কর্তার কথায়, “ইউনিটপিছু বাড়তি ওই ৪৪ পয়সা আদায় করতে না-পারলে চলতি অর্থবর্ষের শেষে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াত আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। আদালতের নির্দেশ আমাদের পক্ষে যাওয়ায় এখন বর্ধিত হারে মাসুল নিতে পারব। লোকসান সাড়ে সাতশো কোটি টাকা কমবে। কিন্তু রাজ্য যদি মাসুল আর বাড়াতে না-দেয়, বা বকেয়া ফুয়েল সারচার্জ বাড়ানো না-যায়, তা হলে আখেরে কোনও লাভ হবে না।” এই মাসুলবৃদ্ধি প্রসঙ্গে সরকারের কী বক্তব্য? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “আগের বাম সরকার এগারো মাস ধরে ৪ টাকা ৭১ পয়সা হারে বিদ্যুতের মাসুল নিয়েছিল। মামলার জন্য মাঝের ন’মাস নেওয়া হয়নি। মামলায় এখন বণ্টন কোম্পানি জিতেছে। ফলে এখন ওই টাকাটা গ্রাহকদের কাছ থেকে ফের নেওয়া হবে। কী ভাবে, তা বণ্টন কোম্পানি-ই ঠিক করবে।” তিনি আরও বলেন, বাম আমলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। আমার আমলে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছিল। আমরা বাধা দিই। ফলে হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বলেন, “বাম আমলে যে মাসুল বাড়ানো হয়, সেই বর্ধিত মাসুলই এ বার থেকে নেওয়া হবে। আমরা এর বেশি মাসুল বাড়ানোর বিরুদ্ধে।”
বণ্টন সংস্থা সূত্রে এ দিন বলা হয়, পূর্বতন বাম সরকারের সিদ্ধান্তমতো ২০১০-এর এপ্রিল থেকে ইউনিটপিছু অতিরিক্ত ৪৪ পয়সা হারে মাসুল নেওয়া হচ্ছিল। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা দাখিল হওয়ায় বর্ধিত মাসুল আদায় বন্ধ করতে হয়। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে নির্দেশ দেয় ট্রাইবুন্যাল। গত নভেম্বরে মামলাটির রায় বণ্টন সংস্থার পক্ষে গিয়েছে। বিদ্যুৎ দফতর বিষয়টি কমিশনকে জানায়। এ দিন বণ্টন সংস্থাকে ফের বাড়তি হারে মাসুল আদায়ের অনুমতি দিয়েছে কমিশন। তবে বণ্টন-কর্তাদের দাবি, এতেও সংস্থার ‘হাঁড়ির হাল’ তেমন ফিরবে না। তাঁরা বলছেন, চাহিদা মেটাতে যে ভাবে চড়া দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে, আর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যে হারে বাড়ছে, তাতে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের ইউনিটপিছু দাম হওয়া উচিত ৫ টাকা ৫০ পয়সা। একমাত্র তা হলেই সংস্থাকে লোকসানের হাত থেকে বাঁচানো যাবে বলে ওঁদের দাবি। সংস্থা-সূত্রের বক্তব্য: ২০১১-১২ অর্থবর্ষে তারা বার বার মাসুল ও ফুয়েল সারচার্জ বাড়াতে চাইলেও কমিশনের কাছে সেই আর্জি পেশ করতে পারেনি। কারণ রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, মাসুল বাড়ানো যাবে না।
সরকার যে গ্রাহকের উপরে ‘চাপ’ বাড়াতে নারাজ, এ দিনও বিদ্যুৎমন্ত্রী তা ফের পরিষ্কার করে দিয়েছেন। |