বড়দিনের আগে স্বমেজাজেই হাজির হয়েছিল শীত। কিন্তু এক সপ্তাহেই তার দাপট উধাও। এতটাই যে, নববর্ষে তার দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার পরিবর্তে সম্ভবত হাল্কা বৃষ্টি দিয়েই নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চলেছে দক্ষিণবঙ্গ! ঘূর্ণিঝড়ের পরে শীতের শত্রু হয়ে দাঁড়াচ্ছে উচ্চচাপ বলয়।
ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে ঢুকে দুর্বল হয়ে গেলে শীতের আকাশ পরিষ্কার হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। শুক্রবার বিকেলের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় তামিলনাড়ুর স্থলভূমিতে ঢুকে অনেকটাই দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু তাতেও আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে না। কারণ খুঁজতে গিয়ে উপগ্রহ-চিত্রে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে একটি উচ্চচাপ বলয়ের সন্ধান পেয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ওই উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাবেই সমুদ্র থেকে আরও বেশি করে জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে পরিমণ্ডলে। এবং ২০১১-র বিদায়বেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করেছে সেই উচ্চচাপ বলয়ই।
গত কয়েক দিন আবহবিদেরা ব্যস্ত ছিলেন বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘থানে’র গতিপ্রকৃতি নিয়ে। তাঁদের যাবতীয় পূর্বাভাস তৈরি হচ্ছিল ওই ঝড়কে কেন্দ্র করেই। দক্ষিণ ভারতের দিকে এগোতে থাকা সেই ঝড়ের পিছনে যে আরও একটা বিপদ আসছে, সে-দিকে নজর ছিল না কারও। শুক্রবার সকালে ঘূর্ণিঝড় তামিলনাড়ু উপকূলে আছড়ে পড়ার পরে সেই নতুন বিপদ ধরা পড়েছে উপগ্রহ-চিত্রে।
তা হলে কি ঘূর্ণিঝড় থানের জন্যই তৈরি হল ওই উচ্চচাপ বলয়? হাওয়া অফিস তা বলছে না। “উত্তর ভারত দিয়ে এই মুহূর্তে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বয়ে যাচ্ছে। সেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ক্রমশ পূর্ব ভারতের দিকে সরে আসছে। তার ফলেই পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে তৈরি হয়েছে উচ্চচাপ বলয়,” শুক্রবার বললেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। ওই উচ্চচাপ বলয়ের ফলে ঠিক কী হতে পারে? গোকুলবাবু বলেন, “পশ্চিমী ঝঞ্ঝা যত পূর্ব ভারতের দিকে এগিয়ে আসবে, ততই মেঘ ঢুকবে আকাশে। রবিবার, সোমবার নাগাদ ঝাড়খণ্ড-বিহারের লাগোয়া জেলাগুলিতে হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে। বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও মালদহে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছি আমরা।”
নতুন বছরের মুখে কলকাতাতেও বৃষ্টি হবে কি? পশ্চিমী ঝঞ্ঝার শক্তি কতটা বাড়ে, তার উপরেই সেটা নির্ভর করছে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
তামিলনাড়ু উপকূলে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড়টি যত ক্ষণ সমুদ্রে ছিল, তত ক্ষণ বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘ ঢুকেছে দক্ষিণবঙ্গের আকাশে। তার ফলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। শুক্রবার কলকাতার তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে যায়। চলতি সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার থেকে এটা পাঁচ ডিগ্রি বেশি। যে-পানাগড় ও শ্রীনিকেতন শীতে কাঁপছিল (সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫-৭ ডিগ্রি মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল), সেখানকার তাপমাত্রা উঠে গিয়েছে ১২ ডিগ্রিতে।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার হাত ধরে তৈরি হওয়া উচ্চচাপ বলয় আগামী দু’দিন উত্তরবঙ্গেও মেঘ ঢোকাবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে নেমে গিয়েছে। কিন্তু আজ, শনিবার থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহবিদেরা। ডুয়ার্সে সকালে ঘন কুয়াশা হবে বলেও সতর্কবার্তা জারি হয়েছে।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কেটে গেলে কি ফের শীত পড়বে? আবহবিদেরা এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, কাশ্মীরের কাছে অপেক্ষা করছে আর একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। সেটি উত্তর ভারত হয়ে পূর্ব ভারতের দিকে চলে এলে বঙ্গোপসাগরে নতুন উচ্চচাপ বলয় তৈরি হতে পারে।
অর্থাৎ ওই দ্বিতীয় পশ্চিমী ঝঞ্ঝার উপরেই নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গের চূড়ান্ত শীত-ভাগ্য।
|